বনি ইসরায়েলের অন্যতম নবী জাকারিয়া (আ.) ছিলেন হজরত সুলাইমান বিন দাউদ (আ.)-এর বংশধর। তিনি ছিলেন ইসা (আ.)-এর মা মরিয়ম (আ.)-এর তত্ত্বাবধায়ক। মরিয়ম (আ.) মসজিদের একটি কামরায় থাকতেন এবং আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। জাকারিয়া (আ.) মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। তিনি একটি বিষয়ে বারবার বিস্মিত হতেন—মরিয়ম (আ.)-এর ঘরে থাকত বাহারি ফলমূল, যেগুলোর মৌসুম তখন ছিল না। পরে তিনি জানতে পারেন, এগুলো ছিল আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের দান। (কাসাসুল কোরআন, মাওলানা হিফজুর রহমান, অনুবাদ: আবদুস সাত্তার আইনী, ১০/১৬)
জাকারিয়া (আ.)-এর কোনো সন্তান ছিল না। মরিয়ম (আ.)-এর ইবাদত ও আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের ঘটনা তাঁর মনে সন্তানের প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিল। তিনি চাইতেন, তাঁর সন্তানও নেককার হয় এবং আল্লাহ তাঁর জন্যও বাহারি খাবারের আয়োজন পাঠান।
‘আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে উত্তরাধিকারী দান করুন।’
(সুরা মরিয়ম, আয়াত: ২-৫)
এ ছাড়া সন্তান না থাকায় তিনি নবুয়তের আমানত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করতেন। তিনি ভয় করতেন, বিশ্বাসী মানুষ অবিশ্বাসী হয়ে পড়তে পারে। তাই তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান প্রার্থনা করেন। কোরআনে তাঁর এই প্রার্থনার কথা এসেছে: ‘হে পালনকর্তা, আমার হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। বার্ধক্যে আমার মাথা শুভ্র-উজ্জ্বল হয়েছে। হে আমার প্রতিপালক, আপনাকে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। আমি আশঙ্কা করি, আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে। আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে উত্তরাধিকারী দান করুন।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ২-৫)।
তখন জাকারিয়া (আ.) শতবর্ষী বৃদ্ধ। তাঁর হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছিল, কাশফুলের মতো চুল শুভ্র হয়ে গিয়েছিল। তাঁর স্ত্রীও ছিলেন বৃদ্ধ ও বন্ধ্যা। ইতিহাস বা তাফসির গ্রন্থে তাঁর স্ত্রীর নাম স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় না, তবে কেউ কেউ তাঁর নাম ‘ইশাআ’ বলেছেন। তিনি ছিলেন মরিয়ম (আ.)-এর মা হান্নাহর বোন। (কাসাসুল কোরআন, মাওলানা হিফজুর রহমান, অনুবাদ: আবদুস সাত্তার আইনী, ১০/১৫)
জাকারিয়া (আ.)-এর বৃদ্ধ বয়স এবং তাঁর স্ত্রীর বন্ধ্যাত্বের কারণে সন্তান লাভের কোনো স্বাভাবিক সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু তাঁর অটল বিশ্বাস ও ভরসা ছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর। তিনি বিশ্বাস করতেন, আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব। যিনি মৌসুম ছাড়াই ফল দিতে পারেন, তিনি বৃদ্ধ দম্পতিকেও সন্তান দিতে পারেন। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃষ্ঠা: ১৭৪)
সন্তান না থাকায় তিনি নবুয়তের আমানত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করতেন। তিনি ভয় করতেন, বিশ্বাসী মানুষ অবিশ্বাসী হয়ে পড়তে পারে। তাই তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান প্রার্থনা করেন।
তাঁর এই আকুতিভরা প্রার্থনা কোরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছে: ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮)
আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন এবং তাঁকে একটি পুত্রসন্তান দান করেন। আল্লাহ নিজেই সন্তানের নাম রাখেন ‘ইয়াহইয়া’। এ নাম এর আগে কেউ শোনেনি বা রাখেনি; এটি ছিল আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত। আল্লাহ জাকারিয়া (আ.)-কে সুসংবাদ দেন, ‘হে জাকারিয়া, আমি তোমাকে একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। এর আগে কাউকে আমি এ নাম দিইনি।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৭)
আল্লাহ জাকারিয়া (আ.)-এর পরিবারের ওপর বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। ইয়াহইয়া (আ.)-কে শৈশবেই জ্ঞান দান করেন, তাঁর হৃদয়কে করেন পবিত্র ও কোমল। ইয়াহইয়া (আ.) ছিলেন মুত্তাকি, পিতা-মাতার প্রতি অনুগত এবং উদ্ধত বা অবাধ্য ছিলেন না। আল্লাহ তাঁর প্রতি শান্তি নাজিল করেন।
কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ইয়াহইয়া, আপনি শক্ত করে কিতাব আঁকড়ে ধরুন। আমি তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম জ্ঞান। আমার কাছ থেকে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা। সে ছিল মুত্তাকি, পিতা-মাতার প্রতি অনুগত এবং সে ছিল না উদ্ধত ও অবাধ্য। তার প্রতি শান্তি যেদিন সে জন্ম লাভ করে, যেদিন সে জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবে।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ১২-১৫)
লেখক: আলেম