Home আন্তর্জাতিকবিশ্বের সর্ববৃহৎ ইফতার রাশিয়ায় কি করে?

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইফতার রাশিয়ায় কি করে?

by MD JUNAYED SHEIKH

রাশিয়া মানেই অনেকের কাছে বিশাল তুষারাবৃত সমতল ভূমি, পেঁয়াজ আকৃতির গম্বুজবিশিষ্ট চার্চ এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টান ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এই বিশাল দেশটির ঐতিহ্য কেবল এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত দেশ রাশিয়াতে রয়েছে বহুমাত্রিক সংস্কৃতি ও ধর্মের সহাবস্থান। বিশালাকৃতি দেশটির বৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে রয়েছে ইসলাম, যা রাশিয়ার ইতিহাসে গভীরভাবে প্রোথিত এবং আজও শক্তিশালীভাবে বিদ্যমান।

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মধ্যে যুগ যুগ ইউরোপের সর্ববৃহৎ দেশ রাশিয়ায় যুগান্তকারীভাবে টিকে রয়েছে ইসলাম। রমজান মাস আসলে যেন পুরো পৃথিবীর সাথে সমানভাবে পাল্টে যায় রাশিয়ার চিত্র। কঠোর নিরাপত্তা এবং নানান আয়োজন উৎসবমুখর পরিবেশে রাশিয়ানরা পবিত্র মাহে রমাদানের মাহাত্ম্য ধারণের চেষ্টা করে থাকেন। ১৪ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে মুসলিমদের সংখ্যাই ২ কোটি।

বর্তমানে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। এমনকি রাজধানী মস্কোতেই বসবাস করেন প্রায় ১০ লক্ষ মুসলিম। দেশটির সবচেয়ে পুরাতন এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা মস্কো ক্যাথেড্রাল মসজিদ,যার কাঠামো নির্মাণশৈলী অসাধারণ। অভ্যন্তরীণ নকশায় সাদা মার্বেলের সঙ্গে সবুজ, নীল ও সোনালি অলংকরণ দৃষ্টিনন্দন চিত্র তৈরি করেছে। মসজিদের দুটি প্রধান মিনার রাশিয়ান ও তাতার জাতির সংহতির প্রতীক। একটি সোনার গম্বুজ মস্কোর অর্থোডক্স স্থাপত্যের সঙ্গে চমৎকারভাবে মিশে গেছে।
খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এই দেশটিতে একসাথে প্রায় ১৫ হাজারের মতো মুসল্লি ইফতার গ্রহণ করেন যা সত্যিকার অর্থে বিরল এবং একইসাথে অমুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইফতার আয়োজনের দেশ। এছাড়া রমজানকে ঘিরে দেশটিতে আয়োজন করা হয় নানা রকম মুসলিম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকে অসংখ্য খাবারের পশরা। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো।

এক নজরে রাশিয়ায় ইসলাম বিস্তৃতির ইতিহাসঃ

রাশিয়ায় ইসলামের ইতিহাসঃ
রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী মুসলিম। ভোলগা নদীর অববাহিকা থেকে ককেশাস পর্বতমালা পর্যন্ত ইসলাম রাশিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। দেশটিতে ইসলামের আগমন ঘটেছিল সপ্তম শতকে, যখন আরব বণিকরা বাণিজ্যের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ইসলামের বীজ বপন করেন। তবে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিস্তার ঘটে ৯২২ সালে, যখন বর্তমান তাতারস্তানের ভোলগা বুলগারিয়ার শাসক ইসলাম গ্রহণ করেন।

স্বর্ণযুগ ও চ্যালেঞ্জের সময়ঃ
এছাড়া ১৩শ শতকে মঙ্গোলদের গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্য গঠনের সময় ইসলাম আরও ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে ১৬শ শতকে রাশিয়ার জার শাসনের সূচনা হলে মুসলমানদের নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। মসজিদ নির্মাণে নানা রকম বিধিনিষেধ, সংস্কৃতিগত সমন্বয়ের প্রচেষ্টা এবং ধর্মীয় অনুশীলনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় দেশটিতে।

সোভিয়েত যুগে ইসলামঃ
১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব ও সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের পর ধর্মীয় দমন-পীড়নের নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি হয় রাশিয়ায়। মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া, ইসলামি শিক্ষা নিষিদ্ধকরণ এবং ধর্মীয় নেতাদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালানো হয়। তবে মুসলিম সম্প্রদায় শত আঘাতের পরেও তাদের বিশ্বাস ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সামর্থ্য হয়।

সোভিয়েত পতন পরবর্তী ইসলাম পুনর্জাগরণঃ
পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে রাশিয়ায় ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। বহু বছর বন্ধ থাকা মসজিদগুলো পুনরায় চালু করা হয়, নতুন মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়, ইসলামি শিক্ষা এবং সাহিত্য পুনরুজ্জীবিত হয়।

আধুনিক রাশিয়ায় মুসলমানদের জীবনঃ
রুশ মুসলমানরা বর্তমানে তাদের ধর্মীয় ও জাতীয় পরিচয় রক্ষার এক জটিল বাস্তবতার মধ্য দিয়ে চলছেন। যদিও ধর্মীয় সহনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও ইসলামোফোবিয়ার মতো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে দেশটিতে। তবে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখে দেশটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
রাশিয়ায় ইসলামের ইতিহাস ধৈর্য, অভিযোজন এবং আস্থার প্রতিচ্ছবি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নানা পরিবর্তন সত্ত্বেও ইসলাম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়ে গেছে। আজও রাশিয়ার শহরগুলোর মসজিদ, আজানের ধ্বনি ও মুসলমানদের অবদান এই ধর্মের স্থায়িত্বের প্রতীক হয়ে আছে।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment