আলহাজ কামরুজ্জামান শিকদার কামাল
হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত । প্রত্যেক মুসলিমের স্বপ্ন থাকে জীবনে একবার হজ করার, আল্লাহর ঘর প্রদক্ষিণ করা ও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত করার। আমার বেশ কয়েকবার হাজিরা দেয়ার তাওফিক হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
হজ শারিরীক ইবাদত। সবরের জায়গা। কিন্তু মানবসৃষ্ট অব্যবস্থাপনার কস্ট মেনে নেওয়া কঠিন। এ বছর হজে বেশ কিছু অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ছে। আরাফা, মুজদালিফা বিশেষ করে মিনায় লক্ষাধিক হাজী চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। মুজদালিফা খোলা ময়দান বা জামারা থেকে দলছুট হাজীগণ ক্যাম্প চিনতে না পারার কারনে ক্লান্ত শ্রান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। অনেকে রাস্তায় জ্ঞান হারিয়েছেন, মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়।
আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, জামারায় যাওয়ার রাস্তাগুলোতে পর্যাপ্ত পানি এবং প্রত্যেক পয়েন্টে বিভিন্ন ভাষাভাষী স্বেচ্ছাসেবক থাকলে এই পরিস্থিতি হয়তো অনেকটাই এড়ানো যেত।
এমনকি এখন পর্যন্ত অনেকে লাগেজ বুঝে পাননি।
রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া সরকারী/বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। পথে ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানী স্বেচ্ছাসেবক দেখা গেলেও বাংলাদেশী সরকারী স্বেচ্ছাসেবক তেমন চোখে পড়েনি।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে হজযাত্রীদের জন্য কোন কার্যকারী হেল্পলাইন নেই। সহযোগিতামূলক আচরণের অভাব। বরং এই সময়ে হজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আচরণে ব্যবসায়িক স্বার্থের চিত্র ফুটে ওঠে। বিমান বাংলাদেশের সারাবছরের লোকসান হজ মওসুমে পোষানো সম্ভবত এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ মালুম।
কেন জানি মনে হয় , হজের মত মহান ইবাদত সৌদি সরকার, বাংলাদেশ সরকার ও মুয়াল্লিমদের জন্য নিরেট অর্থনৈতিক আয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২
এতো গেল দেশের কথা। বিদেশের মাটিতেও বিড়ম্বনার শেষ নেই।
সৌদি সরকার ও পুলিশ রাস্তা নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ হজ যাত্রীদের ডিপোর্ট করতেই ব্যস্ত। হজে বিলবোর্ডগুলোতে শুধুমাত্র লেখা- লা হাজ্জা ইল্লা তাশরীহ, মানে অনুমোদন ছাড়া হজ নয়। অথচ আল্লাহর ঘরের মেহমানদের স্বাগত জানানো, সেবামূলক তথ্য জানানো বিলবোর্ডগুলোর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল।
এই আধুনিক সময়ে এসেও আল্লাহর ঘরের মেহমানদের এই দুরবস্থা মেনে নেওয়া কঠিন।
এবার প্রতি এন্ট্রি ও বিভিন্ন পয়েন্টে কঠোর চেকিং ছিল। সৌদির নিজস্ব সংবাদ মতে, ৩ লক্ষ+ অনুমোদনহীন হাজিকে মক্কা থেকে ডিপোর্ট করা হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে কারান্তরীন করা হয়েছে।
অনুমোদন ছাড়া ট্রাভেল বা ওমরা ভিসায় হজ করলে খরচ ৭০% কমে যায়, সৌদি সরকারের আয়ও কমে যায়।
এবার ১৮ লক্ষ ৩৩ হাজার+ বৈধ হজযাত্রী হজ করেছেন, শুধুমাত্র হজ কেন্দ্রিক অর্থনীতির বাজার ১.৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। সৌদি সরকার তাদের অর্থনীতিকে ডাইভারসিভাইড করতে ভিশন ২০৩০ গ্রহণ করেছে। এতে ২০৩০ নাগাদ ৩ কোটি হজ/ওমরাযাত্রী এবং প্রায় ১৮ লক্ষ কোটি টাকা জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সৌদি সরকারের এখন হজ অর্থনীতির অন্যতম লক্ষ্য, এলিটদের জন্য প্রচন্ড ব্যয়বহুল ও বিলাসবহুল হজ/ওমরার ব্যবস্থা করা। অথচ হাজিদের সেবা করা ছিল আরবদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। হাজিদের সেবা যেমন পানি পান করানো, খাবার খাওয়ানো কর্পোরেট হয়ে গেছে, বিভিন্ন কোম্পানীকে সম্ভবত দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকলকে সহিহ সমঝ দান করুন । সকলের হজ কবুল করুন। আমিন।
লেখাটি ২০২৪ সালের পবিত্র হজের সময় প্রকাশিত হয়েছিল।