এক মাস সিয়াম সাধনার পর উৎসবের বার্তা বয়ে এনেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। শাওয়ালের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই মদিনায় শুরু হয়েছে নানা আয়োজন।
জীবিকার তাগিদে মদিনায় এসেছি গত কোরবানি ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে। আমার বাসস্থান থেকে মসজিদে নববী ২০মিনিটের রাস্তা। জুমার নামাজ এবং ঈদের নামাজ মসজিদে নববীতেই আদায় করা হয়।
ছোটবেলা থেকেই ঈদের দিনটি আমার কাছে অন্য রকম আনন্দের। তবে মদিনার ঈদে আছে একটা ভিন্নরকম অনুভূতি,পবিত্রতা, অন্যরকম একটা আনন্দ। যেন ‘আজ মদিনার ঘরে ঘরে ঈদ’ এই বাক্যের একটা রিনিঝিনি থাকে।
মুসলিমদের সবচেয়ে বড় এই পবিত্র উৎসবকে ঘিরে নানান পরিকল্পনা থাকে। ঘুরাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোসহ নানাভাবে আমরা উদ্যাপন করে থাকি । তবে জন্মভূমি ছেড়ে দূর প্রবাসে যারা আছেন, তাদের উদযাপনে থাকে ভিন্নতা। পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন হয় আনন্দহীন।
মসজিদে নববীতে ঈদের জামাত শুরু হয় ফজরের প্রায় আধাঘন্টা পর। মসজিদের ভিতরের অংশে জায়গা পাওয়ার জন্য মুসুল্লীরা আসতে শুরু করেন এশার সময় থেকেই।
আমিও আজ এশারের সময় রেডি হয়ে চলে আসছি, গত ঈদে দেরি করে আসার দরুন নামাজ পড়তে হয়েছে রাস্তায়, তাই এবার একটু আগে আগেই চলে আসছি।
মসজিদে নববীতে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে এসেছেন লাখ লাখ ওমরাহ যাত্রী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শনার্থীদের আগমনে আজ মসজিদে নববী বৈচিত্র্যপূর্ণ নগরী হয়ে উঠেছে।
ঈদের সময়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের উপস্থিতি মসজিদে নববীকে করে তোলে বৈশ্বিক ঐক্যের মূর্তপ্রতীকে। মিসর, ইরাক, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া,আবিসিনিয়া, সিন্ধু, ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের সব প্রান্তের লোকের সমাগম ঘটেছে। আর সব দেশের ঈদ পোশাক ও পরিচ্ছদে বৈচিত্র্য ও নানান সৌন্দর্য।
খাবারের ক্ষেত্রেও এই বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। মদিনার সড়ক ধরে গেলে দেখা যাবে বুখারি রাইস রেস্তোরাঁ, ভারতীয় রেস্তোরাঁ, তুর্কি রেস্তোরাঁসহ নানা বাহারি খাবারের পসরা।
মদিনায় ঈদের নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে দিলে অন্য রকম এক প্রশান্তির তৈরী হয়। সাহাবায়ে কেরামের কথা মনে পড়ে যায়। কল্পনা করি তখনকার ঈদের দিনের কথা।
আজকের মত এত জাঁকজমক না থাকলেও আনন্দের কমতি ছিল না নিশ্চয়। নবীজির মত মহান মানুষের উপস্থিতি রঙিন করে তুলত মদিনার অলিগলি। অতীতের সেই সোনালি দিনগুলো কল্পনা করতেই থাকি। আমার খুব ভাল লাগে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।