মানুষের ইচ্ছেগুলো বড়ই অদ্ভুত। স্বপ্নগুলো সত্যিই হাস্যকর। চাওয়াগুলো বড়ই বেমানান। নাহয়, মানুষ বাঁচে আর কত বছর!
অথচ স্বপ্ন দেখে এত বড়– হাজার বছর বেঁচে থাকলেও যা পূরণ হওয়া অসম্ভব।
আচ্ছা, যার এক কোটি টাকা অর্জন হয়েছে, সে কি দুই কোটি টাকার মালিক হতে চায় না?
যার একটা দালান আছে, সে কি দুইটা দালানের মালিক হতে চায় না? অবশ্যই চায়। কারণ, মানুষের লোভের পরিধি তার জীবনের চেয়েও বড়।
তবে এখানে কিছু মানুষ এমন আছে, যারা এসব লোভ-লালসা থেকে বহু ঊর্ধ্বে। তারা ভাবে অন্য কিছু, থাকে অন্য জগতে, চায় ভিন্ন কিছু। আমিও হয়তো তাদেরই একজন। আমার ইচ্ছে, স্বপ্ন আর চাওয়াগুলো একটু অন্যরকম, সবার থেকেই আলাদা।
কেমন তাহলে! এটাই তো! তাহলে বলছি আমার স্বপ্ন, চাওয়া আর ইচ্ছের কথা।
আমি যখন খোলা আকাশের নিচে আনমনা হয়ে দাঁড়াই, নিজেকে তখন আকাশ ভাবতে শুরু করি। দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকি। আর নিজেকে হারিয়ে ফেলি চিন্তার নতুন এক দিগন্তে। ইচ্ছের ডানা মেলে উড়তে থাকি আপন মহিমায়। দিগন্তে ভেসে বেড়ানো মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে আমিও হারিয়ে যাই ভাবনার আকাশে।
তখন আকাশ আমায় কানে কানে বলে যায় তার উদার হওয়ার গল্প।
বলে যায়— এই যে দেখ, আমি যুগ যুগ ধরে একইভাবে দাঁড়িয়ে আছি নিজ জায়গায়, ক্লান্তি অনুভব করছি না। অথচ আমার নিচে মানুষ নামের অসভ্য প্রাণীগুলো প্রতিনিয়ত আমায় কষ্ট দিয়ে চলেছে। ইচ্ছে করলেই আমি পারি ভেঙে পড়তে আর গুড়িয়ে দিতে ওদের সব অহংকার। অথচ কত যুগ পেরোলো! আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি একই অবস্থায়—প্রভুর দেওয়া শক্তিতে, রবের দেওয়া উদারতায়। সুতরাং, তুমিও আমার মতো হও! ধৈর্যশীল হও!”
আকাশের কথা শুনে আমি সাহস পাই। নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করি। স্বপ্ন দেখি আরও অনেকদিন বেঁচে থাকার।
খোলা আকাশের নিচে, জমিনের উপর সবুজ ঘাসের নরম চাদরে যখন হাঁটি, তখন সে আমায় ফিসফিসিয়ে বলে যায় তার দুঃখ, যাতনা আর বেদনার কথা।
বলে— দেখ, কতকাল ধরে আমি বয়ে চলেছি অসভ্যদের পদভার। আমার উপর হেঁটে বেড়ায় ফেরাউন, নমরুদ, হামান, কারুন আর ইহুদিদের মতো বেঈমানেরা। কতকাল তারা আমায় অত্যাচার করেছে! আমি কি নিয়েছি তার প্রতিদান? ইচ্ছে করলেই আমি আমার গর্ভে হারিয়ে নিতে পারতাম তাদের, মুছে দিতে পারতাম তাদের নাম-নিশানা!”
জমিনের কথা শুনে আমি উদ্বেলিত হই। ভাবতে শিখি, ধৈর্য শিখি, বাঁচতে শিখি।
সমুদ্রের কাছে গিয়ে হারিয়ে যাই চিন্তার সাগরে। হাবুডুবু খাই তার অথৈ জলরাশিতে।
সমুদ্র আমায় বলে— দেখ, কত যুগ ধরে আমি বয়ে চলেছি নিরবধি। কোনো ক্লান্তি নেই, নেই কোনো অভিযোগ। আমার বুক চিরে ভেসে যায় কত পাহাড়সমান জাহাজ! যার ভার আমিই বহন করি। কোনোদিন বিরক্ত হইনি, বরং নিজ গুণে তাদের পৌঁছে দিই আপন ঠিকানায়।”
আমি সমুদ্রের কথায় নতুন প্রাণ ফিরে পাই। বুঝতে পারি—নিজে বাঁচতে নয়, অন্যকে বাঁচাতেই আমার প্রয়োজন আছে।
এরপর চিন্তা থেকে বের হয়ে আমি বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকি এই কথাগুলো—
আমি আকাশের মতো উদার হয়ে, সাগরের মতো বিরাট হয়ে, জমিনের মতো ধৈর্য নিয়ে, পাহাড়ের মতো অবিচলতা নিয়ে, ফুলের মতো হাসি নিয়ে সমস্ত প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা ও অসারতা থেকে দূরে থেকে এখানে কিছুদিন বাঁচতে চাই। নিজেকে বাঁচাতে নয়, অন্যকে বাঁচাতেই আমার বাঁচা উচিত। একটি মনস্তাত্ত্বিক বিপ্লব চাই!
