Home ইসলামসকাল-সন্ধ্যায় রাসুল (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ ৬ আমল

সকাল-সন্ধ্যায় রাসুল (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ ৬ আমল

by MD JUNAYED SHEIKH

জীবন মানেই সংগ্রাম। কখনো অর্থনৈতিক সংকট, কখনো শারীরিক অসুস্থতা, আবার কখনো মানসিক অবসাদ কিংবা পারিবারিক কলহ। এ অবস্থায় একজন মুসলমানের প্রথম করণীয় হলো আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের রব বলেছেন—তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)

দোয়া শুধু একটি আমল নয়, এটি একজন মুমিনের আত্মিক জীবনরেখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়ার মাধ্যমেই জীবনের প্রতিটি কাজ শুরু করতেন এবং দোয়ার মাধ্যমেই সমাপ্ত করতেন। সকাল-সন্ধ্যার জীবনঘনিষ্ঠ দোয়াগুলো যদি সবাই গুরুত্ব দিয়ে আমল করে, তাহলে দৈনন্দিন জীবন হবে পরিশুদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত।

এখানে নির্বাচিত কয়েকটি দোয়া উল্লেখ করা হলো।

১. নিরাপত্তা লাভের দোয়া

প্রতিটি দিন নতুন সম্ভাবনা ও নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। দোয়ার মাধ্যমে একজন মুমিন তার দিনের সূচনা করে। এর মাধ্যমে আসমান-জমিনের সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত থাকা যায়।

উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়বে, সকাল পর্যন্ত তার ওপর কোনো আকস্মিক বিপদ আপতিত হবে না। দোয়াটি হলো—বিসমিল্লাহিল্লাজি লা-ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়া-হুয়াস সামিউল আলিম।’

অর্থ : আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নাম নিয়ে, যাঁর নাম নিলে জমিন ও আসমানের কিছু কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। আর যে ব্যক্তি সকালে এই দোয়া তিনবার পাঠ করবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো আকস্মিক বিপদ আপতিত হবে না।

(তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৮; আবু দাউদ, হাদিস : ৫০০০)

২. অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো প্রতিটি দোয়া রহমে পরিপূর্ণ, অপ্রতিরোধ্য ও নির্ভুল। এটি নিয়মিত পাঠ করা হলে জাদু, জিন, সাপ, বিচ্ছু বা যেকোনো প্রাকৃতিক বা অতিপ্রাকৃত অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাআলা হেফাজত করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! গত রাতে একটি বিচ্ছু আমাকে দংশন করলে আমি বড় কষ্ট পাচ্ছি। তিনি বলেন, যদি তুমি সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পাঠ করতে—আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তা—ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক, তাহলে সে তোমাকে কষ্ট দিতে পারত না। (মুসলিম, হাদিস : ৬৬৩২; তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৪)

৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হেফাজতের দোয়া

মানবশরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান তিনটি অঙ্গ দেহ, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি। এগুলোর সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হয়। সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিত এই আমল করতেন। এটি সুন্নাহর অনুসরণের এক নিখুঁত উদাহরণ। আব্দুর রহমান ইবনে আবু বাকরা (রহ.) একদা তাঁর পিতাকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আমার পিতা! আমি আপনাকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এই দোয়াটি তিনবার পাঠ করতে শুনি—আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সামই, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, এর কারণ কী?

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার দেহকে রোগমুক্ত রাখুন, আমার কান ও চোখকে রোগমুক্ত রাখুন, আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। জবাবে তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এই দোয়া পাঠ করতে শুনেছি। আমি তাঁর সুন্নতের ওপর আমল করতে পছন্দ করি। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০০২)

৪. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া

আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এভাবে সন্তুষ্টির কথা বলবে, তিনিও তাকে কিয়ামতের দিন সন্তুষ্ট করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেউ যদি সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পাঠ করে তাহলে আল্লাহর ওপর হক হয়ে যায় সেই ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করা—

রাদিতু বিল্লাহি রাব্বান, ওয়াবিল ইসলামি দ্বিনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যান।’

অর্থ : আমি রব হিসেবে আল্লাহর প্রতি, দ্বিন হিসেবে ইসলামের প্রতি আর নবী হিসেবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সন্তুষ্ট। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৯)

৫. দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়া   

দৈনন্দিন জীবনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির পথ আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন। অল্প সময়ে পড়া অল্প শব্দে পাওয়া যায় অফুরন্ত সুরক্ষা। ফজর ও মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর কারো সঙ্গে কথা বলার আগে এই দোয়া পাঠ করতে হয়। আবু দারদা (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলে

‘হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম’

(অর্থ : আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর ওপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব), আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে—চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে বলুক না কেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯৫)

৬. ঋণ পরিশোধের দোয়া

জীবনে দুশ্চিন্তা আর ঋণের ভার মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করে যে তার হৃদয়ে একটুও স্বস্তি থাকে না। হতাশা, অস্থিরতা আর ভেতরের অজানা এক ভয় জীবনের সব রং মুছে দেয়। এ অবস্থায় আল্লাহই একমাত্র সাহায্যকারী। তাই তাঁর কাছে দোয়া করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঋণ পরিশোধের জন্য সকাল ও সন্ধ্যায় এই দোয়া পাঠ করতে বলেছেন—

‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ-দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি তোমার নিকট দুর্বলতা ও অলসতা হতে আশ্রয় কামনা করছি, তোমার নিকট কাপুরুষতা ও কৃপণতা হতে নাজাত কামনা করছি এবং আমি তোমার নিকট ঋণভার ও মানুষের দুষ্ট প্রভাব হতে পরিত্রাণ চাচ্ছি। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৫৫)

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment