মঙ্গলবার ভোরে গাজা বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ছবি: রয়টার্স
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর অচলাবস্থার মধ্যে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইললি বাহিনী। নারকীয় এই হামলায় এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৯ জানুয়ারি হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোরের হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলের হামলায় বিশ্বের অনেক দেশ ও সম্প্রদায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
হামাস
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিলের জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ অভিযোগ এনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, নেতানিয়াহু ও তার ডানপন্থি সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর ফলে ইসরাইল গাজায় বন্দি অবশিষ্ট ইসরাইলি জিম্মিদের ‘একটি অজানা ভাগ্যের’ দিকে ঠেলে দিলো।
পরে হামাস কর্মকর্তা ইজ্জত আল-রিশেক এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত হলো দখলদারদের বন্দিদের বলিদান এবং তাদের ওপর মৃত্যুদণ্ড আরোপের সিদ্ধান্ত।
ইসরাইল
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের বারবার অস্বীকৃতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জবাবে এই হামলা।
‘ইসরাইল এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করবে’ বলেও বিবৃতিতে বলা হয়। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, যতক্ষণ না আমাদের জিম্মিদের বাড়ি ফেরানো হয় এবং যুদ্ধে আমাদের সব লক্ষ্য অর্জন না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা লড়াই বন্ধ করব না।’
যুক্তরাষ্ট্র
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, গাজায় হামলার বিষয়ে ইসরাইল ‘ট্রাম্প প্রশাসন এবং হোয়াইট হাউসের’ সঙ্গে পরামর্শ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেমন স্পষ্ট করে বলেছেন, হামাস, হুতি, ইরান, যারা কেবল ইসরাইলেরই নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও আতঙ্কিত করতে চায়, তাদের সবাইকে মূল্য দিতে হবে-সবকিছুই ভেঙে পড়বে।’
ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবার
গাজায় হামলার সমালোচনা করেছে ইসরাইলি জিম্মি পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম। সামাজিক মাধ্যমে সংগঠনটি জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলি সরকারের আক্রমণের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে তারা ‘জিম্মিদের মুক্ত করতে আন্তরিক নয়’।
পোস্টে আরও বলা হয়, ‘হামাসের ভয়াবহ বন্দিদশা থেকে আমাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলায় আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ এবং আতঙ্কিত। হামাসের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি থেকে সরকার কেন সরে এসেছে জানাতে চায় সংগঠনটি।
হুতি
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। এক বিবৃতিতে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটির সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিল বলেছে, ‘গাজা উপত্যকায় ইহুদি শত্রুদের পুনরায় আগ্রাসনের নিন্দা জানাই। এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণ একা নয়। ইয়েমেন তাদের সমর্থন ও সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ
প্যালেস্টাইনের ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সব প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করার‘ অভিযোগ করেছে।
চীন
গাজায় ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে চীন। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, বেইজিং গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে এমন যেকোনো পদক্ষেপ এবং বৃহত্তর মানবিক বিপর্যয় রোধে সব পক্ষবে সংযমের আহ্বান জানায়।