রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত অভিভাবক রজনী খাতুনের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা। এ সময় রজনী খাতুনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ এবং দোয়া করা হয়।
বিমান বাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে উইং কমান্ডার কামরুল হাসান বারী ও উইং কমান্ডার মোনালিসার নেতৃত্বে বিমান বাহিনীর একটি দল শুক্রবার জুমা নামাজের পর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সাদিপুর গ্রামের নিহতের কবরে গিয়ে গার্ড অব অনার ও কবরে পুষ্পামাল্য নিবেদন করেন।
কবরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা নিহত রজনী খাতুনের স্বামী জহুরুল ইসলামসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য ও তার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেন। বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা প্রায় আড়াই ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন এবং নিহতের পরিবারের নিকট থেকে ঘটনার বিবরণ শুনেন এবং তাদের সমবেদনা জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী, দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোলায়মান শেখসহ মরহুমের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা রজনী খাতুনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন এবং বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে এতিমদের খাবার খাওয়ানো হয়।
উইং কমান্ডার কামরুল হাসান বারী বলেন, মাইলস্টোন স্কুলে দুর্ঘটনায় নিহত অভিভাবক রজনী খাতুনের বাড়িতে আমরা যাই। বিমান বাহিনীর প্রধানের পক্ষ থেকে নিহতের কবরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করি এবং এতিমদের খাবার খাওয়ানো করা হয়। শোকসন্তপ্ত পরিবার ও ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা হয় এবং তাদের সমবেদনা জানানো হয়।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান নিহত রজনীর কবরে বিমান বাহিনীর প্রধানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে বাহিনীর কর্মকর্তারা নিহতের বাড়িতে যান। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি তাদের সঙ্গে ছিলাম।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তার বাড়িতে যান দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। পরে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা নিহতের কবর জিয়ারত ও দোয়া করা হয়।
মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে রাজধানী ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া রজনী খাতুন। দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সাদিপুর গ্রামে জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
রজনীর স্বামী জহিরুল ইসলামের ব্যবসায়িক সূত্রে স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন। বড় ছেলে রোবাই ইসলাম এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী দিচ্ছেন। মেজো ছেলে রোহান ইসলাম মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে ও মেয়ে জুমজুম ইসলাম একই স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের দুজনকেই বাসা থেকে স্কুলে আনা নেওয়া করতেন রজনী খাতুন। রোহান অসুস্থ থাকায় দুর্ঘটনার দিন সে স্কুলে যায়নি। দুৃর্ঘটনার দিন ছুটির আগে মেয়ে মেয়ে জুমজুমকে আনতে স্কুলে যান রজনী। বিমান বিধ্বংস হওয়ার পর শিশু কন্যাকে বাঁচাতে শ্রেণী কক্ষের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। রজনী ভেবেছিলেন তার বাচ্চা শ্রেণিকক্ষেই রয়েছে। কিন্তু জুমজুম দুর্ঘটনার আগেই স্কুলের বাইরে বের হয়ে আসে। মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। দুর্ঘটনায় শিশুটি রক্ষা পেলেও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা সিএমএস হাসপাতালের বার্ন ইউনিটি ইউনিটে মারা যান রজনী।