Home ইসলামলস অ্যাঞ্জেলস দাবানল: শিক্ষা ও করণীয়

লস অ্যাঞ্জেলস দাবানল: শিক্ষা ও করণীয়

by MD JUNAYED SHEIKH
লস অ্যাঞ্জেলস দাবানল: শিক্ষা ও করণীয়

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলস শহর সম্প্রতি এক ভয়াবহ দাবানলের মুখোমুখি হয়েছে, যা ৪০,০০০ একর জমি পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৫,০০০ এরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকেই হারিয়েছেন তাদের সবকিছু। এমন দুর্যোগ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়ে আসে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:
فاعتبروا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ
(“হে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নরা, শিক্ষা গ্রহণ করো।”)

আল্লাহ তায়ালা আদ, সামূদ এবং লূতের জাতির কাহিনী বর্ণনা করেন আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য। এই ঘটনাও অতীতের মহান বিপর্যয়গুলোর মতোই। তাই আমাদের উচিত এই থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।

আজকের খুতবায় আমি এই দুর্যোগ থেকে প্রাপ্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার উপর আলোচনা করব।


প্রথম শিক্ষা: আল্লাহর শক্তির সামনে আমাদের অসহায়ত্ব

এই মহা দাবানল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আল্লাহর অসীম শক্তির সামনে আমরা কতটা অসহায়। প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্র এই বিপর্যয়ের সামনে নিঃশেষ হয়ে পড়েছিল। তাদের সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি ও বিপুল সম্পদ কোনো কাজেই আসেনি। লাখ লাখ গ্যালন পানি বিমানের মাধ্যমে ফেলা হলেও আগুন নেভানো যায়নি।

আল্লাহ বলেন:
فَأَمَّا عَادٌ فَاسْتَكْبَرُوا فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَقَالُوا مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً
(“আর ‘আদ জাতি অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করেছিল এবং বলেছিল, ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী আর কে আছে?’”)
কিন্তু আল্লাহ তাদের দেখিয়ে দিলেন যে, তার চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই।


দ্বিতীয় শিক্ষা: বিদ্রুপ নয়, সহমর্মিতা দেখানো

আমাদের উচিত সকল মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শন করা। অন্যের দুর্যোগে আনন্দিত হওয়া বা বিদ্রুপ করা ইসলামের শিক্ষা নয়।

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন “রহমাতুল লিল ‘আলামীন” (সমগ্র সৃষ্টির প্রতি রহমত)। তিনি অমুসলিমদের প্রতিও সহানুভূতি দেখিয়েছেন। যেমন:

একবার একটি ইহুদির জানাজা দেখে নবী (সা.) সম্মানসূচকভাবে দাঁড়িয়েছিলেন।

মক্কার মুশরিকদের দুর্ভিক্ষকালে তিনি মদিনা থেকে তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছিলেন।

তাই আমাদের উচিত দয়া প্রদর্শন করা এবং কঠোরতার পথ পরিহার করা। কারণ এটি ইসলামের মূল শিক্ষার অংশ।


তৃতীয় শিক্ষা: তওবা ও আত্মজিজ্ঞাসার আহ্বান

এটা অস্বীকার করা যাবে না যে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে গাজার মুসলমানদের দুর্দশার জন্য দায়ী। তবে এই দুর্যোগ তাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

আমরা তাদের আহ্বান জানাই:

তওবা: আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে।

ইসলাম গ্রহণ: সত্য ও মুক্তির পথে আসতে।

আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ
(“যালিমরা যা করে, আল্লাহ তা থেকে উদাসীন নন। তিনি তাদের সময় দেন সেই দিনের জন্য, যেদিন চোখ বিস্ময়ে স্থির হয়ে যাবে।”)

আরও বলেন:
أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ…
(“তারা কি আল্লাহর পরিকল্পনার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে?”)


এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় আল্লাহর শক্তি, দয়ার আহ্বান, এবং তওবার প্রয়োজনীয়তা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, ঈমানকে মজবুত করুন এবং তার শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।

اللَّهُمَّ ارْحَمْنَا بِرَحْمَتِكَ وَاجْعَلْنَا مِنَ التَّائِبِينَ
(“হে আল্লাহ, আপনার রহমতের দ্বারা আমাদের প্রতি দয়া করুন এবং আমাদের তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”)

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment