Home ভ্রমণধারাবাহিক ভ্রমণগদ্য। তাবলীগে চল্লিশদিন (তৃতীয় পর্ব)

ধারাবাহিক ভ্রমণগদ্য। তাবলীগে চল্লিশদিন (তৃতীয় পর্ব)

by MD JUNAYED SHEIKH
ধারাবাহিক ভ্রমণগদ্য। তাবলীগে চল্লিশদিন (তৃতীয় পর্ব)


সকালের প্রাতরাশ পর্ব শেষে সাথীভাইয়েরা মেহরাবের সামনে অর্ধবৃত্তাকারে বসেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মাশওয়ারার আমল হবে। ২৪ ঘণ্টায় কী করা হবে, সে বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট একটা কর্মপদ্ধতি রয়েছে। মাশওয়ারার মাধ্যমে ফায়সালা হয়। মাশওয়ারা অর্থ পরামর্শ করা। কোন কাজের পূর্বে মাশওয়ারা করা আল্লাহ তায়ালার নিকট পছন্দনীয় আমল। সমস্ত নবীগণের সুন্নাত, সাহাবিগণের আদত বা অভ্যাস আর মুমিনের সিফাত।

সাথিদের ভাষ্য অনুযায়ী , গত তিনদিন মুফতি সাহেবের অভাব সাথীদের মধ্যে বেশ ভালভাবে অনুভূত হয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে ম্রিয়মাণ ছিল এই জলসা। তাকে কাছে পেয়ে সাথিরা প্রানবন্ত। বড়দের উপস্থিতি কতটা বরকতময় তা এখন মরমে অনুভব করছি। মুফতি সাহেব হুজুরের বরকতে মজলিশের হারানো জৌলুশ ফিরে এসেছে।


মাশওয়ারার প্রারম্ভে মুফতি সাহেব হুজুর সংক্ষিপ্ত কিন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকনির্দেশনা দিলেন। একজন মুবাল্লিগের লক্ষ্য উদ্দেশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি আগামী দিনগুলো কীভাবে যাপন করতে হবে সে বিষয়ে জোর আলোকপাত করলেন। হুজুরের সংক্ষিপ্ত আলোচনার পরপরই মাশওয়ারার কার্যক্রম শুরু হলো।


জীবনের সর্বক্ষেত্রে মাশওয়ারার গুরুত্ব ব্যাপক। মাশওয়ারা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছ, সকলের রায় নিয়ে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, মাশওয়ারার মাধ্যমে কাজ করলে অনেকগুলো ফায়েদা অর্জিত হয়—১. আল্লাহর হুকুম ও নবীর সুন্নাত জিন্দা হয় ২. পরস্পর জোড়, মিল, মহব্বত তৈরি হয় ৩. দৈনন্দিন কাজকর্মে বরকত হয় ৪. বিভিন্ন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচা যায় ৫. কাজকর্মে আল্লাহর রহমত থাকে ৬. মানুষের সামনে লজ্জিত হতে হয়না ইত্যাদি।


মজার ব্যাপার হল, তাবলীগে মাশওয়ারা ব্যতিত কারো একক সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয় তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমির সাহেব একক সিদ্ধান্ত দেয়ার ইখতিয়ার রাখেন। সকাল থেকে রাত অবধি পুরো চব্বিশ ঘণ্টার আমল বা কর্মসূচী মাশওয়ারার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। চব্বিশ ঘণ্টার আমলগুলো নিম্নরূপ— তায়ারুফি বয়ান, গাশতের আদব, এলান, তালিম, মাগরিব বাদ ছয় নম্বরের মুজাকারা, ইস্তেকবাল, রান্নাবান্নার খেদমত, মসজিদ সাফাই, সামান পাহারা ইত্যাদি। সাথীদের মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টার আমল বণ্টনের সময় খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। সেই অনুযায়ী সারাদিনের কাজকর্ম এগোয়। দায়িত্ব বণ্টন শেষে কার কি দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য পাঠ করে শোনানো হল।

সূচি অনুযায়ী মাশওয়ারা শেষে ফাযায়েলে আমল কিতাবের তালিম। সবাই জমে জমে বসেছেন। তালিম চলবে টানা দুই ঘণ্টা। মহতি এই আয়োজনে ফাযায়েলে আমল কিতাব থেকে হাদিস শ্রবণের পাশাপাশি নামাজ, কোরআন তেলাওয়াতের মশক, জিকির ও তাসবিহ-তাহলিলের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে তালিম দেওয়া হয়।


রান্নাবান্না বেশ কষ্টসাধ্য খেদমত। এই খেদমত বণ্টিত হয় সাথীভাইদের স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহের ভিত্তিতে—কোন জোরজবরদস্তি নেই। তবুও দেখা যায় রান্নার খেদমতে কে কার আগে নাম লেখাবেন তা নিয়ে একপ্রকার সাহাবিয়ানা প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিদিন পরস্পররে মাঝে এভাবেই তৈরি হয় সাহাবীসুলভ চমৎকার সব অভাবনীয় দৃশ্য!


রান্নাবান্নার খেদমতে নয়িোজতি সাথীদরেকে তরকারি কাটাকুটি সহ আনুসাঙ্গিক ঝক্কি ঝামেলার কথা বিবেচনা করতঃ মাশওয়ারার শুরুতেই নির্বাচিত করে তৎক্ষণাৎ কাজে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

পূর্বে কোথাও উল্লেখ করেছি— তাবলীগে অগ্রিম কোন টাকা পয়সা নেয়া হয় না। সময়ের চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ সাপেক্ষে টাকা-পয়সা নির্ধারিত হয়। জামাতে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় আজকে খেদমতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনজনকে। বিনা পারিশ্রমিকে তারা উদয়াস্ত সাথিদের জন্য খাটবেন পরকালীন সৌভাগ্যের কথা মাথায় রেখে।
অধমও খেদমতের জন্য হাত তুলেছিলাম তবে বাদ সেধেছে নবীনত্ব। মুফতি সাহেব হুজুর বললেন, ‘কয়টা দিন যাক। পরে দেখা যাবে, ইনশাআলস্নাহ।’

আল্লাহর ফজলে প্রত্যহ জনপ্রতি একশো টাকার উপরে সাধারণত প্রয়োজন হয় না– বরং কোন কোন সময় সারাদিনে মাত্র বিশ টাকায় তিনবেলার খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে যায়। শুনতে আশ্চর্য হলেও এটাই সত্য। এখানে গোপন কিছু স্বতঃর্স্ফূত দানের বিষয় থাকে।


খেদমতের সাথীরা বাজারে যাওয়ার পূর্বে মুফতি সাহেব হুজুর কাছে ডেকে ব্যয় সংকোচনের পরামর্শ দিলেন। বললেন, ‘তেল কম, ভাজা মচমচে’। কথাটার সারমর্ম হচ্ছে— ন্যূনতম তেল ও মসলায় রান্নাকার্য সমাধার পাশাপাশি ভাত তরকারি অবশ্যই ঝরঝরে এবং সুস্বাদু হতে হবে। বিন্দুমাত্র অপচয় করা যাবে না। ‘’

সবার আর্থিক অবস্থা প্রতিদিন মাছ, মাংস খাওয়ার মত সচ্ছল নয়। সাথীদের অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় রেখে মূলত হুজুরের এই দরদি পরামর্শ।


যোহর বাদ সাথীদেরকে মুজাকারা করানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অধমকে। মুযাকারার মাধ্যমে সাথীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা দেয়া হয়। ব্যাপ্তিকাল দশ- পনেরো মিনিট। এই মজলিশের মাধ্যমে সাথীদেরকে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় মাসআলাগুলো শিক্ষা দেয়া হয়। ঘরোয়া পরিবেশে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারি, বড়দের সামনে দাঁড়িয়ে সেভাবে কথা বলতে পারিনা— দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। আলস্নাহ পাক সহায় হোন।
জোহরের নামাজে শষেে কিতাবের সংক্ষপ্তি তালিম। স্থানীয় কয়েকজন মুসুল্লি বসেছেন। ফাজায়েলে আমল পড়া হল। তালিম শেষে মুযাকারার আমল। মুফতি সাহেব মুযাকারার বিষয় নির্ধারণ করে দিয়ে বললেন, ‘খাবারের আদব সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করো।’ সতর্কতার সাথে আলোচনা করলাম।

মুযাকারার বিষয়টা সূরা আসরে এসেছে। ‘’


মুজাকারা শেষ হতেই দায়িত্বশীল সাথীরা দস্তরখানা বিছিয়ে দিলেন। তরকারির ঘ্রানে সারা মসজিদ ম-ম করছে। সাথিদের সমন্বিত প্রয়াসে রান্না যে কত চমৎকার হয়েছে— মৌতাত ছড়ানো ঘ্রাণেই তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সম্মানিত মুরুব্বীরা বলেন— ‘তাবলীগে সবচেয়ে উত্তম খেদমত হলো, সীমিত টাকার মধ্যে উত্তম ও মজাদার খানা পাকিয়ে সময় মত সাথীদের সামনে পেশ করা।’

খেদমতের সাথীরা আমির সাহেবের কথা রেখেছেন। রান্নাবান্নার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত তিনজনের কেউ-ই পেশাদার বাবুর্চি নয়। তা সত্ত্বেও তেল কম ভাজা মচমচে উক্তিটাকে যথার্থ করে কাতল মাছের তরকারিটা পাকা রাঁধুনির মতোই রেঁধেছেন। দ্রততম সময়ে মনোমুগ্ধকর ইন্তেযাম দেখে অবাক হচ্ছি। সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযিম।


খাদ্যাদি পরিবেশনের সঙ্গে নিয়োজিত এক সাথি খাবার প্রস্তুত বলে সংবাদ দিলেন। দস্তরখান সাজানো। আমরা বসলেই খাবার পরিবেশন শুরু হবে। মুফতি সাহেব হুজুর সবাইকে হাত ধুয়ে দস্তরখানে বসে যেতে হুকুম করলেন। পাঁচজন করে সাথি অর্ধবৃত্তাকারে দস্তরখানে বসেছি। লড়্গণীয় বিষয় হচ্ছে, দুপুরবেলা সবার পেটে মোটামুটি ভালোই ক্ষুধা থাকে তা সত্ত্বেও খাবার সামনে পেয়ে কেউ দুর্ভিক্ষপীড়িতের মত ঝাঁপিয়ে পড়লেন না। শৃঙ্খলার সাথে ধীরেসুস্থে সুন্নতি কায়দায় পরস্পর আহার গ্রহন করলাম। সাথীরা নিজ নিজ ভাগেরটুকু নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট। এ এক আজিব দৃশ্য। তাবলীগের সর্বক্ষেত্রেই সৌন্দর্যের চর্চা হয়, আলহামদুলিলস্নাহ।


চব্বিশ ঘণ্টার নেযামুল আওকাত বা দৈনিক রুটিন সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করবো। দৈনন্দিন রম্নটিন মোটামুটি এরকম- রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে অযূ-এস্তেঞ্জা থেকে ফারেগ হয়ে তাহাজ্জুদের আমল। অতপর ফজরের আজানের পূর্ব পর্যন্ত কুরআন তেলাওয়াত, জিকির আজকারে মনোনিবেশ এবং দুআর ইহতেমাম। ফজরের নামাজের পরে ছয় সিফাতের মুজাকারা এবং মহলস্নায় গাশতের আমল। গাশত শেষে ইশরাকের নামাজ পরে সামান্য সময়ের বিশ্রাম। সকাল আটটা নাগাদ না¯ত্মার বিরতি। সকালের প্রাতরাশ সেরে অযূ ই¯েত্মঞ্জার জরম্নরত থেকে ফারেগ হয়ে নয়টায় মাশওয়ারার আমল। নয়টা থেকে দশটা পর্যšত্ম মাশওয়ারার আমল। সকাল ১০টা হতে কিতাবের তা’লীম ও সূরা কেরাতের মশক। তালিম শেষে গোসল, নামাজ এবং মুযাকারার জন্য দেড় ঘণ্টার বিরতি। নামাযের পর তালিম, মুজাকারা, দুপুরের আহার গ্রহন এবং কায়লুলার আমল দুপুর তিনটা পর্যšত্ম। বিশ্রাম শেষে অযূ ই¯েত্মঞ্জার জরম্নরত সেরে আছর পর্যন্ত ফাজায়েলে সাদাকাত কিতাবের তালিম। আছরের নামাজের পরে মহলস্নায় দাওয়াতের আমল। দাওয়াতের কার্যক্রম মাগরিবের আজানের আধাঘণ্টা পূর্বে শেষ হয় অথবা জিম্মাদারের সিদ্ধাšত্ম অনুযায়ী। বাকি সময়টুকু অজু ই¯েত্মঞ্জার জরম্নরত থেকে ফারেগ হয়ে মাগরিবের নামাজের প্রস্তুতি। নামাজের পরে তাবলীগী ছয় উসুলের উপর আহাম বয়ান, তাশকিল এবং এশার নামাজের বিরতি। নামাজের পরে নির্দিষ্ট একটা সুন্নাতের উপর মুজাকারা এবং রাতের আহার গ্রহন এবং ঘুমের আমল। আমাদের সারাদিনের নেযামুল আওকাত বা প্রাত্যহিক রম্নটিন মোটামুটি এরকম।


রুটিন মাফিক আছরের নামাযান্তে মহল্লায় উমুমি গাশতে বের হয়েছি। এর পূর্বে মসজিদে সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বয়ান। তাবলীগের পরিভাষায় এটাকে বলে গাশতের আদব। অর্থাৎ দ্বীনের আহমিয়াত এবং দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে একজন সাথি মোট আটটি পয়েন্টে সংড়্গপ্তি আলোচনা করেন। পয়েন্টগুলো নিম্নরূপ — ১. আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ২. আল্লাহর বড়ত্বের কথা ৩. দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নবীগণের আগমন ৪. দাওয়াত প্রদান করতে গিয়ে নবীগণের কষ্ট মুজাহাদা ৫. দাওয়াতের গুরুত্ব ৬. দাওয়াতের লাভ ৭. তাশকিল ৮. গাশতের তারতিব।
আলোচনা শেষে মহল্লায় গাশতের আমল। জনসাধারণের উদ্দেশ্যে দলবদ্ধভাবে দ্বীনের দাওয়াতের জন্য গমন করাকে উমুমি গাশত বলে। এটা তাবলীগের কাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।


এক নামাজের পরে ও আরেক নামাজের পূর্বে এবং এলাকার সকল শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের কাছে যে দাওয়াত পেশ করা হয় তাকে উমুমি গাশত বলা হয়। বৈকালীন উমুমি গাশত বাস্তবায়নে আট শ্রেনির লোকের দরকার হয়- রাহবার, মুতাকাল্লিম, কিছু মামুর ও জিম্মাদার। সবার দায়িত্ব ভিন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ। রাহবর বা পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন একজন স্থানীয়, যিনি সাথী ভাইদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান এবং লোকজনকে তাদের কাজ থেকে কিছু সময়ের জন্য ফারেগ (অবসর) করে কুরআন হাদীসের থেকে নির্দিষ্ট কথা শোনানোর জন্য মুতাকালিস্নমের (বক্তা) হাতে সোপর্দ করেন। মুতাকাল্লিম ভাই তিন কথার উপর দাওয়াত পেশ করেন। যথা-তাওহীদ, রেসালাত এবং আখেরাত। এ আলোচনার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে আত্মসংশোধনে উদ্বুদ্ধ করা এবং দীনী দাওয়াতের জিম্মাদারি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা।


