
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হেয়াৎ মামুদ ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন শিক্ষক মাহমুদুল হক। মঙ্গলবার দুপুরেছবি: মঈনুল ইসলাম
‘সংঘবদ্ধ চক্রান্তে’ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি হেয়াৎ মামুদ ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জুলাই আন্দোলনের একটি হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে নগরের হাজীরহাট থানা-পুলিশ। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি জামিনে কারামুক্ত হন। মাহমুদুল হক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মাহমুদুল হক বলেন, ২০১২ সালে দুজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। তখন দুজনকে চূড়ান্ত করা হয় ও দুজনকে অপেক্ষমাণ রাখা হয়। চূড়ান্ত তালিকার একজন চাকরিতে যোগদান না করলে নিয়মানুযায়ী তাঁকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে নিয়োগ দেয়নি। এ নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে যান এবং রায় নিয়ে ২০১৯ সালে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।
মাহমুদুল হক অভিযোগ করেন, অপেক্ষমাণ তালিকা জালিয়াতি করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ওই সময় তাঁর পদে অন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ পান। এর পর থেকে ওই শিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্ত করে আসছেন। তবে ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ করেননি মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, কে সেই ষড়যন্ত্রকারী, তা তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুক।
মাহমুদুল হক দাবি করেন, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সে সময় তাঁরা কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে ৭০৯ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন। ওই সময় জাতীয় পতাকা অবমাননার একটি মামলার বাদী তিনি। ওই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহসহ ১৯ জন অভিযুক্ত হন। এসব কারণে একটি সংঘবদ্ধ চক্রান্ত তাঁর বিরুদ্ধে তৈরি হয়েছিল।
মাহমুদুল হক বলেন, তিনি একজন অধিকারকর্মী। আবু সাঈদ হত্যার পর তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন, ফেসবুকে লিখেছিলেন। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অটোচালক মানিক হত্যা মামলায় তাঁকে ১৯ নম্বর আসামি করা হয়েছিল। রংপুর শহরে মাহমুদুল হক হত্যা মামলাতেও অভিযোগপত্রে তাঁর নাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা এভাবে ভিকটিম হচ্ছেন, মামলা বাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন, পুলিশকে টাকা দিচ্ছেন, মামলায় নাম দিতে, মামলায় নাম বাদ দিতে, অভিযোগপত্র নাম দিতে, অভিযোগপত্র নাম বাদ দিতে টাকা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন, কারাগারে গিয়ে তাঁদের যন্ত্রণা বুঝেছি। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে পরিবারকে নিঃস্ব করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।’
মাহমুদুল হক ‘মিথ্যা ও ভুয়া’ মামলাগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের যে আচরণ দেখেছি দীর্ঘ সময়ে, সেই পুলিশের আচরণ এখনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা পুলিশের সংস্কার চাই। সংস্কার না হলে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারব না, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব না।’
নিজের বিরুদ্ধে হওয়া দুটি মামলাকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক উল্লেখ করে মামলা দুটি থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান মাহমুদুল হক। একই সঙ্গে ‘হয়রানিমূলক ও প্রতিহিংসামূলক’ মামলায় গ্রেপ্তার করায় হাজীরহাট থানার সাবেক ওসি আবদুল আল মামুন শাহকে প্রত্যাহার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এ ঘটনার তদন্ত করে তাঁকে গ্রেপ্তারের পেছনে কারা কারা জড়িত ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, ‘তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা না হলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব এবং ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।’