পুরো রোজার পূণ্যময় মাস পেরিয়ে মহান রবের উপহার ঈদুল ফিতর। বসন্তের ফুলের মতো চতুর্দিকে কলরব তুলে প্রতিটি মুসলিমের ঘরে নেমে আসে এই আনন্দ। মেস্তে পড়া হাতকে মেজেঘষে আলতো রঙে রাঙিয়েও বাঙালি মায়ের পড়ন্ত বয়সে কচি হাসি যেনো চাঁদের ঝিলিক। ভিখারিনীর বাটিটাও আজ দেখি নতুন নতুন লাগে। মসজিদের ধারে ভিক্ষুকটাও নতুন লুঙ্গি ও জামা পড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে ঈদ আমেজ ফুটিয়ে তুলে।
সবার আপন ঈদ। কতো যত্নে করে ঈদকে সবাই ঘরে তুলে। একেই বলা হয় ঈদ আবাহন।
কবি কায়কোবাদ ‘ঈদ আবাহন’ নামে একটি কবিতা লিখেছেন।
কবিতাটি এ রকম—
“এই ঈদ বিধাতার কি যে শুভ উদ্দেশ্য মহান,
হয় সিদ্ধ, বুঝে না তা স্বার্থপর মানব সন্তান।
এ ত নহে শুধু ভবে আনন্দ উৎসব ধুলা খেলা।
এ শুধু জাতীয় পুণ্যমিলনের এক মহামেলা। ”
নজরুলের ভাষায়—
শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,
কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,
বরষের পরে আনিলে ঈদ!
কিন্তু কায়কোবাদ বা নজরুলরা যদি আমার কিরগিজ ঈদ পেতো; হয়তো ঈদের এই সূর আর বাজতো না তার সুরে। প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি— কিরগিজস্তানে এসে এবারের ঈদ যেন চুরি হয়ে গেছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য— আমার মতো ৯৬ শতাংশ মুসলিমের ঘর থেকে এই ঈদ চুরি হয়ে গেছে। এখানে ঈদ খলিলের দোকানের ঠান্ডা বাসি দুইদিন আগের পরোটা। বিমর্ষ রুক্ষ এক ঈদ। সকালটা যেন অন্যদিনের মতোই। এখানকার অধিবাসীদের বেশিরভাগই ঈদ শব্দটার মানেই হয়তো জানে না।
যে দেশে থার্টিফার্স্ট নাইটের আতশবাজিতে ঘুমানো অসম্ভব, সেখানে ঈদের ছুটিতে বলতে গেলে সরকারি কোনো কালি খরচ হয়না। বড়দিনকে কেন্দ্র করে আলাতু স্কোয়ারে সংস্কৃতির মোড়কে ছেয়ে যায় পুরো অঞ্চল, সেখানে ঈদের আনন্দ এক নিষিদ্ধ মাকাল ফল।
গতানুগতিক অফিস আদালত স্কুল ভার্সিটি সবই চলতে থাকে আপন গতিতে। আমার ঈদও তাদের ভিড়ে হারিয়ে গেল বিমর্ষ ও বিবর্ণ হয়ে।
