পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে ইবলিস শয়তান সক্রিয়। বনী আদমকে জাহান্নামে টেনে নিতে তিনটি ফাঁদ পেতেছেঃ ১. মদ ২. জুয়া ৩. নারী।
দুনিয়ায় সমস্ত বিশৃঙ্খলা এই তিনটিকে ঘিরে আবর্তিত হয় । জগতের প্রথম হত্যাকান্ডের সূত্রপাতও এখান থেকে।
শয়তান বনী আদমকে পথভ্রষ্ট করতে তার সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে — আদমের আগমন কাল থেকে।
যুগে যুগে মানুষকে নানান কসরতে বিভ্রান্ত করলেও বর্তমানে তাকে আর অতো পরিশ্রম করতে হয় না। কি অবাক হলেন?
দেখুন, এই বিশ শতকের শেষে এবং একবিংশ শতাব্দীতে শয়তান আছে ফুরফুরে মেজাজে।
কারণ, জগতে ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়েছে,স্মার্টফোনে বাজার সয়লাব।
ফলে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় শয়তানের তিন আস্তানায় ফিরে এসেছে
কর্মচাঞ্চল্যতা। নবোউদ্যমে মরদুদ শয়তান বনী আদমকে হাঁকিয়ে চলছে জাহান্নামের অতল গহ্বরে।
মদ জুয়ার আস্তানায় ঢু্ঁ মারা সব শ্রেণির, সব পেশার সব বয়সী মানুষের জন্য অতটা সহজলভ্য না হলেও এ যুগে তৃতীয় আস্তানায় ঢুকে যাওয়া পানির মতো সহজ। নারীদের মনোহর জগত চব্বিশ ঘন্টা খোলা।
ইন্টারনেটে নিজ নিজ ভাষায় ভাঙাচোরা শব্দে মনের আকুতি লিখলেই হাত ধরে নিয়ে যাবে শয়তানের পাপের সাম্রাজ্যে।
বর্তমান দুনিয়ায় শয়তানের আস্তানায় সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ প্রতিনিয়ত কিভাবে কিলবিল করছে তা বুঝার জন্য সামান্য একটা উদাহরণ দিই।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, বর্তমান পৃথিবীর জনসংখ্যা আনুমানিক ৮০৯ কোটি তথা ৮ বিলিয়নের একটু বেশি। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫৩০ কোটি। মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ।
সচরাচর কিছু এ্যাপস, যা কমবেশি সবাই ব্যবহার করেন সেগুলো হচ্ছে, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল,হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, গুগল মিট,জুম ইত্যাদি।
ইউটিউব ইন্সটল করেছে ১০ বিলিয়ন ( এক আইডি থেকে একাধিকবার) ফেইসবুক ৫ বিলিয়ন, হোয়াটসঅ্যাপ ৫ বিলিয়ন, ইনস্টাগ্রাম ৫ বিলিয়ন।
অন্যান্য জনপ্রিয় এ্যাপ কোনটা ১ বিলিয়ন কোনটা ৫ মিলিয়ন এরকম।
বিপরীতে শয়তানের আস্তানা পর্ণ সাইটগুলোতে মানুষের প্রবেশ দেখুন—
38.7 বিলিয়ন, 19.1 বিলিয়ন, 16.3 বিলিয়ন, 11.5 বিলিয়ন, 6.5 বিলিয়ন, 5.5 বিলিয়ন।
গুগল প্লে স্টোর কিংবা এ্যাপলের এ্যাপ স্টোরে কোন এ্যাপসের ১ বিলিয়ন ডাউনলোড মানে সফলতার সর্বোচ্চ শিখর সেখানে পর্ণ সাইটে ১ বিলিয়ন ভিউয়ার !
ভয়াবহ অবস্থা।
কি ভাবছেন হে প্রিয় নবীর উম্মত! আর কি চুপ থাকা যায়?
শয়তানের আস্তানা গুঁড়িয়ে ফেলতে সম্বল আর আশা নিয়ে নেমে এলাম ময়দানে।
তুচ্ছতাচ্ছিল্য আমাকে নিয়ে হবেই জেনেও কাল কেয়ামতের দিন নবীজীর শাফায়াত লাভের আশায় আমি সামনে এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
বিষয়টি নিয়ে যতবার ভেবেছি, লাজ-লজ্জায় আমার উদিত কলম কালি অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। পরিবার পরিজন, কাছের বা দূরের আপনজন যখন দেখবে ভদ্রলোকটা এ সব কি শুরু করল?
সিক্রেট বিষয় নিয়ে এত মাথাব্যাথা কেন ? দুনিয়াতে লেখার আর কিছুই পাওয়া গেল না ?
কিন্তু আবার সূর্যোদয় হল, মন থেকে প্রচন্ড চাপ এলো, সিক্রেট করে করে কত বনী আদম শয়তানের চোরাবালিতে আটকে গেছে।
কেউ হয়তো পাপের পাহাড় নিয়ে ওপারে চীর দিন চলে গেছে কিন্তু লাজ লজ্জায় কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারেনি– আমি পর্ণাসক্ত।
অনেকে বলতে চায়, বাঁচতে চায় কিন্তু চোখমেলে দেখে সবাই ঘুমন্ত আমাকে কে জাগাবে?
আমি চাই বাঁচতে চাওয়া সেই বনী আদমদের পাশে দাঁড়াতে,সাহস দিতে উঠ! দাঁড়াও! ভয় নাই আল্লাহর রহমত সন্নিকটে। পাপটা শুধু ছেড়ে দাও।
এভাবে ভাবতে ভাবতে একদিন হাতে ঠিকই কলম উঠে গেল। সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ পাকের জন্য। আসমানী সাহায্য অনুভব করলাম, ইস্তেগফার জপতে জপতে নেমে পড়লাম অন্ধকার গলিতে পাপের গঙ্গায় ডুবতে থাকা বনী আদমকে পর্নোগ্রাফির চোরাবালি থেকে টেনে তুলতে।
ধারাবাহিক রচনায় আমি দেশ ও সমাজের ঘটে যাওয়া দুর্যোগগুলো টেনে তুলব। চোখের গুনাহের ক্ষতি, শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।
মে’রাজ রজনীতে নবীজীর চোখে দেখা লম্পট ব্যভিচারীদের শাস্তি, কেয়ামতের ভয়াবহতা একেককরে পরম মমতায় সামনে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করব।
আমাদের যুদ্ধ কেবল বনী আদমের চীর শত্রু শয়তানের বিরুদ্ধে। আমাদের ঠিকানা জান্নাত জাহান্নামকে আমরা ভয় পাই, ইবলিসকে চরম ঘৃণা করি আরো ঘৃণা করি আমাকে তিলে তিলে মারতে চাওয়া পর্নোগ্রাফিকে।
বাঁচতে হলে যাকে আগাগোড়া পরিত্যাগ করতেই হবে। আমি ভয় করি আল্লাহকে, আবার ভালোবাসি কেবলই আল্লাহকে।