অনেক তারকারাও মেতেছেন ঘিবলি স্টাইলে
গত সপ্তাহখানেক ধরে চেনা মানুষের ‘‘কার্টুন অবতার’’ দেখতে দেখতে অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই! ফুটবল খেলোয়াড় লিওনেল মেসি থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এমনকী আপনার পাশের বাড়ির বাসিন্দাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে ফেলেছেন নিজের কার্টুন ছবি! যার নাম ঘিবলি আর্ট। দেখেশুনে নতুন ট্রেন্ড-এ গা ভাসাতে ইচ্ছে হয়নি কি আপনারও? হয়তো খুঁজেও ফেলেছেন গুগ্লে। কীভাবে বানাবেন নিজের ঘিবলি অবতার। কিন্তু যা নিয়ে এত মাতামাতি, সেই ঘিবলি আসলে কী? কোথা থেকে এলো এমন নাম? সেই নামের অর্থই বা কি? কেন এবং কীভাবে জনপ্রিয় হলো ঘিবলি?
ঘিবলি কী?
ঘিবলি আসলে একটি অ্যানিমেশন স্টুডিয়োর নাম। যার জন্ম হয় ১৯৮৫ সালে, জাপানের টোকিয়োতে। উজ্জ্বল জলরং অথবা অ্যাক্রেলিক রং দিয়ে হাতে আঁকা হত ওই স্টুডিয়োর সমস্ত অ্যানিমেশন। খামখেয়ালি কল্পনায় আঁকা সেই সমস্ত ছবি থেকে ফুটে ওঠতো অজানা সুখানুভূতি। সম্ভবত সেই বিষয়টিই দর্শকদের মন টানে। জাপানের ওই অ্যানিমেশনের জনপ্রিয়তা জাপানের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছোয় অ্যানিমেশনের আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। ওয়াল্ট ডিজ়নি অংশীদারির প্রস্তাব দেয় ঘিবলি স্টুডিয়োকে। কার্টুন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ঘিবলি।
ঘিবলি নামের অর্থ কী?
ঘিবলি নামের নানা রকম অর্থ হয়। নানা দেশে এর ব্যবহারও রয়েছে। তবে ঘিবলি শব্দটির সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ পাওয়া যায় আরব দেশে। আরবি শব্দ ‘ঘিবলি’ ব্যবহার করা হয় সাহারা মরুভূমির উত্তপ্ত এবং শুষ্ক হাওয়াকে বোঝানোর জন্য। ঘিবলি স্টুডিওর তিন প্রতিষ্ঠাতার প্রধান যিনি, সেই জাপানি অ্যানিমেশন শিল্পী এবং চলচ্চিত্রকার হায়াও মিয়াজ়াকি অবশ্য ওই নাম বেছে নিয়েছিলেন ইটালির একটি বিমানের নাম থেকে।
জনপ্রিয়তা
ঘিবলির জনপ্রিয়তা কতখানি, তার একটি হিসেব দেখা যাক। গত ৩৮ বছরে হাতেগোনা ২২টি ছবি তৈরি করেছে ঘিবলি স্টুডিও। টেলিভিশনের জন্য বানিয়েছে ৩টি ছবি। আর সেই সব ছবির প্রত্যেকটিই অ্যানিমেশন দুনিয়ায় সমাদৃত। জাপানের যে প্রথম দশটি ছবি আজও ব্যবসা দেয় এবং সর্বকালের সেরা ব্যবসা করেছে, তার মধ্যে চারটিই এই ঘিবলি স্টুডিওতে তৈরি। ঘিবলির ছবি অস্কার, গোল্ডেন বিয়ার, বাফতা, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারও জিতেছে একাধিকবার।
২০২৪ সালের সেরা অ্যানিমেশন ছবির শিরোপা উঠেছে ঘিবলি স্টুডিওরই তৈরি ‘‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’’ ছবির মাথায়। ঘিবলির তৈরি ছবি ‘‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’’ হলো প্রথম নন-ইংলিশ অ্যানিমেশন ছবি যা মূল বিভাগে অস্কার জেতে। ২০২১ সালে ঘিবলির জনপ্রিয়তা দেখে টোকিওয় ঘিবলি মিউজ়িয়ামও তৈরি হয়। ঘিবলি দৌলতে মিয়াজাকি ২০২৪ সালে এশিয়ার ‘‘নোবেল প্রাইজ়’’ র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারও পান।
ঘিবলির ট্রেন্ড
সম্প্রতি ওপেন এআই-এর চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীরা দেখতে পান, তারা তাদের ছবি ঘিবলি অ্যানিমেশনে বদলে নিতে পারছেন। বিষয়টি জানার পরেই চ্যাটজিপিটির নতুন সুবিধাটি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। ওপেন এআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে নানা রকম ভাবনাচিন্তা করছিলেন তারা। সেই সময়েই ঘিবলি আর্টের কথা তাদের মাথায় আসে। ওই প্রযুক্তি প্রকাশ্যে আনার পরেই চাহিদা তুঙ্গে ওঠে চ্যাটজিপিটির। অল্টম্যানের কথায়, ঘিবলি ছবির চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে চ্যাটজিপিটির গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিটের এখন-তখন দশা। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করা হয়েছিল তা যে সফল হয়েছে, তাতে আমরা খুশি।
সূত্র; আনন্দবাজার