Home ভ্রমণভ্রমণগদ্য। পাহাড়ের চূড়ায় খোদার মহিমা

ভ্রমণগদ্য। পাহাড়ের চূড়ায় খোদার মহিমা

by MD JUNAYED SHEIKH
পাহাড়ের চূড়ায় খোদার মহিমা

আজ আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি সীতাকুণ্ড পাহাড়ে আমাদের এক অবিস্মরণীয় ভ্রমণের গল্প। আমরা তিন বন্ধু – রাশেদ, সাফয়ান আর আদিল – সবসময়ই প্রকৃতির মাঝে আল্লাহর নিদর্শন খুঁজে ফিরি। তাই ঠিক করলাম, এবার সীতাকুণ্ডের সবুজ পাহাড় আর তার নির্জন পরিবেশে আল্লাহর সৃষ্টিকে কাছ থেকে দেখব।

সীতাকুণ্ডের পথে যাত্রা

২০২৪ সালের এক শুভ্র সকাল। ফজরের নামাজ আদায় করে আমরা তিন বন্ধু রওনা হলাম সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে। মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি আর উত্তেজনা। আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে আর তাঁর উপর ভরসা করে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। পথে চলতে চলতে আমরা আল্লাহর মহিমা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কীভাবে তিনি এত সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, কীভাবে পাহাড়, নদী, সমুদ্র – সবকিছুই তাঁর কুদরতের নিদর্শন।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে

সীতাকুণ্ডে পৌঁছে আমরা প্রথমে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে পা বাড়ালাম। এই পাহাড়টি সীতাকুণ্ডের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পথটি বেশ দুর্গম, কিন্তু আমাদের মনে ছিল এক অদম্য স্পৃহা। আমরা মনে মনে পড়ছিলাম, “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” – আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তি নেই। এই দোয়া আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে শক্তি যোগাচ্ছিল।

পথের দু’পাশে ছিল সবুজের সমারোহ। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, পাখির কিচিরমিচির আর ঝিরিঝিরি বাতাস আমাদের মনকে সতেজ করে তুলছিল। রাশেদ বলছিল, “আল্লাহর সৃষ্টি কত বিচিত্র! প্রতিটি গাছের পাতায়, প্রতিটি ফুলের সুগন্ধে তাঁর অপার কুদরত বিদ্যমান।” সাফয়ান বলল, “হ্যাঁ, এই যে সবুজ প্রকৃতি, এটা আমাদের আল্লাহর এক বিরাট নিয়ামত। আমাদের উচিত এর কদর করা।”

চন্দ্রনাথ চূড়ায় আল্লাহর শুকরিয়া

অনেক কষ্ট করে আমরা যখন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছালাম, তখন এক অপার্থিব দৃশ্যের দেখা পেলাম। চারপাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়ের সারি। দিগন্তজুড়ে সবুজের মেলা। আর দূরে দেখা যাচ্ছিল বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি। সে এক অসাধারণ দৃশ্য! আল্লাহর এই অপার সৃষ্টি দেখে আমরা অভিভূত হয়ে পড়লাম।

আমরা সেজদায় লুটিয়ে পড়লাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য। আদিল বলল, “সুবহানাল্লাহ! আমাদের রবের সৃষ্টি কত সুন্দর! এই দৃশ্য দেখার পর মনে হচ্ছে যেন কিতাবে পড়া জান্নাতের বর্ণনার কিছু অংশ বাস্তবে দেখছি।” আমরা সেখানে বসে কিছুক্ষণ আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করলাম। মনে হলো, এই নির্জন পাহাড়ের চূড়ায় আল্লাহ আমাদের আরও কাছে।

ঝর্ণার অন্বেষণে

চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে নেমে আসার পর আমরা স্থানীয়দের কাছে ঝর্ণার কথা জানতে পারলাম। তারা বলল, আশেপাশে আরও কিছু সুন্দর ঝর্ণা আছে। আমরা ঠিক করলাম, সেদিকেও একটু ঘুরে আসব। আল্লাহর সৃষ্টিকে আরও কাছ থেকে দেখব।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে আমরা হাঁটতে লাগলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর আমরা এক মনোরম ঝর্ণার দেখা পেলাম। স্বচ্ছ পানির ধারা পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে নেমে আসছে, আর তার শব্দে চারপাশ মুখরিত। আমরা ঝর্ণার শীতল পানিতে হাত-মুখ ধুলাম। সাফয়ান বলল, “আল্লাহ তায়ালা কত সুন্দরভাবে পানির ব্যবস্থা করেছেন আমাদের জন্য। এই পানি দিয়ে আমরা পবিত্রতা অর্জন করি, তৃষ্ণা নিবারণ করি – সবকিছুই তাঁর দয়া।”

আমরা ঝর্ণার পাশে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। প্রকৃতিকে অনুভব করলাম। মনে হচ্ছিল, যেন প্রকৃতির প্রতিটি কণা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করছে।

প্রকৃতির পাঠশালা

আমাদের এই ভ্রমণ কেবল দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা ছিল না, বরং ছিল এক শিক্ষামূলক সফর। প্রকৃতির প্রতিটি ধূলিকণায়, প্রতিটি পাথরের ভাঁজে আমরা আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছি। রাশেদ বলছিল, “এই পাহাড়, এই ঝর্ণা, এই সমুদ্র – সবকিছুই আমাদের জন্য এক বিরাট পাঠশালা। আল্লাহ এখানে তাঁর পরিচয় তুলে ধরেছেন।”

আদিল বলল, “হ্যাঁ, কুরআনে আল্লাহ বারবার প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা করতে বলেছেন। এই যে পাহাড়, এটা আমাদের শেখায় কীভাবে দৃঢ় থাকতে হয়। এই যে ঝর্ণা, এটা শেখায় কীভাবে অবিরাম বয়ে যেতে হয়, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হয়।”

আমরা আলোচনা করছিলাম কীভাবে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত। পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, গাছ লাগানো, প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়া – এই সবই ঈমানের অংশ।

ফিরতি পথে এক ভিন্ন অনুভূতি

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। আমাদের ফিরতি পথে যাত্রা শুরু হলো। মন ছিল এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরা। আল্লাহর সৃষ্টির সান্নিধ্যে এসে আমাদের ঈমান আরও মজবুত হয়েছে। এই ভ্রমণ আমাদের শিখিয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা কেবল আসমানে নন, তিনি আমাদের চারপাশে, আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে বিদ্যমান।

আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম এই সুন্দর ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমাদের এই সীতাকুণ্ড ভ্রমণ ছিল এক ইমানী সফর, এক আত্মিক উন্নয়ন। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক ইমানী ভ্রমণ করব এবং আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তাঁর নিদর্শন খুঁজে ফিরব।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment