দুই বছর বয়সী আলমা। গাজা সিটি, আল–রিমাল, ওমর আল–মুখতার সড়ক, মার্চ ২০২৫ছবি: ইউনিসেফের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
ফিলিস্তিনের গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর সেখানে ৫০ হাজারের বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি হুঁশিয়ার করে বলেছে, এ উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার মাত্রা দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে।
ইউনিসেফ গত মঙ্গলবার এ বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে আরও বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার সবচেয়ে বেশি মূল্য দিচ্ছে শিশুরা। সেখানে প্রতি ২০ মিনিটে গড়ে একটি শিশু হয় নিহত, না হয় আহত হচ্ছে।
ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘মারাত্মক লঙ্ঘন (আইনের)। অবরুদ্ধে ত্রাণ। ক্ষুধা। বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল—সব বিধ্বস্ত। এটা শৈশবকে ধ্বংস করা। জীবনেরই ধ্বংস। এরা শিশু—এরা সংখ্যা নয়। এভাবে কোনো শিশুর বেঁচে থাকার কথা নয়। আর একটি শিশুও নয়।’
বিবৃতিতে ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক এদুয়ার বেগবেদে বলেন, ‘এই (গত) সপ্তাহান্তে ৭২ ঘণ্টায় দুটি ভয়াবহ হামলার চিত্র গাজায় শিশুদের ওপর নির্মম যুদ্ধের অমানবিক মূল্য আরেকবার স্পষ্ট করে তুলেছে।’
গাজায় গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৯টি শিশু নিহত হয়েছে এবং ৩ হাজার ৭৩৮টি শিশু আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
‘শুক্রবার আমরা ভিডিওতে দেখেছি, খান ইউনিসে আল-নাজ্জার পরিবারের পোড়া ও ছিন্নভিন্ন শিশুদের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে টেনে বের করা হচ্ছে। ১২ বছরের নিচে ১০ ভাইবোনের মধ্যে শুধু একটি বেঁচে আছে বলে জানা গেছে, তা–ও গুরুতর আহত অবস্থায়।’
‘সোমবার ভোরে আমরা গাজা সিটির একটি জ্বলন্ত স্কুলে আটকে পড়া এক ছোট শিশুর ছবি দেখেছি। ভোরের ওই হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে ১৮টি শিশু।’
‘এই শিশুরা, যাদের জীবন কখনোই শুধু সংখ্যায় রূপান্তরিত হওয়ার কথা নয়, তারাই এখন এক দীর্ঘ, বিভীষিকাময় তালিকার অংশ হয়ে গেছে। শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর (মানবাধিকার) লঙ্ঘন করা হচ্ছে, ত্রাণ অবরুদ্ধ, ক্ষুধা, বারবার জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি ঘটছে এবং হাসপাতাল, পানি সরবরাহব্যবস্থা, স্কুল ও বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। মূলত গাজা উপত্যকায় জীবনই ধ্বংস হয়েছে।’
মারাত্মক লঙ্ঘন (আইনের)। অবরুদ্ধে ত্রাণ। ক্ষুধা। বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল—সব বিধ্বস্ত। এটা শৈশবকে ধ্বংস করা। জীবনেরই ধ্বংস। এরা শিশু—এরা সংখ্যা নয়। এভাবে কোনো শিশুর বেঁচে থাকার কথা নয়। আর একটি শিশুও নয়।
—ক্যাথরিন রাসেল, ইউনিসেফের প্রধান
‘১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি (ইসরায়েল ও হামাসের) শেষ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৯টি শিশু নিহত হয়েছে এবং ৩ হাজার ৭৩৮টি শিশু আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে মোট ৫০ হাজারের বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। আর কত শিশুর লাশ লাগবে? আর কত ভয়াবহতা সরাসরি সম্প্রচারিত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সত্যিকার অর্থে এগিয়ে আসবে, তাদের প্রভাব ব্যবহার করবে এবং এ নির্মম শিশু হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে সাহসী ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেবে?’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় মোট ৫০ হাজারের বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। আর কত শিশুর লাশ লাগবে? আর কত ভয়াবহতা সরাসরি সম্প্রচারিত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সত্যিকার অর্থে এগিয়ে আসবে, তাদের প্রভাব ব্যবহার করবে এবং এ নির্মম শিশু হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে সাহসী ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেবে?’
‘ইউনিসেফ আবারও সংঘাতরত পক্ষগুলোকে সহিংসতা বন্ধ, বেসামরিক নাগরিকদের—বিশেষ করে শিশুদের রক্ষা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানবিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানো, মানবিক সহায়তা অবিলম্বে প্রবেশের (গাজায়) অনুমতি এবং সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
‘গাজায় শিশুদের নিরাপত্তা দরকার। তাদের দরকার খাদ্য, পানি ও ওষুধ। তাদের দরকার যুদ্ধবিরতি। কিন্তু এর চেয়েও বেশি দরকার—এই নৃশংসতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে এখনই সম্মিলিত পদক্ষেপ।’