রাচিনের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড।
টানা দুই ম্যাচ হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছিটকে গেলো বাংলাদেশ। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫ উইকেটের হারে বিদায় নিশ্চিত হয় টাইগারদের। সেইসঙ্গে পাকিস্তানের বিদায়ও নিশ্চিত হয়ে গেলো। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করলেও বড় স্কোর করতে পারেনি শান্ত বাহিনী। অধিনায়ক শান্ত এবং জাকের আলীর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ২৩৬ রানের সম্মানজনক স্কোর পায় তারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে রাচিন রবীন্দ্র’র দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ২৩ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে কিউইরা।
দুই ম্যাচের দুটিতে জিতে ‘এ’ গ্রুপ থেকে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। আজ বাংলাদেশ জিতলে পাকিস্তানের সেমিতে যাওয়ার সম্ভাবনা টিকে থাকতো। কিন্তু টাইগারদের হারে পাকিস্তানেরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বপ্ন এখানেই শেষ হয়ে গেছে। দুই ম্যাচের দুটিতেই জিতে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলো নিউজিল্যান্ড।
রানতাড়ায় নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট বিলিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। স্কোরবোর্ডে কোনও রান যোগ না হতেই আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান উইল ইয়ংকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান তাসকিন আহমেদ। তিনে নেমে কেইন উইলিয়ামসনও এদিন নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৪ বলে ৫ রান করে নাহিদ রানার বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
১৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে কিউইরা। এরপর ডেভন কনওয়ে ও রাচিন বরীন্দ্র’র ৭৩ বলে ৫৭ রানের জুটিতে সেই চাপ সামাল দেয় তারা। মোস্তাফিজের বলে কনওয়ে আউটি হলে ভাঙে সেই জুটি।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৩৬ বলে ১২৯ রান যোগ করেন রাচিন এবং টম লাথাম। দলীয় ২০১ রানে রবীন্দ্র আউট হলে ভাঙে তাদের জুটি। ১০৫ বলে ১১২ রানের হার না মানা দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার। ততক্ষণে জয়ের একেবারেই কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কিউইরা।
স্কোরবোর্ডে আর ১৩ রান যোগ করতেই টম লাথামকেও হারায় তারা। মাহমুদউল্লাহ’র দারুণ এক থ্রো’তে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৭৬ বলে ৫৫ রান। এরপর মিচেল ব্রেসওয়েলকে নিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন গ্লেন ফিলিপস। ফিলিপস ২৮ বলে ২১ রানে এবং ব্রেসওয়েল ১৩ বলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন।
টাইগারদের হয়ে তাসকিন, মোস্তাফিজুর, নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেন একটি করে উইকেট শিকার করেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি বাংলাদেশের। ৮ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৫ রান করেছিল টাইগাররা। তবে উদ্বোধনী জুটিটাকে বেশিদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেনি টাইগাররা। নবম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই তানজিদ হাসান তামিমকে ফিরিয়েছেন মিচেল ব্রেসওয়েল।
পাওয়ারপ্লের পর দ্বাদশ ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ ক্যাচ দেন ৩০ মিটার সার্কেলের মধ্যে। তবে মিরাজের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে ধীরগতিতে খেলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শান্ত এবং তাওহীদ হৃদয়। তবে হৃদয় হতাশ করেছেন বেশ।
রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথম ২০ বলে একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেননি বাংলাদেশের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটার। অবশ্য মারার চেষ্টাও করেননি। চাপে পড়ে ২৪তম বলে বাউন্ডারির চেষ্টায় ডাউন দ্য উইকেটে এসে বড় শট খেলতে যান তিনি। তবে এবার সঙ্গ দেয়নি ভাগ্য। কাভারে উইলিয়ামসনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার। আর তাতে ১০০ পেরোনোর আগেই বাংলাদেশের তিন ব্যাটার সাজঘরে।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের খারাপ সময় চলছেই। গত ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়া এই ব্যাটার আজ আউট হয়েছেন ২ রানে। ব্রেসওয়েলের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন তিনি।
সৌম্য সরকারের বদলি হিসেবে দলে আসা মাহমুদউল্লাহও বা কী করলেন! ১৪ বলে ৪ রান করে তিনিও ব্রেসওয়েলের শিকারে পরিণত হন। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৫ রানের জুটি গড়েন শান্ত-জাকের আলী। তবে এই জুটি এগিয়েছে কচ্ছপের গতিতে।
সেট হয়েও হাত খুলে খেলতে পারেননি শান্ত। শেষ পর্যন্ত ৭৭ রানে থামে তার ধীরগতির ইনিংস। ৯ চারে ৭৭ রান করেছেন অধিনায়ক। আট নম্বরে নেমে রিশাদ হোসেন রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে ২৫ বলে ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
অষ্টম উইকেটে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়ে কোনোরকম লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন জাকের। ৪৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৫৫ বলে ৪৫ রান করেন তিনি। ২৩৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে মিচেল ব্রেসওয়েল শিকার করেছেন ৪ উইকেট। উইলিয়াম ও’রোর্কে ২টি, ম্যাট হেনরি ও কাইল জেমিসন নিয়েছেন একটি করে উইকেট।