Home ইসলামশবে বরাত মুমিন মুসলমানদের করনীয়

শবে বরাত মুমিন মুসলমানদের করনীয়

by MD JUNAYED SHEIKH
শবে বরাত মুমিন মুসলমানদের করনীয়

انا انزلناه في ليلة مباركة انا كنا منذرين
قال الرسول صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليله نصف من شعبان قوموا ليلها وصوموا شهرها او كما قال عليه الصلاه والسلام


শবে বরাত এটা ইসলামের একটা মুস্তাহাব আমল। شب একটি ফার্সি শব্দ। অর্থ রাত। আমাদের বাংলা ভাষা যেহেতু আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংলিশ মিশ্রিত তাই আমরা বাংলার সাথে অন্যান্য শব্দ মিলিয়ে বলি। এই কারণে আমরা শবে বরাত বলি।

এ কথাগুলো এই জন্যই বলা হচ্ছে– আমাদের মাঝে কিছু মিথ্যা দরদিরা বলে শবে বরাত বলতে কিছুই নেই। কোরআন হাদিসের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই ।

তাদেরকে একটি উপমার মাধ্যমে বলতে চাই, আমরা বাংলায় বলি , মানুষ উর্দুতে বলে– شخص । আরবিতে বলে انسان । এখন যদি কেউ এ কথা বলে যে, মানুষ কুরআনে নেই –এর দ্বারা মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে এই কথাটা যেরকম অনর্থক; অনুরূপভাবে শবে বরাতের ক্ষেত্রে যারা বলে কোরআন হাদিসে শবে বরাত নেই তাদের কথায় এমনই।

কারণ এটা হল ফার্সি শব্দ। এই শব্দ তো আরবীতে থাকবে না । আরবিতে আছে লাইলাতুল বারাত। لیلة অর্থ রাত আরبراء অর্থ বন্টন। অর্থ দাঁড়ায় বন্টনের রাত। এটাকেই ফার্সিতে বলা হয় শবে বরাত ।

এই রাত্রে রাসুল সাঃ নিজেকে ইবাদতে আত্মনিয়োজিত করতেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য এই রাত আগামী এক বছরের তাকদীর নির্ধারন করেন। আগামী এক বছরে কে জন্ম গ্রহণ করবে। কে মৃত্যুবরণ করবে। কে কতটুক খাবে। কে ধনী হবে, কে গরিব হবে।কে ক্ষমতা পাবে, কে ক্ষমতাচ্যুত হবে। কে সম্মানিত হবে, কে অসম্মানিত হবে। কে রোগ থেকে মুক্ত লাভ করবে, কে রোগ আক্রান্ত হবে। সবকিছু এই রাতে নির্ধারণ করা হয়। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,
এই রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে বন্টন হবে তাই আমার মন চায় যে রাতটা ইবাদতে কাটায় যাতে আমার ভাগ্য নির্ধারণ করার সময়টা আমার ইবাদতের মাধ্যমে কাটে।

তবে একটা কথা আছে। এই রোজা রাখা নফল। যে রোজা রাখবে সে তো সব পাবে, ভালো কাজ করলো । আর যে ব্যক্তি রোযা রাখবে না, তাকে তুচ্ছ করা যাবে না। তার প্রতি কোনো তিরস্কার নেই।


এ রাত সম্পর্কে হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে ।

তিনি বলেন, একদিন রাত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম আমার পাশে নেই। তিনি জোসনার রাতের আলোতে রাসুল সাঃ এর পেছনে গেলেন। রাসুল সাঃ হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে দেখে বলেন, তুমি বিচলিত হয়েছো ? তুমি জানো আজকে কোন রাত? আজকের রাত হল লাইলাতুন নিছফু মিন শাবান। এই রাতের তাৎপর্য কি জানো ?
আল্লাহ এই রাত্রে তার নেক বান্দাদের গোনাহ মাফ করেন। এই পরিমাণ যে বনু কাল্ব গোত্রের ছাগলের পশমের পরিমাণ গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কবর জিয়ারত করেন এবং রাত্রে ইবাদত করেন। আর দিনে রোজা রাখেন। তবে রোজা না রাখতে পারলে তাকে তুচ্ছের নজরে দেখা যাবে না ।

অন্যদিন আমরা নামাজ পড়ে থাকি। এদিনও নামাজ পড়ব তবে মাগরিবের নামাজের পরে অতিরিক্ত ৬ রাকাত পড়ব। অথবা এশার পরে কিছু নফল পড়ব। যে কয় রাকাত সাধ্যে কুলায় সেই কয় রাকাত পড়লে চলবে– কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তাছবিহাত আদায় করতে পারেন। সালাতুল হাজত পড়তে পারেন । কাজা নামাজ পড়তে পারেন। সম্ভব হলে কবর জিয়ারত করতে পারেন। আর যদি এসব কিছু না হয় তো ঘুমাতে পারেন, তবে এশার নামাজ জামাতের সাথে পড়ে ফজরের নামাজ আবার জামাতের সাথে পড়বেন।

কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন من صلى العشاء بالجماعة وصلى الفجر بالجماعة فكانما قام الليل كله

যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সাথে পড়বে এবং ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়বে সে কেমন যেন পুরো রাত এবাদত করলো।

তাই আমরা যদি কেউ অতিরিক্ত ইবাদত না করতে পারি, এই রাতে কমপক্ষে এশার নামাজ এবং ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া চাই।


এক হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন هل من مستغفر فاغفر له هل من مسترزق فارزق له الامن مبتلا فهو عافيه الا كذا الا كذا حتى طلع الفجر
আল্লাহ তাআলা রাত্রের শেষভাগে এসে ডাকতে থাকেন। আছে কি কোন গুনাহগার ব্যক্তি যে কোন করতে করতে জীবনটা শেষ করে ফেলেছে আমার কাছে মাফ চাইবে আর আমি তাকে মাফ করে দিব? আছে কি কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যে তার রিযিক নিয়ে অভাবে আছে আমার কাছে চাইবে আর আমি তাকে রিজিক দেবো ? আছে কি কোন অসুস্থ ব্যক্তি সে আমার কাছে সুস্থতা কামনা করবে আমি তাকে সুস্থ করে দেব? এরকম বলতে বলতে থাকে ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত।

তাই আমাদের উচিত হলো, রাত্রের শেষ ভাগে আল্লাহ তায়ালার বেশি ইবাদতে লিপ্ত থাকা । এটাই হল শবে বরাতের মূল আমল ।

এগুলো বাদ দিয়ে আমরা যা করি তার সাথে শরীয়তের কোন সম্পর্ক নেই ।
অনেকে মনে করে যে, এই রাত হল ভালো ভালো খাবার খাওয়ার রাত। যদি ভালো ভালো খেয়ে থাকি, আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য পুরো বৎসর ভালো ভালো দিবেন।

এই কথার কোন ভিত্তি নেই। তবে এরকম একটা কথা আছে, সেটা আশুরার দিনের সম্পর্কে।
من وسع يوم عاشور وسع الله له سائر السنه
যে আশুরার দিনে অর্থাৎ মুহাররম মাসের ১০ তারিখে নিজ পরিবারের উপর কিছুটা প্রশস্তভাবে খরচ করিবে আল্লাহ তায়ালা পূর্বচ্ছর তার ওপর সচ্ছলতা দিবেন।


বরং এ রাত্রে আরো কম খাওয়া উচিত কারণ যে কম খাবে ইবাদতে সে বেশি মজা পাবে। ইবাদত করতে তার বেশি ভালো লাগবে। তাই কম খেয়ে ইবাদত বেশি করা উচিত।

আরেকটি খারাপ দিক এই রাত্রে যেটা হয়ে থাকে যে , মসজিদে বের করা মসজিদে নফল নামাজের জন্য এরকম বের করা উচিত না এমনকি মহিলারাও এরকম করে থাকে এর থেকে আমাদের সবার বেঁচে থাকা উচিত এই রাত্রে আল্লাহ তায়ালা সবাইকে মাফ করে কিন্তু কিছু মানুষদেরকে মাফ করে না তারা হল
১/ عق الوالدين
যারা পিতা মাতার সাথে নাফারমানি করে খারাপ আচরণ করে কষ্ট দেয় তাদের কথা মানে না এদেরকে
২/ مشاهين
যারা হিংসে রাখ অন্যের প্রতি বিদ্বেষ রাখে তাদেরকে মাফ করেন না
৩/ যারা মদ পান করে তাদেরকে মাফ করেন না
৪/যারা কবর পূজা করে, কবরে সেজদা দেয়, শিরিক করে।

এদেরকে আল্লাহ মাফ করেন না। অতএব আমাদেরকে যে সমস্ত জিনিস করণীয় ওইটা করতে হবে আর যে সমস্ত জিনিস বর্জনীয় এর উপর থেকে বিরত থাকতে হবে।

২০২৫ সালে বাংলাদেশে শবে বরাত হল ১৪ তারিখ দিন রাতে আর ১৫ তারিখে রোজা।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শরীয়ত মোতাবেক আমল করার তৌফিক দান করুক।

সর্বশেষ কথা, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমল কর, আমল যেন কবুল হয় এমন আমল করিও। আর আমল কবুল হতে হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত অনুযায়ী করতে হবে। সুন্নতের সাথে করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তৌফিক দান করুন। আমীন।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment