গতকাল আমার সাথে খুব অন্যরকম একটা ব্যাপার ঘটেছে। বাসা থেকে মাদ্রাসায় এসেছি পরশুদিন রবিবার রাতে। আসার সময় সাহস করে মোবাইলটা সাথে নিয়ে এসেছিলাম। নিষিদ্ধ কাজটি করতে পেরে খুশি লাগছিল।
রাতে বিছানায় শুয়ে কাথার নিচে মোবাইলটা চালিয়েছি বেশ কিছুক্ষণ। মাদ্রাসায় মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ। খুব সতর্ক ছিলাম। ঘণ্টা খানেক ব্যবহার শেষে ট্রাংকে রেখে তালা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
পরের দিন ছিল সোমবার। কী এক অমোঘ আকর্ষণে সেদিনও কিছুক্ষণ পর পর মোবাইলটা হাতে নেই, আর নাড়াচাড়া করে রেখে দেই। গোপনে বহনকৃত মোবাইলটি সারাক্ষণ অস্থির করে রাখে। চোরের মন কিভাবে পুলিশ হয়– ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করি।
বিকেলবেলা দেখি চার্জ শেষ। খুব সাবধানে মোবাইল চার্জ দেই ।
মাদ্রাসার কোন উস্তাদের চোখে পড়লে সর্বনাশ। মোবাইলের বিষয়টি স্পর্শকাতর। ভর্তি ফরমে ছাত্র এবং অভিভাবককে উক্ত বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। সর্বোচ্চ শাস্তি মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার।
সেদিন রাতের কথা। তখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে এগারোটা। বিছানায় শুয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফেইসবুক চালাচ্ছি। ঠিক এমন সময় বাসা থেকে মায়ের ফোন এলো।
কি করবো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না । ভাবলাম কলটা রিসিভ করি । কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হলো, বাবা এখন বাসায়। ফোন ধরা যাবেনা– বিপদ হতে পারে।
পরপর তিনটা কল এসে আর এলো না । হাঁফ
ছেড়ে বাঁচলাম। সেদিন রাতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি।
বিপত্তিটা বেঁধেছে ঠিক একদিন পর।
গতকাল সন্ধ্যার পর, নামাজ পড়ে বইয়ের আড়ালে মোবাইলে ব্যস্ত ছিলাম। ঠিক এমন সময় আমার বন্ধু মাহদি বলে উঠলো, দরজার দিকে তাকাও, এক ভদ্রলোক তোমাকে ডাকছেন।
মাথা উঠিয়ে দেখি ক্লাস রুমের গেটে বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। ইশারায় আমাকে কাছে যেতে বলছেন।
আমার প্রাণে পানি নেই। “ইয়া নাফসি” পড়তে পড়তে বাবার কাছে গেলাম। হাঁটু কাঁপছে। এক পা এগোই উল্টো তিনবার পিছনে চলে যাই। দাঁড়ানোর পর যেমন ভয় পেয়েছিলাম বাবা তেমন কিছুই করলেন না। সামান্য একটা হাসি দিয়ে বললেন, যাও, মোবাইলটা নিয়ে এসো”।
তার আচমকা উপস্থিতিই যে বিরাট শাস্তি হয়ে দেখা দিয়েছে –বাবা আমার আপাদমস্তক দেখে হয়তো এটাই বুঝে নিয়েছিলেন। তাই বাড়তি কিছু করতে হয়নি। আসলে শাস্তি যে শুধুমাত্র লাঠি দিয়ে হয় , ব্যাপারটি কিন্তু তেমন নয়।
বাধ্য ছেলের মত মোবাইল আর চার্জার ব্যাগে ভরে বাবাকে দিয়ে দিলাম। ব্যাগ হাতে নিয়ে যেতে যেতে বাবা বললেন, “ভালো করে পড়াশোনা কর”।
মাদ্রাসার আইনের প্রতি বাবার শ্রদ্ধা আর ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্নতা — দুইটি জিনিস পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছি। আব্বুর প্রতি ভালোবাসাও বেড়েছে।