Home ইসলামযেদিন ফাতিমা (রা.) ওফাত লাভ করেন

যেদিন ফাতিমা (রা.) ওফাত লাভ করেন

by MD JUNAYED SHEIKH

ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে রমজান বছরের ১২ মাসের মধ্যে সর্বাধিক পবিত্র ও শ্রেষ্ঠ মাস। রমজান এমন এক আমলের মাস, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বাস্তবধর্মী শিক্ষা দেয়। এই মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ ও আত্মোত্সর্গ, সহনশীলতা, ধৈর্য, মনোবল, দৃঢ়তা এবং ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্টে দরিদ্র ও অভাবীদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার শিক্ষা অন্তরে প্রোথিত হয়। এগুলোই সেই মহত্ গুণাবলি, যা একজন মুমিনের চরিত্রের অলঙ্কার হয়ে ওঠে এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে এক দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলে।

এই পবিত্র মাস শুধু আধ্যাত্মিক মূল্যেই সমৃদ্ধ নয়, ঐতিহাসিক ভাবেও ইসলামের বহু গৌরবময় মুহূর্তের সাক্ষী এই মাস। নিম্নে এ মাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করা হলো:

৩ রমজান: ফাতিমা (রা.)-এর ওফাত দিবস
১০ রমজান: উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.)-এর ওফাত দিবস
১৫ রমজান:  ইমাম হাসান (রা.)-এর জন্মদিন
১৭ রমজান: আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর ওফাত দিবস এবং ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের দিন
২১ রমজান: আলী (রা.)-এর শাহাদাত দিবস
২৭ রমজান (শবে কদর): এই রাতে কোরআন নাজিল হয়েছে। 
৩ রমজান: ফাতিমা (রা.)-এর ওফাত দিবস

মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : ফাতিমা আমার (কলিজার) টুকরা। যে তাকে কষ্ট দিল, সে যেন আমাকে কষ্ট দিল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৭১৪)
তিনি ছিলেন প্রিয়নবী (সা.)-এর সর্বকনিষ্ঠ কন্যা। ছিলেন হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর পরম স্নেহময়ী জননী এবং ছিলেন ইসলামের সূর্যসম সাহসী পুরুষ, খোলাফায়ে রাশেদিনের অন্যতম খলিফা আলী (রা.)-এর মহিমাময়ী সহধর্মিণী।

তাঁর উপাধি হলো বিনতে মুহাম্মদ, আর সম্মানসূচক বিশেষণ্ত বাতুল, যাহরা ও সাইয়্যিদা। তাঁর নাম ‘ফাতিমা’ কেন রাখা হলো? জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার কন্যার নাম ফাতিমা এজন্য রাখা হয়েছে, কারণ আল্লাহ তাআলা তাকে এবং যারা তাকে ভালোবাসে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। (আল-ফিরদাউস বিমাসুরিল খিতাব, হাদিস: ১৩৮৫)

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) নিজেই বলেছেন : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর আমি পৃথিবীতে ফাতিমা (রা.)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাউকে দেখিনি। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা: ২০১)

অন্য আরেক বর্ণনায় তিনি বলেন, যখন ফাতিমা (রা.) নবীজি (সা.)- এর দরবারে আসতেন, তখন তিনি আনন্দে ভরে উঠতেন। নবীজি দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাতেন, স্নেহভরে তাঁর হাত ধরে চুম্বন করতেন এবং নিজ আসনে বসাতেন। (আল-মুস্তাদরাক লিল হাকিম, হাদিস: ৪৭৩২)

সাওবান (রা.) বলেন, যখন প্রিয় নবী (সা.) কোনো সফরে বের হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করতেন, তখন বিদায়ের মুহূর্তে শেষবারের মতো যার সাথে কথা বলতেন, তিনি ছিলেন তাঁর কলিজার টুকরা, আদরের কন্যা ফাতিমা (রা.)। আর সফর শেষে মদিনায় ফিরে এসে সবার আগে যাঁর ঘরে গিয়ে উপস্থিত হতেন, তিনিও ছিলেন ফাতিমা (রা.)। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৪২১৩)

বুরাইদা (রা.) বলেন, নারীদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার পাত্র ছিলেন ফাতিমা (রা.)। আর পুরুষদের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন আলী (রা.)। (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৬৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.))-এর ইন্তিকালের পর ফাতিমা (রা.) প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। শেষ পর্যন্ত ১১ হিজরির ৩ রমজান, তিনি তাঁর প্রিয় রবের ডাকে সাড়া দেন এবং পরপারে পাড়ি জমান। (তারীখুল খামীস ফি আহওয়ালি আনফাসি নাফিস, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা: ২৭৮)

আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান এবং রাতের আঁধারে ‘জান্নাতুল বাকি’তে তাঁকে দাফন করা হয়। (আল-রিয়াদুন নাদরাতু ফি মানাকিবিল আশারাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫২)

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment