Home ইসলামহাদিসের গল্প / উত্তম মেহমান

হাদিসের গল্প / উত্তম মেহমান

by MD JUNAYED SHEIKH
হাদিসের গল্প / উত্তম মেহমান

আবূ হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন সময় ঘর হতে বের হলেন, যে সময়ে তিনি সচরাচর বের হন না এবং এ সময় কেউ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেও আসে না। (এ মুহূর্তে) আবূবকর রাযিআল্লাহু আনহু এসে উপস্থিত হলেন। তিনি প্রশ্ন করেলেন, হে আবূ বকর, আপনি কি মনে করে এলেন ? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দেখা করতে, তাঁর বরকতময় মুখমন্ডল দেখতে ও তাঁকে সালাম প্রদানের উদ্দেশ্যে এসেছি।

এরপর ওমর রাযিআল্লাহু আনহুও এসে উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন, হে ওমর! আপনার এ সময় আসার কারণ কি? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ক্ষুধার তাড়নায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমিও এরূপ কিছু অনুভব করছি। এই বলে তারা আবূল হায়ছাম ইবনু আত-তায়হান আল-আনছারী রাযিআল্লাহু আনহুর বাড়ীর দিকে যাত্রা শুরু করলেন।

আবূ হায়ছাম ছিলেন প্রচুর খেজুরগাছ ও বকরীর মালিক। তার কোন খাদেম ছিল না। তারা তাকে বাড়ীতে না পেয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সাথী কোথায়? তিনি বললেন, তিনি আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন।

ইতিমধ্যে আবূল হায়ছাম রাযিআল্লাহু আনহু পানিভর্তি মশক নিয়ে ফিরে আসলেন এবং সেটা রেখেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! তারপর তিনি সকলকে নিয়ে তার বাগানে গেলেন এবং তাদের জন্য বিছানা বিছিয়ে দিলেন। অতঃপর খেজুর গাছ থেকে কয়েক গুচ্ছ খেজুর নামিয়ে এনে তাদের সামনে রাখলেন।

তারা খেজুর খেয়ে সেই পানি পান করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার শপথ! ক্বিয়ামত দিবসে এসব নে‘মত প্রসঙ্গেও তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। এই সুশীতল ছায়া, সুস্বাদু কাঁচা-পাকা খেজুর ও ঠান্ডা পানি (কতই না সুন্দর নে‘আমত)।

এরপর আবূল হায়ছামরাযিআল্লাহু আনহু তাদের জন্য খাবার তৈরী করতে চলে গেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলে দিলেন, কোন অবস্থাতেই দুধেল পশু যবহ করবে না। কাজেই তিনি নবীন একটি নর ছাগল যবহ করলেন এবং রান্না করে তাঁদের জন্য নিয়ে আসলেন। তাঁরা তা খেলেন। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কি কোন খাদেম আছে? তিনি বললেন, না।

আবূল হায়ছাম রাযিআল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে গেলে তিনি তাকে বললেন, এদের মধ্যে যাকে ভালো লাগে বেছে নাও। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনিই আমাকে পসন্দ করে দেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় তাকে আমানতদার হতে হয়। ঠিক আছে, তুমি একেই নাও। কেননা আমি একে ছালাত আদায় করতে দেখেছি।

(এরপর তিনি বললেন) আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি তার সাথে উত্তম আচরণ করার জন্য। আবূল হায়ছাম রাযিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ প্রসঙ্গে তার স্ত্রীর নিকট গিয়ে তাকে জানিয়ে দেন। তার স্ত্রী বললেন, একে মুক্ত করা ব্যতীত আপনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্যের মর্ম পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন না। তিনি বললেন, ঠিক আছে, সে এখন মুক্ত।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যত নবী ও খালীফা প্রেরণ করেছেন, তাদের সকলকেই দু’জন করে একান্ত পরামর্শক দিয়েছেন। একজন সাথী তো তাকে ভালো কাজের আদেশ দিতে থাকে এবং অন্যায় কাজে প্রতিহত করে। আর অন্যজন তাকে ধ্বংস করার কোন সুযোগই ছাড়ে না। যাকে এই অসৎ পরামর্শক হ’তে হেফাযত করা হয়েছে তাকেই বাঁচানো হয়েছে’


সূত্রঃ (তিরমিযী /২৩৬৯)।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment