Home মুক্ত গদ্যমুক্ত গদ্যস্মৃতিগদ্য । বিহঙ্গের অন্তর্ধানে আমার অশ্রুবর্ষণ

স্মৃতিগদ্য । বিহঙ্গের অন্তর্ধানে আমার অশ্রুবর্ষণ

by MD JUNAYED SHEIKH
স্মৃতিগদ্য । বিহঙ্গের অন্তর্ধানে আমার অশ্রুবর্ষণ

সকল প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এটা অবধারিত সত্য। তবুও কিছু মৃত্যু এমনভাবে হৃদয়ে আঘাত করে, যা মেনে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিছু বিচ্ছেদ এমন— শূন্যতা সৃষ্টি করে।

গত শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে এমন এক মর্মান্তিক খবর পেলাম— যা কল্পনা করতে সাহসের প্রয়োজন হয়। মোবাইল হাতে নিয়েই যখন বড় ভাইয়া মাওলানা সাইদ আহমাদ সৌদি থেকে ক্রন্দনরত অবস্থার ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠের ভয়েস মেসেজ পেলাম, তখন যেন আমি আকাশ থেকে পড়লাম। মুহূর্তে থমকে গেলাম—সদা হাস্যোজ্জ্বল, পরোপকারী, আমার প্রিয় আল আমিন ভাই আর নেই !

তিনি চলে গেলেন সন্ত্রাসীদের নির্মম গুলিতে শহীদ হয়ে। এই বিদায় কিভাবে মেনে নেব? একেবারে অবিশ্বাস্য! এখনো চোখের কোণে ভেসে ওঠে তার চির চেনা সুন্দর হাসি। ইকরা মাঠে এক সাথে খেলাধুলার কত শত স্মৃতি।

আলামিন ভাইকে স্মরণ করলেই অসংখ্য সুন্দর স্মৃতি মনে পড়ে। এই তো কয়েক মাস পূর্বে বড় ভাই হাফেজ মাওলানা মুফতি সাঈদ আহমাদের বিয়েতে আলামিন ভাইয়ের স্বতঃস্ফূর্ত আগমনের কথা মনে পড়ছে।

বিয়ের একদিন আগেই তিনি চলে এসেছিলেন, যেন সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। আমাদের পাশে থেকে রাঁধুনী, সহযোগী, সহকারী—এক কথায় সর্ব ক্ষেত্রে ছিল তার সরব উপস্থিতি। গরু জবাই থেকে শুরু করে রান্না, খাবার পরিবেশন, অতিথিদের খাওয়ানো সব কাজেই ছিল তিনি প্রথম সারিতে। সবাইকে ছবি তোলা, আড্ডা দেওয়াসহ অন্যান্য প্রতিটি মুহূর্তে তিনি ছিলেন আমাদের আনন্দের মধ্যমণি। তার কোনো ক্লান্তি ছিল না, তার একটাই উদ্দেশ্য—সবাই যেন ভালো থাকে। সবাই যেন উপভোগ করে।

আরেকটি মধুর স্মৃতি ছিল আমার কাফিয়ার বছরে, দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষার ছুটিতে কক্সবাজার-বান্দরবান সফর। সেখানে তিনি আমাদের ছোটদের প্রতি এক অদ্ভুত মমতা ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন। হাসিমুখে শাসন করা, প্রত্যেকটি স্পট ঘুরে ঘুরে দেখানো এবং সারাক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকাটাই ছিল তার স্বভাব। দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া এবং তা পরিপূর্ণভাবে পালন করা ছিল তার অনবদ্য একটি গুণ। তার হাসিমাখা মুখটি ছিল এক দারুণ শক্তি—যা আমাদের সবাইকে একত্রে রাখতে সাহায্য করত। তার অমায়িক আচরণ এবং ভালোবাসায় আমরা দুর্দান্ত একটি শিক্ষা সফর করেছিলাম।

কিন্তু আজ আমাদের প্রিয় ভাই চলে গেছেন। এই পৃথিবী ছেড়ে পরকালের বাসিন্দা হয়েছেন। আমাদের কাছে তার স্মৃতি থাকবে, তবে আমরা তাকে আর ফিরে পাব না। তার শূন্যতা আমাদের হৃদয়ে চিরকাল থাকবে।

আমাদের প্রিয় আল আমিন ভাইয়ের জন্য আমি রাব্বে কাবার কাছে দোয়া করি— তিনি যেন তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন। তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ও উত্তম প্রতিদান দেন। আমীন।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment