ঈমান হল ইসলামের একটি মৌলিক ধারণা যা বিশ্বাস, স্বীকৃতি এবং আনুগত্যকে বোঝায়। সহজ কথায়, ইমান হলো আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, নবী, কিতাব এবং পরকাল সম্পর্কে অন্তরের গভীর বিশ্বাস ও স্বীকৃতি এবং সে অনুযায়ী কাজ করা।
ঈমান দুই প্রকার ।
- ১ ঈমানে موجود (উপস্থিত)
- ২ ইমানে مقصود (উদ্দেশ্য)
ঈমানে মওজুদ প্রত্যেক জাতির ভিতরে আছে। প্রত্যেক জাতি বিশ্বাস করে যে -সৃষ্টিকর্তা আছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রিস্টান– প্রত্যেক জাতির মাঝে ঈমানে মওজুদ আছে। কিন্তু ঈমানে মওজুদ আল্লাহ তায়ালার নিকটে কোন গ্রহণযোগ্যতা রাখে না।
কারণ ঈমানে মওজুদ দ্বারা আল্লাহ তাআলাকে চেনা যায় না । বরং আল্লাহ তাআলার নিকটে গ্রহণযোগ্যতা রাখে ঈমানে মাকসুদ । আর ঈমানে মওজুদের পিছনে মেহনত করে ওই ঈমানকে ঈমানে মাকসুদ বানাতে হয়।
যে ঈমানের দ্বারা আল্লাহ তায়ালার খাজানা থেকে নেওয়া যায়, আল্লাহ তাআলার মারেফাত হাসিল হয় , যে ঈমানের দ্বারা আখেরাতকে বানানো যায় তাকে ঈমানে মাকসুদ বলে।
ঈমানে মাকসুদের জন্যই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলেন । তাঁরা এই ঈমানের পিছনে নবী-রাসূলগণ মেহনত করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম মেহনত করেছেন। দিনশেষে তাঁরা সকলে সফলকাম হয়েছেন ।
২
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ: أَنْ يَكُونَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلّا لِلهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ. অর্থঃ যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের স্বাদ পাবে :
- ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সব থেকে প্রিয় হওয়া।
- ২. কাউকে শুধু আল্লাহর জন্য মহব্বত করা।
- ৩. কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত ঘৃণ্য হওয়া। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬
হযরত সাহাবায়ে কেরাম তাদের ঈমানে মওজুদকে মেহনত করে ঈমানে মাকসুদ বানানোর কারণে ঈমানের দ্বারা তারা ইবাদতের মজা পেয়েছিলেন। কিন্তু আজ আমরা আমাদের ঈমানের দ্বারা স্বাদ পাই না। তার কারণ আমাদের ঈমান, ঈমানে মওজুদই রয়ে গেছে । আমাদের ঈমানকেও আমরা যখন ঈমানে মাকসুদ বানাবো, তখন আমরাও আমাদের ঈমানের দ্বারা ইবাদতে মজা পাব।
প্রত্যেক মুসলমানকে নিজেদের ঈমানে মওজুদ এর পিছনে মেহনত করে নিজেদের ঈমানকে ঈমানে মাকসুদ বানাতে হবে । আর ঈমানকে ঈমানে মাকসুদ বানানোর জন্য ঈমান ওয়ালাদের সংস্পর্শে থেকে ঈমানী মজলিসগুলোতে গিয়ে ঈমানের পিছনে মেহনত করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের ঈমানকে ঈমানে মাকসুদ বানানোর তৌফিক দান করুক আমিন। ইয়া রব্বাল আলামিন।
লেখকঃ ইমাম ও খতীব জুম্মাবাড়ি মসজিদ, উলপুর, গোপালগঞ্জ; শিক্ষক , ফজলুল উলুম মাদরাসা গোপালগঞ্জ