চাকরি বা খেদমত জীবনের আটটি বসন্ত পার করে ফেললাম। দুটি মাদ্রাসা দুটি মসজিদ এই তো গতানুগতিক জীবন। অবশ্য এর বাইরে অকল্পনীয়ভাবে আল্লাহ পাক দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে দিয়েছেন যতবার ভাবি ততবার মুখ ফুড়ে বেরিয়ে আসে “ আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কুল্লুহু আল্লাহুম্মা লাকাশ শুকরু কুল্লুহু”
“দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ” ও “মনোয়ারা জালালউদ্দিন ফাউন্ডেশন” আমার কাছে দুটি সুরভিত ফুল। একসাথে পথচলা যথাক্রমে পাঁচ বছর ও চার বছর। দ্বীনিয়াতের সন্ধান দিয়েছিলেন আমার প্রিয় উস্তায হাফেজ মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন আর “মনোয়ারা জালালউদ্দিন ফাউন্ডেশনের দ্বারা আমাকে কাজের সুযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শ্রদ্ধাভাজন জনাব মো: কামরুজ্জামান শিকদার (কামাল)
“দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ” এর প্রধান মুফতি সালমান সাহেবের সান্নিধ্যে গিয়ে আমি নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে ধীরে ধীরে অবগত হতে শুরু করলাম। গুণী এই মানূষটির কাছে আমি চীর কৃতজ্ঞ। চিন্তার বৈচিত্র্য ও উম্মাহর প্রতি দায়িত্ববোধ তাঁর সাহচর্যে এসে বুঝেছি। উম্মাহর কল্যান,দ্বীনের প্রতি মমত্ববোধ ছাড়া শায়খের অভিধানে দ্বিতীয় কোন শব্দ নেই।
একবার শায়খের সাথে উত্তরবঙ্গ সফরে গেলাম। সেদিন কর্মসূচী ছিল লালমনিরহাট মাওলানা হুসাইন সাহেবের মাদ্রাসায় । অনেক উলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন ,গরম পড়েছিল বেশ । হঠাৎ বিদুৎ চলে যাওয়াও কনফারেন্স রুমটা যেন জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড। কিন্ত ঊলামায়ে কেরামদের সামনে পেয়ে উম্মতকে দ্বীন শিখানোর প্রয়োজনীয়তা বলতে বলতে তিনি ঘেমে নেয়ে উঠলেন। উম্মতের দরদে মাঝে মাঝে ছোট শিশুদের মত কান্না করছিলেন। আল্লামা আলী মিয়া নদভী ও মাওলানা মনজুর নো’মানী রহ: এর উক্তি শুনিয়ে শুনিয়ে আলেমদের সতর্ক করছিলেন। অবাক বিষ্ময়ে সেদিন তাকিয়ে ছিলাম শায়খের দিকে ।পড়ন্ত এই যুগে ও মুসলিম উম্মাহর জন্য এমন ব্যকুল প্রাণের সান্নিধ্য পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল।
“দ্বীনিয়াত বাংলাদেশ” কাজ করে দেশের ৯৮% মুসলমানদের দ্বীন শিক্ষার টার্গেট নিয়ে।দেশের ৬৪ জেলায় দ্বীনিয়াতের কাজ চলমান বিশেষ করে স্কুল কলেজ ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী,যুবক বয়ষ্ক নারী পুরুষদের। এ ক্ষেত্রে মুফতি সালমান সাহেবের যোগ্য নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে বহুদূর। দ্বীনিয়াতের একজন স্বেচ্ছাসেবক হতে পেরে মনে হয় এটা আমার কোন এক দোআয় কাকুতি করা মহান আল্লাহর অনুদান।
এবার আসি অপর ফুল “মনোয়ারা জালালউদ্দিন ফাউন্ডেশন” এর আলেচনায়। একান্ত ঘরোয় মিটিংয়ে জন্ম নেওয়া “মনোয়ারা জালালউদ্দিন ফাউন্ডেশন” মাত্র চার বছরে গোটা বাংলাদেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে পৌঁছে যাওয়া ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সাথে ছিল হাজার হাজার পিছ কুরআন বিতরণ,বয়ষ্ক মাদ্রাসা,প্রাইমারি ও হাইস্কুল দ্বীন শিক্ষা,আদর্শ পাঠাগার,ওমরাহ প্রোগ্রাম,বৃক্ষরোপন কর্মসূচী সহ আরো কত কি!
যে গুণী মানুষটি ফাউন্ডেশনের প্রাণ তিনি মো: কামরুজ্জামান শিকদার (কামাল) চুপচাপ নিরহংকারী,ভদ্র মানুষটির যত কাছাকাছি হয়েছি ততই তাঁর মহানুভবতা.আন্তরিকতা আল্লাহর প্রতি,নবীর প্রতি ও ইসলাম ধর্মের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা অনুভব করেছি। ভালো কাজে অনুদানের ব্যাপারে তাঁর অভিধানে কোন “না” শব্দ নেই।
তাঁর উদার মনের ছোট্ট একটি উদাহরণ হল, দ্বীন ও মানবতার কল্যানে গত ৪ বছর তিনি ৫০ লক্ষ টাকার উপর ব্যয় করেছেন এবং যতদিন বেঁচে থাকবেন দেশ ও জাতীর কল্যানে এভাবে এগিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ পাক তাঁর মনের সকল আশা কবুল করুন।
জরূরী যে কোন কাজ নিয়ে গিয়েছি বিনা বাক্যে সম্মতি জানিয়েছেন,সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন, নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছেন। ২১ শতকে এসেছে ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ এ মানুষটির সাক্ষাত পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়।
গতানুগতিক খেদমতের বাহিরে গিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠান ও দুজন ব্যক্তির সাক্ষাত সান্নিধ্য আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়,দেশ জাতির কল্যানে অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত করে। তাই আমি আরো কয়েকদিন ভালো কাজের জন্য বাঁচতে চাই। আল্লাহুম্মা আমিন।
গাহওয়ার কাপে চুমুক দিতে দিতে কা’বার আঙিনায় মুফতি সালমান সাহেব ও জনাব কামরুজ্জামান সাহেব মুসলিম উম্মাহর জটিল কোন সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত আর আমি বসে আছি তাঁদের সাথে সাথে আল্লাহর রহমত লাভের আশায়। এমন একটি সুন্দর মুহুর্ত দেখার অপেক্ষায়।