হৃদয় ভারাক্রান্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারলাম, প্রিয় অগ্রজ হাফেজ মাওলানা আলামীন শাহ আমাদের মাঝে আর নেই। শাহাদাতের পিয়ালায় চুমুক দিয়েছেন। পিয়ারা হয়েছেন মহান রবের। সত্যটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছিল তখন। প্রাণবন্ত এই মানুষটার স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে খুব।
পরোপকারিতার গুণ ছিল চোখে পড়ার মত। দেশে থাকতে বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখেছি ভাইকে। বিশেষ করে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দামাত বারাকাতুহুম পরিচালিত ইসলাহুল মুসলিমিনের ব্যানারে ত্রাণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যেতেন ।
সবার সাথে খুব সহজে মিশতে পারাটা স্বভাবজাত বিষয় ছিল। ৪-৫ বছরের সিনিয়র ছিলেন আমাদের। আমি ছোটবেলা থেকেই একটু অন্তর্মুখী স্বভাবের তাই সবার সাথে খুব একটা মেশা বা কুশল বিনিময় খুব একটা হতনা। তবে আল আমীন ভাই ছিলেন বিপরীত। ইকরার সাহিত্য সংসদের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সাহিত্য বিষয়ে আমার আগ্রহ অনেক পূর্ব থেকেই। সে সুবাদে ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে। কাজের উৎসাহ দিয়েছেন, অনেক উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
আমি যে বছর সানাবিয়া জামাতে পড়ি, সে বছর তিনি জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব পাড়ি জমান। বিদেশে গিয়েও এক মুহূর্তের জন্য দেশকে ভুলে যাননি।
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ভাইয়ের তৎপরতা দেখার সুযোগ হয়েছে— দেশকে নিয়ে সদা সরব থেকেছেন। দেশের মানুষের দুঃখে ব্যথিত হয়েছেন। সুখে আনন্দিত হয়েছেন।
আমার তাকমিলের বছর আল আমীন ভাই দেশে ফিরে যখন ইকরায় আসলেন, তখন আমাদের সকলের সাথে এত আন্তরিকভাবে মোয়ানাকা করছিলেন — যেন অনুজদের সাথে সাক্ষাতের এই মাহেন্দ্রক্ষনের অপেক্ষাতেই ছিলেন দীর্ঘ তিনটা বছর।
কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটা পোস্টে জানতে পারলাম— তার ছোট্ট মেয়েটার পাসপোর্ট এর জন্য খুব দৌড়ঝাঁপ করেছেন।এর জন্য সরকারি অফিসে দৌড়ঝাঁপ আর ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে। ছোট্ট মেয়েটাকে নবীর শহরে, নিজের কাছে রাখার জন্য। কিন্তু তাকদীরের ফায়সালা ছিল ভিন্ন।
আল আমীন ভাইয়ের ৮ মাসের শিশু কন্যার কথা ভাবতেই হৃদয়টা হাহাকার করে উঠছে। যেদিন ও জানবে বাবা বলে ডাকার মানুষটাকে বুলি ফোটার আগেই হারিয়ে ফেলেছে— সেই দিন কি হবে? ভাবলেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠে বেদনা।
হে আল্লাহ , পিতা হারানো এই ছোট্ট ফুল কলিটির জিম্মাদার হয়ে যান। এবং তার বাবা-মা, ভাই বোন, স্ত্রী ও প্রিয়জনদের সবরে জামিল দান করুন। ছোট্ট এই শিশুটিকে বাবার কল্পনার চেয়েও বেশি চক্ষুশীতলকারী আর নাজাতের জারিয়া বানান।
অভিসম্পাত পড়ুক সকল সন্ত্রাসীদের উপর— যাদের লালসার শিকার হয়ে অকালেই ঝরে যায় প্রতিভাবান যুবক , আমাদের ভাই ও বন্ধু।