বক্তব্য নিম্নরূপ—
যেসব ভাইয়েরা নামায পড়েননি তাদের সামনে নামাযের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে একজন মামূরের মাধ্যমে মসজিদে পাঠিয়ে দেয়া। আর জিম্মাদার সাথীর কাজ হচ্ছে, দল পরিচালনা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান। বাদবাকি সাথীরা মনে মনে জিকিরে রত থাকেন। এ সময় জিকির খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। জিকিরের আহামিয়াত সম্পর্কে হযরতজী ইলিয়াস সাহেব রহমাতুলস্নাহি আলাইহি বলেন, ‘যখন তোমরা গাশতে বের হবে তখন কথা বলবে মাত্র একজন আর বাকিরা জিকির করবে। জিকিরে থাকো, মুতাওয়াজ্জু থাকো তাহলে তোমাদের যে ভাই দাওয়াত দিচ্ছে তার মুখ দিয়ে আলস্নাহ ভালো কথা, হেদায়াতের কথা বের করে দিবেন।’
মসজিদে চার তবকা বা শ্রেণীর লোক থাকেন। একজন সাথি মসজিদে অবস্থানরত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে ঈমান এক্বীনের কথা বলেন, একজন দোয়া ও জিকিরে রত থাকেন। যেন দাওয়াত ফলপ্রসূ হয়। এবং দুইজন সাথী মসজিদের গেইটে ইস্তেকবাল বা অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকেন।


গাশতে বের হয়ে কিছুদূর হাঁটতেই চোখে পড়ল আয়তাকার এক সবুজ মাঠ। স্থানীয় প্রায় জনাবিশেক ছেলে ফুটবল খেলতে জড়ো হয়েছেন। দর্শকের সমাগমও হয়েছে। খেলার আয়োজন পুরোপুরি সম্পন্ন। চূড়ান্ত খেলায় নামার পূর্বে প্রস্তুতি হিসেবে বল পায়ে খেলোয়াড়েরা এক্সারসাইজ করছিলেন। আমাদেরকে দেখে সবাই সালাম মুসাফা করতে এগিয়ে এলেন। সংড়্গপ্তি পরিচয় আদান প্রদান শেষে যখন শুনলাম সবাই জামাতে নামাজ পড়ে এসেছেন, মনটা প্রশাšিত্মতে জুড়িয়ে গেল। শ্রোতাদের সম¯ত্ম মনোযোগ আর ধ্যানজ্ঞান যে খেলার মধ্যে নিবদ্ধ— প্রত্যেকের চেহারা তাই বলে দিচ্ছে। বিরক্তির উদ্রেক না ঘটিয়ে মাগরিব বাদ বয়ানে শরীক হওয়ার দাওয়াত দিলাম। সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। দাওয়াতের ক্ষেত্রে হেকমতপূর্ণ আচরণ জরম্নরি। মুরম্নব্বিদের পরামর্শ হচ্ছে, বিশেষ কিছু মুহূর্তে লোকদেরকে জোরাজুরি না করে ‘হ্যাঁ’ এর উপর রেখে আসা। অতিরিক্ত জোরাজুরি হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


এ অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী জিনিস সমূহের অভাব অনটন না থাকলেও দ্বীনী কাজের প্রচার প্রসারে বিরাট অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। ধর্মীয় কাজে লোকদের উপস্থিতি কম। প্রায় মসজিদ যুবক শূন্য। গতকাল এখানে আসার পর থেকে কোন যুবক মুসুল্লি নজরে পড়েনি। এসব চিত্র ভাবিয়ে তোলে। কবে যে এ দেশের মুসলমানগণ মসজিদকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবে!


এ-ও ভাবি, উত্তরাঞ্চলের মানুষের সরলতা প্রসিদ্ধ। এদের অন্তরে ধর্মীয় উপলদ্ধি বোধ জাগ্রত করতে পারলে দার“ণ সম্ভাবনা আছে। সুতরাং অধিক পরিমাণে দ্বীনি মেহনতের বিকল্প নেই। তাবলীগের স্থানীয় কয়েকজন জিম্মাদার সাথী আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে মসজিদে এসেছেন কিছুক্ষণ পূর্বে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও রাত-দিন তারা মেহনত করেছেন জেনে ভালো লাগলো। এ অঞ্চলের চমকপ্রদ কিছু কারগুজারি শোনালেন। ঘটনাগুলোতে পরিবর্তনের আভাস। হে প্রেমময় খোদা, আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দিন। আপনি তো ফা’আ’লুল লিমা-ইয়ুরীদ (যা ইচ্ছা করতে সক্ষম)।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment