চারিদিকে সুবহে সাদিকের আবছা অন্ধকার। পাখিদের কূজনে এখনো মুখরিত হয়নি সকালের পরিবেশ। শীতের কুহেলী পর্দা আসতে শুরু করছে। প্রকৃতি বুঝি
শীতকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তারই আগমনী বার্তা শুনা যাচ্ছে প্রত্যুষের ঝিরঝির বাতাসে ও ভোরের কুয়াশায়।
অনতি দূরের মসজিদের সুউচ্চ মিনার হতে (বন্ধুবর আবু জ্বর)মুয়াজ্জিনের সুললিত কন্ঠে ভেসে আসছে আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম। মানুষের কল্যাণ কামনায় কী সুন্দর এক বার্তা।
আজানের সুমিষ্ট আওয়াজে ঘুম উবে গেল। প্রয়োজনীয় হাজত সেরে মিসওয়াক হাতে দন্ত মেজে সুন্দর করে অযু বানাই। তারপর গায়ে জামা জড়িয়ে কুয়াশা জড়ানো রজনীতে ধীরপদে এগিয়ে যাই মসজিদ পানে।
এই ভোরের নির্মল পবিত্র হাওয়ায় বেশ ভালো লাগে আমার। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় এসে উপস্থিত হয় মসজিদে। দু রাকাত সুন্নত আদায় করে শরীক হয় ফজরের জামাতে।
ইমাম সাহেবের সুমধুর তেলাওয়াত, রুকু,সিজদাহ ও সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করলাম।
নামাজের ইতি টেনে ছোটকালে মক্তবে হুজুরের শিখানো মাসনূন দোয়াগুলো পাঠ করি। সময়টা কেমন যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। মক্তবের স্মৃতিগুলো এখনো তরতাজা, সজীব। মনে হয় , এই তো সেদিনের কথা। আলিফ , বা তা, ছা… … এই পর্ব শেষ।
এবার সুর করে তাশাহহুদ আত্তাহিয়াতু, দুরুদ শরীফ, দোয়ায়ে মাসুরা পড়ার পালা। সুরে সুরে পুরো গ্রাম জানান দিতাম। মক্তব শেষ হত তবুও রেশ থেকে যেত।
মক্তবের উস্তাদজিকে খুব মনে পড়ছে। আল্লাহ পাক হুজুরকে সিহহাত ও আফিয়াতের সঙ্গে রাখুন।
২
গ্রামের সবুজ শ্যামল মনমাতানো দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার লক্ষ্যে মসজিদ থেকে বের হয়ে এক পা দু পা করে পায়চারী করতে থাকি। সকালের মৃদুমন্দ বাতাস গায়ে লাগে। শরীর মনে দোলা দিয়ে যায়। কী আরাম!
কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর বাড়ীর পথ ধরি। হাত পা ধুয়ে সকালের নাস্তা করি। তারপর আস্তে ধীরে ছুটে চলি নিজ কর্মস্থলের দিকে জামিয়া মুহাম্মাদীয়ার প্রাঙণে। ছাত্রদের কোলাহলমুখর ধ্বনি মাতিয়ে রাখে সারাক্ষণ।
মাদ্রাসার যাবতীয় কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দিয়ে ঘরে ফিরি। দুপুরের সালাত আদায় করতে মসজিদে রওনা হই। মসজিদে যাওয়ার একটি কাজ করতে চেষ্টা করি, আশপাশে থাকা মানুষজনকে নামাজের দাওয়াত দেই।
আমাদের আকাবিররা সবসময় মানুষের পরকাল নিয়ে ফিকির করতেন। আমি অধম তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণের চেষ্টা করি। খুব আনন্দ হয়।
দিনশেষে এগুলোই মূলত প্রাপ্তি। আমার আখেরাতের পুঁজি।