দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমার পর মামুন বলল, সব কিছু ফাইনাল, বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হয়েছে–রবিবার। আজই লঞ্চে রওনা দিব, তুই চল।
সম্মতি জানিয়ে দিলাম।
১ সপ্তাহের টানা লম্বা ছুটি। ভ্রমণ আর ভোজনের এই সূবর্ণ সুযোগ মিস করতে কে চায়? আবার প্রিয় বন্ধুর বিয়ে বলে কথা।
দুপুরের খাবারের পর একটানা ঘুমালাম। পরীক্ষার ধকলের কারণে বিগত এক সপ্তাহে ঘুমের ঘাটতি হয়েছে, সেটির কাযা-কাফফারা আদায় করতে হবে তো !
ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে। তড়িঘড়ি করে প্রস্তুতি সারলাম। ৮:৩০ মিনিটে রিকশায় চড়ে বসলাম। গন্তব্য সদরঘাট। ওখান থেকে বাকি পথটুকু নৌ পথে পাড়ি দিব।
রাস্তায় যতটা জ্যাম মনে করেছিলাম ততটা ছিল না। মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। শরীয়তপুরগামী স্বর্ণদ্বীপ নামক জলযানে উঠলাম। দ্বিতল জলযানটি কানায় কানায় পূর্ণ। দোতলার এক কোনায় জায়গা হল।
আমার চতুর্দিকে এক ঝাক বোরকাওয়ালী। মনের ক্যানভাসে আঁকা ছবিটার মানুষটা কি এদের মধ্যে কেউ? এমন ভাবনা মনে আসতেই নিজের হিয়ালিতে নিজেই মুচকি হাসলাম কিছুক্ষণ। হা হা হা ।
প্রসঙ্গ অন্য দিকে যাচ্ছে। যা বলছিলাম– প্রথমে আমি মনে করেছিলাম মামুনের বিয়ের বন্দোবস্ত সব শেষ, শুধু বর যাত্রা পর্বটাই বাকি। পরে শুনলাম, না, মামুনের বড় খালাদের রাজি করাতে যাচ্ছি আমরা। যদি এখানে ব্যর্থ হই তাহলে বিয়ের বারোটা বেজে যাবে। যে করেই হোক রাজি করাতে হবে। পবিত্র কুরআন শরীফে বিয়ে শাদিকে ইবাদত বলা হয়েছে অথচ এ নিয়ে আমাদের সমাজে কত ঝামেলা আর বিতিকিচ্ছিরি কাহিনী।
বিয়েশাদি ব্যক্তিগত জীবনে পারিবারিক ও সামাজিক ইবাদত। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা বিবাহযোগ্যদের বিবাহ সম্পন্ন কর, তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছলতা দান করবেন, আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা: নুর ৩২)।
এক রকম আশা আর নিরাশার মাঝে আটকে গেলাম। জানিনা মামুনের মনে কি চলছিল? “পাওয়া না পাওয়ার” দোটানের মাঝেও যে মানুষ স্বাভাবিক থাকতে পারে, এটা ওকে না দেখলে জানতাম না।
শনিবার ভোরের আলো-আঁধারির মাঝে ঘাটে নামলাম। কিছুক্ষণ আগেই রাতের সমাপ্তি ঘটেছে। সুবহে কাজিবের সূচনা হয়েছে। ঘাটে দাড়িয়ে প্রকৃতির উপচে পড়া রূপ দেখে মুগ্ধ হলাম।
প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাস শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। সুন্দর এই শীতেরা বোধহয় ঢাকাকে বিদায় জানিয়েছে।
ঢাকায় শীতের ফিল আনতে মাঝেমধ্যে ফ্যান মহাশয়ের দ্বারস্ত হতে হয়। চাদর গায়ে ঘাটের চায়ের দোকানে এসে দাঁড়ালাম। সারারাত পেটে কিছুই পড়েনি। পেট বাবাজিকে একটা কেক দিয়ে শান্ত করলাম।
ইতোমধ্যেই মামুনের খালাতো ভাই বাইক নিয়ে হাজির। গ্রামীণপথে কখনো বাইকে উঠেছি বলে মনে পড়ে না। আঁকাবাঁকা আর এ্যাবড়ো-থেবড় ভাঙা রাস্তায় ভ্যানে আসলে মাজার বাকেট নড়ে যেত। বাইক থাকায় সুবিধা হল।
দুর্গম গিরি কান্তার মরু পাড়ি দিয়ে মামুনের খালার বাড়িতে পৌঁছলাম। অনেক দেন দরবার শেষে মহান রবের অশেষ কৃপায় আমরা সফল হলাম। আজ মামুনের বিয়ে।
মামুনের ছায়া পড়া মুখে সে-কি আনন্দ উচ্ছ্বাস। খুব ঈর্ষা হল। বন্ধু , তোমার দাম্পত্য জীবন সুখী হোক।
বন্ধুর জন্য দোয়া করতে গিয়ে মনে পড়ে প্রিয় নবীজির হাদিস। আমাদের নবীজি কত সুন্দর ভাবে অভিনন্দিত করতেন বর-কনেকে, ভাবতেই পুলক বোধ করি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাহিত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতেন:
بَارَكَ اللهُ لَكَ وَ بَارَكَ عَلَيْكَ وَ جَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ
উচ্চারণ: ‘বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বাইনা কুমা ফি খাইরিন’ (তিরমিজি) অর্থ: আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন, তোমাদের উভয়ের প্রতি বরকত নাজিল করুন। তোমাদের কল্যাণের সঙ্গে একত্রে রাখুন।’