৬১৭ খ্রি.-এর পর দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম বিস্তৃত হয়। বিবি খাদিজার (রা.) বাণিজ্যিক জাহাজের চট্টগ্রামে নোঙর ফেলা এবং দক্ষিণ আরবের ‘সাবা’ জাতি ঢাকার অদূরে বসতি গড়ায় সাহাবি, পির দরবেশের দাওয়াতি মেহনতে বাংলাদেশের মানুষ হয় ধর্মপ্রাণ মুসলমান। বাংলাদেশে আগত পির-দরবেশগণ দেশীয় ভাষা শিখে ইসলাম প্রচার-প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখে হয়েছেন, বাংলা-বাঙালির প্রিয় স্বজন। তারা ঘুমিয়ে আছেন এ দেশের পবিত্র মাটিতে
বিশ্বের অশ্বের অন্তত ৩৫ কোটি মানুষের প্রাণের উচ্চারণ বাংলা। অন্য কোনো প্রাণীর ভাষা বৈচিত্র্য নেই। মানুষের সৃজনশীল শক্তির প্রকাশ ভাষার বর্ণিল মাধুর্য মহান আল্লাহর অনুগ্রহ: ‘দয়াময় আল্লাহ। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন কথা বলা (সুরা আর-রহমান, আয়াত: ০৪)।’
সমসাময়িকদের মাতৃভাষায় নবিগণ ইসলাম প্রচার করেন-‘আমি প্রত্যেক রসুলকেই তাদের স্বজাতিক ভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ০৪)।’
কয়েক জন নবির ভাষা (এতে একাধিক মতও রয়েছে):
১. আদম (আ.): জান্নাতে আরবি এবং পৃথিবীতে আগমনের পর সিরিয়াক/ অ্যারামিক ভাষায় কথা বলতেন।
২. নুহ, শিশ, ইউনুস ও ইদরিস (আ.): সিরিয়াক।
৩ . ইবরাহিম (আ.): মাতৃভাষা সিরিয়াক, তিনি আরবিতেও পারদর্শী।
৪. লুত ও ইয়াকুব (আ.): সিরিয়াক, আরবি। ৫.
হুদ, সালিহ, ইসমাইল, আইয়ুব, শোয়াইব (আ.): আরবি। ৬. ইউসুফ (আ.): আরবি, মিশরীয় কিবতি।
৭. দাউদ, সুলাইমান (আ.): অ্যারামিক, আরবি।
৮. মুসা, হারুন (আ.) প্রাচীন কিবতি, আরবি, হিব্রু।
৯. ইউশা বিন নুন (আ.): আরবি, কিবতি।
১০. জাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ইসা (আ.) অ্যারামিক, তারা আরবি ভাষাও জানতেন।
পবিত্র কুরআনের ভাষা আরবি। এমনকি হিব্রু ‘মু’ অর্থ পানি এবং ‘সা’ অর্থ কাঁটা শব্দের সন্ধিবদ্ধরূপ ‘মুসা’। গ্রিক ‘জসোয়া’র ইংরেজি ‘জেসাস’র আরবি ‘ইসা’ এবং বাংলারূপ ‘যিশু’! যাবুর-ইউনানি, তাওরাত-ইবরানি বা হিব্রু, ইঞ্জিল-সুরিয়ানি
বা আরেমীয় ভাষায় অবতীর্ণ, মূলত যা আরবিরই অপভ্রংশ।
‘ইন্দো-ইউরোপীয় প্যারেন্ট স্পিচ’ বলতে ‘সেমিটিক-প্যারেন্ট স্পিচ’ বা ‘সেমিটিক মূল ভাষা’ বোঝায়। নির্দিষ্টার্থে এ ভাষাটিই ‘আরবি’। এ সম্পর্কেড, মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, আরবি, ফিনিসিয়ান, হিব্রু, আরমায়িক, সুরিয়ানি প্রভৃতি বর্ণমালা মূল সামি বা সেমিটিক বর্ণমালা থেকে উদ্ভূত। লিপিবিদগণ অকাট্যভাবে প্রমাণ করেছেন যে গ্রিক, লাতিন, ইংরেজি প্রভৃতি ইউরোপীয় বর্ণমালার উৎপত্তিও সেই মূল সামি বর্ণমালা থেকে (সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ ১ম খণ্ড)।’
জালালউদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) বলেন, ‘আরবি সর্বপ্রাচীন ও প্রথম ভাষা’ (আল ইতকান-১ম খণ্ড)। প্রিয় নবি (স.) বলেন, ‘তোমরা তিন কারণে আরবিকে ভালোবাসো। কেননা, আমি আরবিভাষী, কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ এবং জান্নাতিদের ভাষা হবে আরবি (বুখারি)।’
৬১৭ খ্রি.-এর পর দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম বিস্তৃত হয়। বিবি খাদিজার (রা.) বাণিজ্যিক জাহাজের চট্টগ্রামে নোঙর ফেলা এবং দক্ষিণ আরবের ‘সাবা’ জাতি ঢাকার অদূরে বসতি গড়ায় সাহাবি, পির দরবেশের দাওয়াতি মেহনতে বাংলাদেশের মানুষ হয় ধর্মপ্রাণ
মুসলমান। বাংলাদেশে আগত পির-দরবেশগণ দেশীয় ভাষা শিখে ইসলাম প্রচার-প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখে হয়েছেন, বাংলা-বাঙালির প্রিয় স্বজন। তারা ঘুমিয়ে আছেন এ দেশের পবিত্র মাটিতে।
ভাষাবিজ্ঞানীগণ অনেকটাই একমত, ইন্দো-ইউরোপীয় প্রাচীন ভাষাগুলোর উৎপত্তি খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০০-৩৫০০ অব্দে। অথচ শাসনামলের দীর্ঘকাল চেঙ্গিস খান ‘লিখনপদ্ধতি’ সম্পর্কে জানতেন না। বলা চলে সম্রাট আকবরও ছিলেন নিরক্ষর! তারাই লিখিয়েছেন আইন-ই-আকবরি, হিস্ট্রি অব মোঙ্গলস।
ভাষার জন্য ভালোবাসার পরিক্রমায় আসে আমাদের স্বাধীনতা। কারো মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়া ইসলামের শিক্ষা নয়। বায়ান্নর রক্তাক্ত পথে যারা পেলেন ‘অমরত্ব’ ইসলাম তাদের উচ্চমর্যাদার সুসংবাদ শোনায়-‘যারা আল্লাহর পথে মারা যায়, তোমরা তাদের মৃত বলো না,বরং তারা ‘চিরঞ্জীব’… (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৪)।”
বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মনিপুর, বিহার, উড়িষ্যা ও মিয়ানমারের আরাকান জনগোষ্ঠীর (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) ভাষা বাংলা। ভারতের আসাম, আফ্রিকার সিয়েরালিয়নের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা। জাপান ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ভাষাশহিদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে শহিদ মিনার। রক্তঋণে কেনা আমাদের প্রাণের ভাষা, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা ঘোষণা সময়ের দাবি।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর