Home আন্তর্জাতিকগাজায় ত্রাণের জন্য হাহাকার ক্ষুধার্তদের ওপর গুলি

গাজায় ত্রাণের জন্য হাহাকার ক্ষুধার্তদের ওপর গুলি

by MD JUNAYED SHEIKH

ক্ষুধায় মরিয়া ফিলিস্তিনিরা বৃহস্পতিবার মধ্য গাজার দেইর আল বালাহতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ত্রাণ মজুতকেন্দ্র লুটপাট করেন। কেউ কেউ আটার বস্তা নিয়ে ফিরলেও অনেকে ছিলেন খালি হাতে এএফপি

খাবার নিয়ে আসা ১০ জনকে গুলি করে হত্যা

গাজায় ক্ষুধায় কাতর মানুষ ত্রাণ পেতে দলে দলে ভিড় করছেন বিতরণ কেন্দ্রে। সেখানে ঘটছে লুটের ঘটনা। ত্রাণ পেতে মরিয়া এসব ফিলিস্তিনির ওপর চালানো হচ্ছে গুলি। এতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর গুলিতে গত দু’দিনে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬২ জন। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় ত্রাণ গাজার সব মানুষের মধ্যে পৌঁছাচ্ছে না। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর গাজায় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো ত্রাণ যায়নি।

উপত্যকায় ত্রাণ বিতরণে এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতির অন্যতম কারণ মনে করা হচ্ছে ইসরায়েলের সহযোগিতায় তৈরি যুক্তরাষ্ট্রের কথিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের সংগঠনকে। এটি জাতিসংঘের বারণ অমান্য করে অস্ত্র হাতে ত্রাণ বিতরণে নেমেছে। কাউকে অপছন্দ হলেই গুলি করছে। জিএইচএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাজায় ক্ষুধার্তদের বিরুদ্ধে তারা ‘ত্রাণকে অস্ত্র বানাচ্ছে’। গাজার সরকারি তথ্য অফিস বলছে, ক্ষুধার্ত বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলি চালানো মার্কিন সংগঠন জিএইচএফের বর্বর অপরাধ। মানবাধিকারের নামে এটা লোকজনকে অপদস্থ করা, অভুক্ত রাখা কিংবা প্রয়োজনে হত্যার এক প্রকল্প।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলের একটি খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্রে দলে দলে ক্ষুধার্ত মানুষ হামলে পড়েন। এ সময় গুলিতে দু’জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-ঘাফারি কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ ঢুকে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যান। অনেককে ময়দার বস্তা ও খাবারের কার্টন নিয়ে যেতে দেখা গেছে। শোনা যায় গুলির আওয়াজও।
ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে জানায়, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। টানা প্রায় তিন মাস ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের পর গত সপ্তাহে সামান্য শিথিলতা এলেও উপত্যকায় খাদ্য ঘাটতি এখনও তীব্র। 

গাজায় অবিলম্বে খাদ্য সহায়তা বিপুল পরিমাণ বাড়ানো জরুরি।
এ অবস্থায় অভুক্ত মানুষের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এক সাংবাদিকসহ এক দিনে আরও ৬৩ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ১৮৪ জন। এর মধ্যে উত্তর গাজার জাবালিয়ায় বাস্তুচ্যুতদের ওপর বিমান হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৫৪ হাজার ২৪৯ জন নিহত ও ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৯২ জন আহত হন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গত ফেব্রুয়ারিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৮৬ জন নিহত হন।
গাজার সরকারি তথ্য অফিস জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত উপত্যকায় ২২১ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলের হামলায় আল-কুদস আল-ইয়ুম টিভি চ্যানেলের আলোকচিত্রী ও সম্পাদক মোয়াতাজ মোহাম্মদ রজব গাজা সিটিতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় আরও কয়েকজনের সঙ্গে নিহত হন। তথ্য অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের সাংবাদিকদের ‘পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু ও হত্যা’র নিন্দা জানিয়েছে। 

১,২০০ বিশিষ্টজনের চিঠি
ইসরায়েলের ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি শিক্ষাবিদ এক খোলা চিঠিতে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। চিঠিতে সইকারীদের মধ্যে ইসরায়েলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা রয়েছেন। তারা যুদ্ধ বন্ধে ‘কথা বলার’ ও পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। চিঠিতে সইকারী তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাফায়েল গ্রিনবার্গ আলজাজিরাকে বলেন, শিক্ষাবিদদের তাদের কণ্ঠস্বর শোনাতে হবে।
ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলো এরই মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। এ ছাড়া নিয়মিতই তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা জিম্মিদের মুক্ত করতে হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা বলছেন। বৃহস্পতিবারও তেল আবিবে যুদ্ধ বন্ধে নানা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসরায়েলিরা। 

ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির দাবি জোরালো হচ্ছে
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার মধ্যেই ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে জোরালো হয়ে সামনে আসছে। আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন ও স্লোভানিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকারের কথা নতুন করে জানিয়েছে। আগামী জুনে ফিলিস্তিন নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এই দেশগুলো দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবে। 

পশ্চিম তীরে নতুন ২২ বসতির অনুমোদন ইসরায়েলের
গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের ওপর দমনপীড়ন অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে ২২টি নতুন বসতির অনুমোদন দিয়েছে। এ বিষয়ে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ এটা ‘ভয়ংকর উস্কানি’ বলে মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাজ্য এ বসতি পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটা দ্বিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভাবনার বিরোধী।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment