ধারণা করা হয়েছিল ইংলিশ লিগের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরী বাংলাদেশে খেলতে এলে প্রতি ম্যাচেই বড় অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে। এশিয়ান কাপের বাছাই খেলতে ভারতে যেতে হবে, ঢাকায় খেলতে আসতে হবে, সিংগাপুর যেতে হবে, হংকং যেতে হবে। তিন বার বাংলাদেশে আসতে হবে। প্রত্যেক ম্যাচে কারা হামজার নিয়মিত সফরসঙ্গী হবেন, সেই সংখ্যাটা কত। তাদের খরচও বহন করতে হবে কি না।
প্রতি ম্যাচেই যদি সব খরচ বাফুফেকে বহন করতে হয়, তাহলে তো হামজাকে খেলাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বাফুফেকে না হাতি পালার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এমনটা হলে এক-দুইটা ম্যাচ পর হামজার প্রতি বাফুফে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে কি না-এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব শুধু হামজা চৌধুরীর আমাদের বাধ্যবাধকতা হামজা চৌধুরীকে নিয়ে। হামজার ব্যক্তিগত সব চিমন্ড অ্যান্ড রিলেয়ারম্যান্টস রয়েছে, ফুলফিল করবো। এর বাইরে কিছু না।’

এর বাইরে যদি আরে বেশি কিছু করতে হয়ে, তাহলে তো হাতি পালার মতো হয়ে যাবে। তাবিথ বলেন, ‘অবশ্যই হাতি পালার মতোই হয়ে যাবে। আমি বলে রাখি হামজা কঠিন কিছু ডিমান্ড করছেন না।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে হামজার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-হামজা বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলতে চান। বিশ্বকে দেখাতে চান বাংলাদেশের ন্যাশনাল টিমও ভালো খেলতে পারে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য হামজা খুবই এক্সাইটেড। আমি মনে করি না কোনো ডিমান্ড, কোনো ইস্যুজ, কোনো রিকুয়েরম্যান্ট আসবে যেটা আমাদের দুই পক্ষকেই (বাফুফে এবং হামজা চৌধুরী) কষ্ট দেবে।’

ফেনীর দাগনভূঁইয়ার আলিয়াপুর গ্রামের ছেলে তাবিথ আউয়াল পড়াশুনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। লন্ডনে হামজা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে নিলে তাবিথ বলেন, ‘হামজার মতো আমি সিলেটি ভাষা পারি না কিন্তু হামজা পুরোপুরি সিলেটি ভাষা পারে। ও যখন কথা বলছিল আমি বুঝতে পারিনি। যে কথাগুলো বুঝতে পারিনি সেগুলো ইংরেজিতে বলেছিলাম।’
হামজা বাংলাদেশে খেললে তাকে কী দেওয়া হবে?
তাবিথ আউয়াল: তার যে স্ট্যান্ডার্ড সেটাই দেওয়া হবে। ভ্রমণ খরচ, ম্যাচ ফি, তার ইকুইপমেন্ট যা কিছু লাগবে, অবশ্যই বুট ছাড়া হামজা বেশ কিছু পণ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রচার করার বিষয়ে চুক্তি রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। আমার সেগুলোতে হাতও দেব না। কারণ যেসব পণ্যের সঙ্গে আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়ে আছে, সেগুলো যেন বাংলাদেশে এসেও কাজে লাগাতে পারে।
হামজা কি জানিয়েছেন কী কী পণ্য রয়েছে?
তাবিথ আউয়াল: নাহ আমরা ব্যাখ্যা চাই-ও নাই, হামজাও ব্যাখ্যা করেন নাই। যদি তার কোনো পয়েন্ট থাকে আমাদের কিছু করার দরকার হয় করবো। আর না থাকলে আগ বাড়িয়ে বলার দরকার নেই।’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়াল।
হামজার ম্যাচ ফি কত দিতে হবে?
তাবিথ আউয়াল: ওটা নির্ধারণ হয়নি। ম্যাচ ফি এর কথা এখনও আলোচনা হয়নি। তিনি চাননি। আমারই নির্ধারণ করে দেব, বলাটা ঠিক হবে না। আমরা ম্যাচ ফি অফার করবো। হামজার ডিমান্ড থাকবে, নেগোসিয়েশন অবশ্যই হবে, আমার মনে হয় না কোনো ডিমন্ড নিয়ে ঝামেলা হবে। আমরা সবাই জানি হামজার মতো একজন ফুটবলার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললে তার ম্যাচ ফি কত হতে পারে। আমরা এরই মধ্যে অন্যান্য দেশ থেকে ধারণা নিয়ে ফেলেছি। অ্যামাউন্ট সম্পর্কে আমরাও স্থির হয়েছি কত টাকা ম্যাচ ফি দিতে হবে। তবে অর্থের সংখ্যাটা এখনো বলতে চাইছি না।’
হামজা কি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হবেন?
তাবিথ আউয়াল: এটা কোচের ব্যাপার। কোচ নির্ধারণ করবেন কে অধিনায়ক হবেন।

বাফুফে সভাপতি কী চায়?
তাবিথ আউয়াল: বাফুফের সভাপতি হিসেবে অবশ্যই চাইবো, হামজা অধিনায়ক হোক। আমার কথা হচ্ছে নিয়মিত (সেরা একাদশে) খেলবেন যিনি তাকেই অধিনায়ক হতে হয়। এটাই তো স্বাভাবিক। পলিসি সবার জন্য একই। এখানে আলাদা কিছু নেই। আমি হামজাকে অধিনায়ক হওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা বলিনি। এটা কোচ ঠিক করবেন। সাবেক ফুটবলার বলেন আর সভাপতি বলেন হামজা অধিনায়ক হতে পারে। তারপরও বলি এটা কোচের ব্যাপার।’
হামজা বাংলাদেশে কবে আসবেন?
তাবিথ আউয়াল: আশা করি মার্চের ১৬ তারিখে ক্যাম্পে যোগ দেবেন।’