রান ও রাশিয়ার পতাকা |আল জাজিরা
ইরান যুদ্ধে সমঝোতা হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরাইল ও ইরান একে অপরের বিরুদ্ধে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। তারা দাবি করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির হুমকি নিরসন করার জন্য তারা এই অভিযান শুরু করে। তবে ইরানের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে চালানো তাদের এই বহুমুখী বিমান হামলা ও হত্যাকাণ্ড তেহরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের বৃহত্তর লক্ষ্যকে নির্দেশ করে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানি জনগণকে শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উৎসাহিত করেন এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এই উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেন।
কয়েকদিনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়। শুধু রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা নয়, ২২ জুন ভোরে মার্কিন বাহিনী ইরানের ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়। এর জবাবে তেহরান কাতারে অবস্থিত আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে প্রতিক্রিয়া জানায়।
যুদ্ধবিরতির পর ইরান এক বৃহৎ ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পেয়েছে বলেই মনে হয়। যদিও নেতৃত্ব ও সামরিক-পরমাণবিক অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও ইরান প্রতিরোধের সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানোর সামর্থ্য বজায় রেখেছে।
তবে এই সঙ্ঘাতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই যুদ্ধে ইরান কার্যত একাই ছিল। তাদের কথিত মিত্র, বিশেষ করে মস্কো, প্রকৃতপক্ষে কোনো সহায়তাই করেনি। রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনিষ্ঠ জোট থাকলেও রাশিয়ার অবস্থান ছিল নীরব ও সীমিত। পুতিনসহ রুশ কর্মকর্তারা শুধু আনুষ্ঠানিক নিন্দা জানিয়েই ক্ষ্যান্ত থেকেছেন।
তাদের এমন অবস্থান বহু প্রশ্নের জন্ম দেয়- কেন মস্কো এই সঙ্ঘাতে জড়ায়নি? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এক মিত্রকে কার্যত পরিত্যাগ করেছে রাশিয়া? রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র দ্য গার্ডিয়ানকে জানায়, যদি বর্তমান ইরানি শাসনব্যবস্থা পতিত হয়, তবে তা রাশিয়ার বৈশ্বিক অবস্থান ও সুনামের জন্য একটি বিপর্যয় হবে।
রাশিয়া কি ‘ব্যর্থ’ মিত্র?
সাম্প্রতিক সংঘাতে রাশিয়ার অবস্থান অনেকের কাছেই বিস্ময়কর ছিল। অনেকে আশা করেছিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও কর্মকর্তারা কঠোর হুমকি দেবেন এবং তেহরানকে উল্লেখযোগ্য সামরিক সহায়তা প্রদান করবেন। বিশেষ করে এখন যেহেতু সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের কয়েক বছরের মধ্যে ইরানের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারানো মস্কোর পক্ষে সহজ নয়, তাই এই আশাটা আরো জোরালো ছিল। তবে রাশিয়া এক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বেছে নিয়েছে। নিজেকে তারা উপদেষ্টা, সংস্কারক এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
ইসরাইলি হামলার পর ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায় এবং ইরানি জনগণ ও নেতৃত্বের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে। রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসঙ্ঘ সনদের লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে এক ফোনালাপেও রুশ প্রেসিডেন্ট ইসরাইলি অভিযানের বিরোধিতা করেন।
এর পাশাপাশি, যখন মার্কিন হস্তক্ষেপের গুঞ্জন ছড়ায়, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সঙ্ঘাতে জড়িত না হতে সতর্ক করে। উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, এমন হামলা মধ্যপ্রাচ্যকে গুরুতরভাবে অস্থিতিশীল করতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার নিন্দা করেন।
সঙ্ঘাত শুরুর পর পুতিন বলেন, তিনি ইরান, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। তবে তার বক্তব্য ছিল ঠান্ডা স্বরের, ইরানের প্রতি প্রত্যাশিত দৃঢ় সমর্থনের অভাব ছিল। তিনি বলেন, তিনি কাউকে কিছু চাপিয়ে দেবেন না। সমাধানের পথ কেবল সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নির্ধারণ করতে হবে।
সবচেয়ে জোরালো বিবৃতিগুলোর মধ্যে একটি ছিল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের বক্তব্য। যেখানে তিনি বলেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের যেকোনো প্রচেষ্টা অগ্রহণযোগ্য। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি সুপ্রিম লিডার খামেনিকে হত্যা করা হয়, তাহলে রাশিয়া ‘অত্যন্ত নেতিবাচক’ প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তবে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে, এ প্রশ্নে তিনি নিরুত্তর ছিলেন। তিনি বরং বলেন, ইরানের অভ্যন্তর থেকে প্রতিক্রিয়া আসবে এবং এই ঘটনা চরমপন্থার উত্থান ঘটাতে পারে।
এছাড়া, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দিমিত্রি মেদভেদেভ একপর্যায়ে হুঁশিয়ারি দেন যে তৃতীয় দেশগুলো ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। তবে তিনি কোনো দেশ চিহ্নিত করেননি। রুশ কর্মকর্তারা এই মন্তব্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানান। ট্রাম্প এ বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
এই আচরণে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলে পূর্বেই পূর্বাভাস দিয়েছিল, রাশিয়া ইরানের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বে থাকলেও সামরিক সহায়তা দেবে না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান রাশিয়াকে ড্রোন ও গোলাবারুদ সরবরাহ করলেও মস্কো তার বিনিময়ে তেমন কিছু দেয়নি।
দুই দেশই ব্রিকস জোটের অংশ এবং উভয়ই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে। তবুও ইরান একাধিকবার রাশিয়ার কাছ থেকে শীতল আচরণ পেয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়া তার এস-৩০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় না করে ইসরাইলকে ইরানি মিলিশিয়াদের উপর হামলা চালাতে দিয়েছিল। ইরান বিষয়টি চুপচাপ মেনে নেয় যৌথ স্বার্থের খাতিরে।
এশিয়া টাইমস জানায়, রাশিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে এক চুক্তির আওতায় এই নীরব সম্মতি ছিল, যাতে ইসরাইল রুশ অবস্থান আক্রমণ না করার বিনিময়ে রাশিয়া ইরানিদের উপর হামলা ঠেকাতে তার অস্ত্র ব্যবহার করবে না। এই বাস্তবতা থেকেই এশিয়া টাইমস মন্তব্য করে, রাশিয়া বরাবরই ইরানের এক অবিশ্বস্ত মিত্র। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের চাপে পড়ে রাশিয়া তেহরানের কাছে এস-৩০০ বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
ফিলিস্তিনে ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর প্রতিরোধ অভিযানের পর ইরান দাবি করে যে তারা রাশিয়া থেকে সুখোই সু-৩৫ যুদ্ধবিমান, এমআই-২৮ হেলিকপ্টার, এস-৪০০ সিস্টেম এবং ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান পাবে। বাস্তবে তারা কেবল প্রশিক্ষণ বিমান পেয়েছে। গবেষক নিকোল গ্রেভস্কি জানান, উৎপাদন সমস্যার পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলোর চাপেই রাশিয়া ইরানের কাছে সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ আটকে দেয়।
২০২৪ সালের অক্টোবরে ইসরাইলি হামলায় ইরানের সেরা রুশ-সরবরাহকৃত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হলে মস্কো নতুন সরঞ্জাম সরবরাহে অক্ষম বা অনিচ্ছুক বলে প্রতীয়মান হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সরাসরি সহায়তার অনুরোধ করলেও রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দেয়নি। পুতিন বলেছিলেন, ইরানের আগ্রহ কমে গেছে এবং তারা নতুন অনুরোধ করেনি।
প্রশ্ন থাকে, কেন রাশিয়া তার কৌশলগত মিত্র ইরানের প্রতি এমন নিরাসক্ত আচরণ করে? কেন পুতিন ইরানের যুদ্ধে সমর্থন দিতে এবং আগাম অস্ত্র সরবরাহে অনিচ্ছুক ছিলেন, যখন বাস্তবতা বলছে, ইরান রাশিয়ার একমাত্র বলিষ্ঠ পার্টনারদের একটি?
ব্যর্থতার গোপন রহস্য
গত জানুয়ারিতে ইরান ও রাশিয়া একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা পরে রাশিয়ার সংসদ এবং ২১ মে ইরানের সংসদে অনুমোদিত হয়। তবে এই পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি কোনো পক্ষকে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণের পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলকভাবে সহায়তা করতে বলে না; বরং শর্ত দেয় যে তারা যেন আক্রমণকারী রাষ্ট্রকে সহায়তা না করে। কিন্তু এই সীমিত বাধ্যবাধকতার বাইরেও রাশিয়া ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলি যুদ্ধে একধরনের স্বার্থ খুঁজে পেয়েছে বলে মনে হয়। অথবা অন্তত এমন কিছু দেখেনি যা তাকে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপে উদ্বুদ্ধ করতো।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, এই যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে কাজ করেছে। ইউরোপ ও আমেরিকার দৃষ্টি ইরানের দিকে সরিয়ে আনা ইউক্রেন ফ্রন্টে রাশিয়ার জন্য একধরনের ‘বিনামূল্যের সুবিধা’ তৈরি করে। এই সুযোগে মস্কো কিয়েভে কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালায়, যাতে ১৪ জন নিহত ও বহু আহত হয়।
ইরানের বিষয়ে রাশিয়ার সতর্ক অবস্থান ব্যাখ্যার প্রধান কারণগুলোর একটি ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া ইউক্রেনকে এই সময়ের প্রধান যুদ্ধ হিসেবে দেখে এবং এটিকে জয় করাই তাদের মূল লক্ষ্য। ফলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে মনোযোগ সরিয়ে অন্য কোথাও সম্পদ বিনিয়োগে আগ্রহী নয়।
এই মনোযোগ একাগ্রতার কারণে রাশিয়া দূরবর্তী মিত্রদের সহায়তা দিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে। যেমন আর্মেনিয়ার ক্ষেত্রেও রাশিয়া একই আচরণ করে, যদিও উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে। ২০২৩ সালে আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাখ আক্রমণ করলে মস্কো কোনো সহায়তা দেয়নি, যার ফলে আর্মেনিয়া আমূল পরিবর্তন এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এমনকি সিরিয়ায়ও যখন আসাদ সরকার পতনের মুখে পড়ে, তখন পুতিন শুধু তাকে ও তার পরিবারকে আশ্রয় দেন। সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও সে সময় সরাসরি হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, রাশিয়া তার ভৌগোলিক সীমার বাইরে সঙ্ঘাতে সম্পদ বিনিয়োগে এখন অনেক বেশি সংযত।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধে শুরুর দিকে ইরান রাশিয়াকে ড্রোন ও প্রশিক্ষক সরবরাহ করেছিল, এমনকি উরাল পর্বতমালায় ইরানি প্রযুক্তিনির্ভর একটি ড্রোন উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু বর্তমানে রাশিয়া নিজস্ব ড্রোন উৎপাদনে সক্ষম এবং উপকরণ আমদানিতে ইরানের ওপর নির্ভর করে না। ফলে মস্কোর জন্য তেহরানের গুরুত্ব অনেকটা কমে গেছে।
এছাড়া, টাইম ম্যাগাজিন জানায়, ইরানের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাত রাশিয়ার জন্য স্বল্পমেয়াদে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার তেলের দাম ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়, যা ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যয়ের চাপ সামলাতে মস্কোর জন্য তাৎক্ষণিক স্বস্তি আনে। যদি ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে, তেলমূল্য আরো বাড়তে পারে, যা রাশিয়ার পক্ষে সুবিধাজনক।
তবে এ মানে এই নয় যে রাশিয়া ইরানকে হারাতে চায়, কিংবা তার সামরিক কাঠামো ধ্বংসে আগ্রহী। বরং রাশিয়া এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে আটকে আছে, যেখানে ইরানকে সমান অংশীদার হিসেবে গণ্য করতে গিয়ে সরাসরি জড়াতে সংকোচ বোধ করে। এর ফলেই ইসরাইলি আগ্রাসন ও ইরানি প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে রাশিয়ার নীতি ‘অর্ধ-বেকড’ বা দ্ব্যর্থবোধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, রাশিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। দ্য গার্ডিয়ান সূত্রে জানা যায়, রাশিয়া ইরানের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায় না। তারা যতদূর যেতে রাজি, তা হলো কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখা। কিন্তু এমন কিছু না করা, যা মার্কিন-রুশ সম্পর্ককে বিঘ্নিত করতে পারে বা ইউক্রেন বিষয়ে ট্রাম্পের মনোভাব বদলে দেয়।
দ্য আটলান্টিক বিশ্লেষণ করে জানায়, এই সতর্ক সমর্থনের পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। রাশিয়া শুরু থেকেই ইরানের শাসনের প্রতি সমর্থনের একটা সীমা নির্ধারণ করেছে এবং উন্নত অস্ত্র বা প্রতিরক্ষা সরবরাহে বরাবরই ধীরগতি দেখিয়েছে। তারা জানে, এই সহযোগিতারও একটা ‘রেড লাইন’ আছে, যা পার করা রাশিয়ার বৃহত্তর স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। রাশিয়া উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহী, যারা এখনো ইরানকে হুমকি হিসেবেই দেখে।
ইসরাইলের সাথেও রাশিয়া সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে, যদিও এ সম্পর্ক বহুবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষত সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ইসরাইলে বহু ইহুদির অভিবাসনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে।
রাশিয়া ওপেক-এর সাথে সমন্বয় করে তেলের বাজারে প্রভাব রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আরেকটি কারণ। এসব বিবেচনায় রাশিয়া ইরানকে এমন সহায়তা দিতে চায় না, যা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো পক্ষকে উসকে দিতে পারে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, রাশিয়া ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বিষয়ে কখনোই উৎসাহী ছিল না। ইরান আসাদ-নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার মতো নয়। এটি একটি উচ্চাভিলাষী রাষ্ট্র, যার নিজস্ব প্রকল্প ও কৌশল আছে। পারমাণবিক শক্তিধর হলে ইরান কেবল মধ্যপ্রাচ্যে নয়, মধ্য এশিয়াতেও রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।
শেষত, পুতিন হয়তো মনে করেন, সিরিয়ার মতো পূর্ণাঙ্গ হস্তক্ষেপ ছাড়া ইরানকে সহায়তা দিলেও যুদ্ধের গতিপথ বদলানো সম্ভব নয়। এমন সহায়তা রাশিয়াকে দুর্বল দেখাতে পারে, বিশেষ করে যখন তেহরান ও তার ‘অক্ষ’ বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। তাই মস্কো হয়তো আবারো ‘হারানো ঘোড়ায়’ বাজি ধরতে চাইছে না, যেমনটা সিরিয়ায় করেছিল। পুতিনের কাছে মিত্রকে ত্যাগ করার রাজনৈতিক মূল্য হয়তো যুদ্ধ জয়ের অনিশ্চিত মূল্যের চেয়ে কম।
আল জাজিরা