মানুষ বলে, আমার সম্পদ, আমার সম্পদ! অথচ তার সম্পদ তিনটির বেশি কিছু নয়। ছবি: সংগৃহীত
মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য হলো, সুখে সে আত্মতুষ্ট হয়ে যায়। দুঃখে সে হতাশ হয়ে পড়ে। কোরআনে বিভিন্ন আয়াতে এ মানবীয় প্রবৃত্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন, যখন মানুষ দুঃখ-কষ্টে থাকে, তখন সে অসহায় অনুভব করে, কিন্তু যখন আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত মাধ্যমে কষ্টমুক্ত করেন, তখন সে তা নিজের প্রাপ্য বলে মনে করে। কিয়ামতের দিন সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন,
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন,
وَلَئِنۡ اَذَقۡنٰہُ رَحۡمَۃً مِّنَّا مِنۡۢ بَعۡدِ ضَرَّآءَ مَسَّتۡہُ لَیَقُوۡلَنَّ ہٰذَا لِیۡ ۙ وَمَاۤ اَظُنُّ السَّاعَۃَ قَآئِمَۃً ۙ وَّلَئِنۡ رُّجِعۡتُ اِلٰی رَبِّیۡۤ اِنَّ لِیۡ عِنۡدَہٗ لَلۡحُسۡنٰی ۚ فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِمَا عَمِلُوۡا ۫ وَلَنُذِیۡقَنَّہُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ غَلِیۡظٍ অর্থ: তাকে যে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছিল, তারপর যদি আমি আমার পক্ষ হতে তাকে রহমতের স্বাদ গ্রহণ করাই, তখন সে অবশ্যই বলবে, এটা তো আমার প্রাপ্য ছিল এবং আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি আমার রব্বের কাছে ফিরিয়ে নেওয়াও হয়, তবে আমার বিশ্বাস তাঁর কাছেও আমার কল্যাণই লাভ হবে। আমি কাফেরদেরকে অবশ্যই অবহিত করব, তারা যা-কিছু করেছে এবং তাদেরকে অবশ্যই কঠোর শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, মানুষ বলে, আমার সম্পদ, আমার সম্পদ! অথচ তার সম্পদ তিনটির বেশি কিছু নয়। সে যা খেয়েছে আর তা শেষ হয়েছে, যা পরিধান করেছে এবং তা পরিধেয় বস্ত্র হয়েছে, এবং যা দান করেছে এবং তা সে সংরক্ষণ করেছে। আর সে যা কিছু রেখে গেছে, তা সে অন্যদের জন্য রেখে গেছে (মুসলিম: ২৯৫৮)
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
কিয়ামত সংঘটিত হবে, অথচ দু’জন ব্যক্তি তাদের কাপড়ের লেনদেন সম্পর্কে কথা বলবে, কিন্তু তারা তা পরিধান করার সুযোগ পাবে না। এক ব্যক্তি তার হাঁড়িভর্তি খাবার খাবে, কিন্তু তার শেষ গ্রাস খেতে পারবে না। আর এক ব্যক্তি তার পুকুর ঠিক করবে, কিন্তু সে তাতে পানি নিতে পারবে না (বুখারি: ৬৫০৪)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই দুনিয়া মুমিনের জন্য একটি কারাগার আর কাফেরের জন্য জান্নাতস্বরূপ (মুসলিম: ২৯৫৬) হজরত আবু দরদা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি বলেছেন,
বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই, যে নিজ আত্মার হিসাব গ্রহণ করে আর মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আর নির্বোধ সেই, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আর আল্লাহর কাছ থেকে (কোনো ভিত্তিহীন) আশা রাখে (তিরমিজি: ২৪৫৯)
কোরআনের আলোচ্য আয়াত ও উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে প্রতীয়মান হয়, দুনিয়ার সুখ-দুঃখ আসলে অস্থায়ী। মানুষ যদি নিজের ওপর নেমে আসা রহমতকে আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে গ্রহণ না করে, যদি সে কিয়ামতের প্রতি সংশয় প্রকাশ করে, তবে সে মহা প্রতারণায় লিপ্ত হবে। বরং উচিত হলো—আল্লাহর নেয়ামত পাওয়ার পর কৃতজ্ঞ থাকা আর পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেয়া। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।