মুহাম্মাদ আইয়ুব
বহুত জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে পাক ভারত যুদ্ধের সূচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের কিছু অপদার্থ মিডিয়া এটাকে ধর্মযুদ্ধ আখ্যা দিচ্ছে। আর অতিউৎসাহী কিছু লোক ” গাযওয়াতুল হিন্দের ঘ্রাণ পাচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এক ঘোলাটে পরিবেশ।
এই পরিস্থিতিতে মুক্তমনে কিছু কথা পাঠক সমীপে রাখতে চাই।
১.
আট ন’মাস আগের কথা ; মাদ্রাসার গেইটে আমরা কয়েকজন বসা। বাচ্চাদের টিকা দেয়া শেষে কয়েকজন অভিভাবক চলে যাচ্ছিল।
গেইটের ভিতর আমাদের বসা দেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুই ভদ্রলোক এগিয়ে এলো। একজন অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করল,শুক্রবার মাইকে যিনি বয়ান করেন তিনি কি আছেন?
মাদ্রাসার সহ সভাপতি সাহেব আমার দিকে ইশারা করে বললেন, এই যে সেই হুজুর। তাদের একজন বিগলিত কন্ঠে বলল,আমি কি আপনার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে পারি?
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে বললাম, না না দরকার নাই।
তারা দুইজন সমস্বরে বলল, আপনার বয়ান আমাদের খুব ভালো লাগে,মন দিয়ে শুনি।
আল্লাহ পাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম, তাদের হেদায়েতের দোআ করলাম।
২.
আমি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনেছি। প্রায় ৬ মাস হতে চলল।
প্রথম প্রথম কয়েকটি দোকানে সারাইয়ের জন্য নিলেও ৪ মাস ধরে পাটকেল বাড়ি গণেশের কাছে নিয়ে যাই।
সে খুব যত্নসহকারে গাড়ি সার্ভিসিং করে । ব্যবহার দারুণ অমায়িক। প্রায়সময় আমাকে কেনাকাটা , মেরাকমতে যথেষ্ট ছাড় দেয়।
অন্যদের তুলনায় মনে হয় আমাকে অগ্রাধিকার দেয় একটু বেশি-ই।
মনে মনে খুশি হই, দোআ করি।
৩.
পরিবারে অসুস্থতার প্রকোপ দেখা দিলে ডা. সুনীল, গ্রাম্য ডাক্তার পরিমল,হোমিওপ্যাথী ডাক্তার প্রাণ ও চিন্ময়ের কাছে যাতায়াত হয়। এসব হিন্দু ধর্মাবলম্বী ডাক্তারদের সঙ্গে আন্তরিকতা, সখ্যতা গড়ে উঠেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
এবার আসি মূল কথায়।
উপমহাদেশে হিন্দু ভাইদের সাথে মহান মুসলিমদের সুসম্পর্ক শত শত বছর ধরে।ইতিহাস না হয় না ঘাটলাম আমি নিজেই তো ইতিহাসের অংশ।
তবে এই যে দাঙ্গা বা হাঙ্গামা, হিন্দু মুসলিম রাইট বা লড়াই এগুলো বিশেষ একশ্রেণীর বিশেষ চাওয়া যারা জাতিগত বিভেদ লাগিয়ে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়।
উপমহাদেশে দুটি দেশ ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে গেল। এতে গুটিকয়েক ধর্মবাজদের লাভ হয়েছে যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ধর্মকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে আর মাঝখানে প্রাণ গেছে নিরীহ শান্তশিষ্ট মানুষদের– যারা উপমহাদেশে শান্তি কামনা করেছিল , মিলেমিশে থাকতে চেয়েছিল।
যুদ্ধ কখনো শান্তি আনে না, আর বর্তমানের যে যুদ্ধ তাতে গায়ের জোর ছাড়া আর কোন কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
সুতরাং আমি এই যুদ্ধের তীব্র নিন্দা জানাই। উভয়পক্ষকে ধৈর্য্য ধরে শান্তি আলোচনার ভিত্তিতে সামনে এগোনোর পরামর্শ দিই।
যারা উস্কানি দিচ্ছে তাদের কেউ অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হতে চায়। ইদানীং শুরু হয়েছে সাবস্ক্রাইবার, ভিউয়ার কামাই করার ধান্দা। দিনশেষে সবাই যার যার আখের গোছাতে ব্যস্ত কিন্তু বেসামরিক বা সামরিক শান্তশিষ্ট লোকদের লাশ রাস্ট্র কাঁধে নিয়ে অভিনয় করতে চায় কিন্তু এতীম, বিধবা ও সন্তানহারা, ঘরবাড়িছাড়া লোকদের দায়িত্ব নিতে চায় না।
সুতরাং আমরা কোন গোয়ার্তমির যুদ্ধ চাই না। ধর্মের নামে অধর্মকে টেনে আনার সাম্প্রদায়িকতা চাই না।