বাংলাদেশ বিমান মানে ফ্লাইট ডিলে হবে বা বিলম্বে ছাড়বে এটাই তার বৈশিষ্ট্য। তবে তবে কখনো কখনো ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়াটা আনন্দদায়ক হয়ে যায়।
কদিন আগে ওমরা শেষে দেশে ফিরছিলাম। ফিরতি ফ্লাইট ছিল মদিনা এয়্যারপোর্ট থেকে। ফ্লাইট টাইম ভোর ছয়টায়। আমি তো ফ্লাইট ছাড়ার ৪ ঘন্টা পূর্বে এয়্যারপোর্টে হাজির হয়ে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে ট্রলিতে লাগেজ উঠানোর পরেই এয়্যারপোর্টের স্কীনে দেখতে পেলাম বাংলাদেশ বিমান ১০ ঘন্টা বিলম্বে ছাড়বে। তার মানে বিকেল চারটা এর আগে বিমান ফ্লাই হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। বড় মুশকিলে পড়ে গেলাম।
মদিনাতে তখন প্রচন্ড শীত। এয়্যারপোর্টেও ভীষণ ঠান্ডা আবহাওয়া। কনকনে শীতে কোথাও আরামে দাঁড়াবার উপায় নেই। চলে গেলাম এয়্যারপোর্ট মসজিদে। মসজিদটি টার্মিনালের বাইরে। সেখানেও শীত। মসজিদের এক কোণে কোন রকম জড়সড় হয়ে বসে থাকলাম।
প্রায় ঘন্টা খানেক পরে ফজরের আজান হল। নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে সূর্যাদোয়ের অপেক্ষায়। কখন একটু সূর্যের তাপ নেব।
সূর্য উঠার পরে টার্মিনালের বাইরের বেঞ্চে বসে পড়লাম। সেখানে অনেক মনোরম দৃশ্য। পাশেই দৃষ্টিনন্দন কফি হাউস, সূর্যের আলোতে ঝিকিমিকি করছে। সকালের মিষ্টি রোদে শিশিরভেজা সবুজ ঘাসগুলো সতেজ হয়ে উঠছে। মানে একটা অভূতপুর্ব দৃশ্য। যেটা সবসময় নজরে আসেনা।
অনেকদিন পরে রোদ পোহানোর সময় হল। প্রায় কয়েকঘন্টা রোদের আলোতে ঝরঝরে হওয়ার চেষ্টা করলাম। শরীর কিছুটা ওম হতে লাগল। মনে মনে ভাবলাম, যাক বিমান ডিলে হওয়ার কল্যাণে দীর্ঘ সময় রোদ পোহানোর সুযোগ হল।
বেলা ১২ টা। এয়্যারপোর্টের স্কীনে ভেসে উঠল গেট ওপেন। মানে এক্ষুনি লাগেজ জমা নিয়ে বোর্ডিং পাস দিচ্ছে। দ্রুত কাউন্টারে দাঁড়ালাম। অতি-তাড়াতাড়ি আমার লাগেজ জমা হয়ে গেল। বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে ছুটলাম ইমিগ্রেশন এর দিকে। ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের কল্যাণে ভিআইপি লাউঞ্জে বসার সুযোগ হয়ে গেল।
সেখানে খানাদানা সেরে চোখ পড়ে গেল ভিআইপি অতিথিদের গ্রন্হাগারের দিকে। মাশাআল্লাহ! এর আগে কখনো এমন দৃশ্য নজরে পড়েনি। মদিনা এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জে বিশাল কিতাবের ভান্ডার। তাও সাধারণ কোন কিতাবাদী সেখানে নেই। মানে ভিআইপি অতিথিদের সব ভিআইপি কিতাবের সমাহার।
বুখারী শরীফের অন্যতম ব্যখ্যাগ্রন্থ– ইবনে হাজার আসকালানী রচিত” ফতহুলবারী ” –মদিনা এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জে স্থান পেয়েছে। এরকম অনেক মশহুর কিতাব সেখানে দেখতে পেলাম।
কুতুবখানার রিডিং চেয়ার ও টেবিলগুলো চমৎকার। সেখানে বসে অনেকক্ষণ কিতাব মুতায়ালার সুযোগ হয়ে গেল।
মানে বিমান ডিলে বা বিলম্ব হওয়াটাও কল্যাণকর হয়ে গেল। এত্ত আলিশান কুতুবখানাটি অজানা ছিল। এবার বিমান বিলম্ব হওয়াতে নতুন অভিজ্ঞতা ঝুলিতে জমা হল।
পরিশেষে দুআ রইল যারা এমন মনজুড়ানো ব্যবস্হা করেছেন। আল্লাহতালা কবুল করুন। আমিন।
আমিনুল ইসলাম কাসেমিঃ শিক্ষক ও কলামিস্ট