Home ভ্রমণসিরাতসংখ্যা। নবীজীর দুয়ারে কাঙালের হাজিরি

সিরাতসংখ্যা। নবীজীর দুয়ারে কাঙালের হাজিরি

by .
সিরাতসংখ্যা। নবীজীর দুয়ারে কাঙালের হাজিরি

২৫ জুলাই ২৫ পবিত্র শুক্রবার ঘড়ির কাটায় সকাল ৬ঃ০৫ এক বুক আশা নিয়ে বাবুস সালাম দিয়ে প্রবেশ করলাম পেয়ারা নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায় দুরূদ ও সালাম পেশ করার জন্য। মাঝে কেটে গেছে ১৪ টি মাস। পরিপূর্ণ আদব ভদ্রতা বজায় রেখে ভিতরে ঢুকলাম কিন্তু একটা ভয় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমি মনে হয় নবীজীর অনেক দূরে। যারা নিয়মিত সুন্নত আদায় করে, দৈনন্দিন দুরূদ শরীফের আমল করে তারা অবশ্যই নবীজীর কাছাকাছি অবস্থান করছে কিন্তু আমি যে সবখানেই অকৃতকার্য।

হারামাইন শরিফাইনের নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই সেনাবাহিনীর হাতে। ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে তারা আমাকে একদম ডান দিকে চাপিয়ে দিল তারমানে নবীজীর রওজা থেকে দশ বারো হাত দূরে। শুরুতেই মনটা বিষন্ন হল।এমনিতেই আমলে পিছিয়ে আবার যদি ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকে তাহলে তো আম ছালা সব গেল। কি আর করা সৌদি পুলিশকে ডিঙানো বড্ড অসাধ্য কারবার। দুরুদ শরীফ জপতে জপতে এগোতে থাকলাম।

যত এগোচ্ছি ততই মনটা বিষন্ন হচ্ছে আমি কেন নবীজী থেকে দূরে? আমাদের সেই আফসোস একদম অনুচিত যে,নবীজীর যমানায় আল্লাহ পাক কেন পাঠালেন না! আসলে সে সময় এলে হয়তো মুনাফিক নয়তো মুশরিক হতে হতো ( মাআযাল্লাহ) আমাদের এখনকার কার্যকলাপ সে কথা ই বলে। সবকিছু জেনেশুনে যেভাবে নবীজীর সুন্নাহ থেকে বিমুখ থাকি আর তখন যে খুব সুফী দরবেশ হতাম তার কি গ্যারান্টি ছিল! আল্লাহ পাক যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

নবীজীর রওজায় সালাম দিতে এশিয়া আফ্রিকা, ইউরোপ আমেরিকা সব মহাদেশ থেকে লোক এসেছে। এখানে সাদা কালো ধনী গরিব উঁচু নিচুর কোন তফাৎ নেই। সবাই এসেছে প্রিয় নবীকে মনভরে আকুল হৃদয়ে সালাম পেশ করবে ” আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ! আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহ আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া শাফিয়াল মুযনিবীন আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া রহমাতাল্লীল আলামিন ” মাত্র চারটি বাক্য কিন্তু সৌদি সেনাদের এই সময়টুকু সহ্যের বাইরে। হাজ্জি ওয়াল্লাহ ইয়া হাজ্জি! গিদ্দাম গিদ্দাম বলে হটিয়ে দেয়। আবেগের আদান প্রদান,পবিত্র জবান থেকে উত্তর শুনার ব্যকুলতা ওদের মাঝে কি আছে? হয়তো আছে কিন্তু এই আজমি বোবার তো নেই তারপর ও আবেগের কাছে বারবার পরাস্ত হতে চায়।

চোখের পানিতে অনেকের মতো আমারও গণ্ডদেশ ভিজে উঠছে কিন্তু শব্দহীন। পায়ের শব্দ, মুখের শব্দ, আবেগের প্রকাশ সবকিছু হচ্ছে নিরবে, নিস্তব্ধতায় মোড়া। স্টিল লোহায় মোড়ানো সোনালি হরফে আচ্ছাদিত খাচার মাঝে যে ছিদ্র সেখান দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখার ইচ্ছা করলাম প্রিয় নবীজীর রওজা শরীফ কিন্তু এখানকার সবকিছু কেমন অভিমানী, ইচ্ছে করে কেউ কিছু দিতে চাচ্ছে না। আমলের দৈন্যতা, আবেগের শূন্যতা সবকিছু একাকার হয়ে আমাকে হারিয়ে দিতে চাইল কিন্তু আমি জোর কোশেশে দুরুদ ও সালাম সম্পন্ন করলাম।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ ও হযরত ওমর ফারুক রাঃ এর নিকট এসেও কিছু বলতে চাইলাম এবং আজকের মতো রওজা জিয়ারত সম্পন্ন করলাম। আরো কিছুক্ষণ থেকে দুই চার ফোটা অশ্রু বেশী ঝরাতে পারলে ভালো লাগতো। মনের খেরোখাতায় হিসাব নিকাশটা সামান্য হলেও পোক্ত হত। শূন্যতার বিস্তার থেকে পাক রওজায় এসেও নিস্তার পেলাম না। চোখের দেখা হলেও মনের দেখা অদেখা ই থেকে গেল। ৬ঃ১৮ মিনিটে বাবে জীব্রাঈল দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু নিয়ে বেরিয়ে এলাম। নবীজীর রওজা পিছনে রেখে এলাম। আহা কেন এলাম! রওজা পিছনে না ফেলে সারা জীবন বুকেই আগলে রাখতাম।

“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন, ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা, ওয়া আলা আলে ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম মজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন, ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা, ওয়া আলা আলে ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম মজীদ”

লেখকঃ সম্পাদক , এমজেএফ নিউজ; মুহতামিম, জামিয়া আবু বকর সিদ্দিক রা. বলাকইড় গোপালগঞ্জ।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment