প্রতীকী ছবি
সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল কী দেখছি আমরা? রিলসের নামে যা চলছে, তা যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতা—কে কতটা উলঙ্গ হতে পারে, কে কতটা অশ্লীল হতে পারে, কে কত কম সময়ে বেশি ভিউ পেতে পারে। শুধু বিনোদনের নামে নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে শরীর দেখিয়ে, নৈতিকতার সব সীমা লঙ্ঘন করে মানুষের নজর কাড়ার যে চেষ্টা, তা আমাদের সমাজকে এক ভয়াবহ জায়গার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ভাবনার বিষয় হলো, যারা এসব ভিডিও বানাচ্ছেন, তারা কি একবারও নিজেদের সন্তান, পরিবার বা কাছের মানুষদের কথা ভাবছেন? ভাবছেন, এই কনটেন্ট তাদের সামনে গেলে তারা কী ভাববে, কী শিখবে? দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের অনেকের কাছে এখন আর এসবের কোনো গুরুত্ব নেই। বরং নিজেদের মা, স্বামী কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরাও এসব ভিডিও তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছেন বা নিজেরাই অংশ নিচ্ছেন।
তখন আর সমাজ বা পরিবারের চোখে কী দেখাবে—সে বিবেচনা যেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
আসলে টাকার মোহ আর খ্যাতির নেশায় আমরা ভুলে যাচ্ছি সামাজিক দায়বদ্ধতা। একটি মেয়ে যখন অশ্লীল পোজ দিচ্ছে, একটি ছেলে যখন বিকৃত রুচির ভিডিও বানাচ্ছে, তখন তারা শুধু নিজেরাই নষ্ট হচ্ছে না—পুরো সমাজকে বিষিয়ে দিচ্ছে। এখানে শুধু ব্যক্তির ব্যাপার নয়, এটি একটি প্রজন্মের মানসিকতার সংকট।
আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নৈতিকতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, অনেকেই এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ভিউ-ই সর্বস্ব। ভিউ মানেই টাকা, আর টাকা মানেই সাফল্য। এই একচোখা দর্শনে আমরা নীতি-নৈতিকতা, সংস্কৃতি, সামাজিক দায়বদ্ধতা—সব কিছুকেই জলাঞ্জলি দিচ্ছি।
যেখানে একসময় পরিবার মানে ছিল মমতা, লজ্জা, মূল্যবোধ—সেখানে এখন কিছু পরিবারের সদস্যই হয়ে উঠছে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরির সহযোগী।
প্রযুক্তি আমাদের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, কিন্তু সেটিকে আমরা যদি অন্ধভাবে শুধুই স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানাই, তাহলে সামাজিক অবক্ষয় অনিবার্য। আমাদের দরকার এখন সচেতনতা, আত্মসমালোচনা এবং দায়িত্বশীল ব্যবহার। ভিউয়ের পেছনে ছুটতে ছুটতে যদি আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলি, তাহলে যেটুকু জনপ্রিয়তা বা অর্থ আমরা অর্জন করি, সেটাও একদিন হয়ে উঠবে শূন্যতার প্রতীক।