Home শিল্প সাহিত্যসিরাতসংখ্যা। নবীজির একাধিক বিবাহের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা

সিরাতসংখ্যা। নবীজির একাধিক বিবাহের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা

by .
নবীজির একাধিক বিবাহের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা

ইসলামের শত্রু ও বিদ্বেষপোষণকারীরা বলে থাকে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকি কেবল প্রবৃত্তির তাড়নায় ১১টি বিয়ে করেছিলেন। অথচ তারা জানে, হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ব্যতীত নবীজীর অন্য কোনো স্ত্রী কুমারী ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ সত্য গোপন করে, যেন মানুষ বিভ্রান্ত হয়।

যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবৃত্তির জন্য বিবাহ করতেন, তাহলে তিনি অধিকাংশ বিধবা, বয়স্ক ও সহায়হীন নারীদেরকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতেন না। বরং কুমারী নারীদেরকেই পছন্দ করতেন। বাস্তবতা হলো, তিনি মানবতা, রাজনীতি, ইসলাম প্রচারের কৌশল এবং নারীদের মাঝে ইসলামের বাণী দ্রুত ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে এবং আল্লাহর আদেশে বিবাহ করেছিলেন।

ইসলামবিদ্বেষী মহল সবসময় রাসূলের চরিত্রে কলঙ্ক লাগাতে চায়। তাদেরকে শত যুক্তি এবং প্রমাণ দিলেও তারা মানবে না, কারণ অপপ্রচারই তাদের মূল উদ্দেশ্য । নবীজী ও ইসলামকে বিতর্কিত করাই তাদের রুজি-রুটির মাধ্যম। কিন্তু একজন চিন্তাশীল ও বিবেকবান ব্যক্তি সহজেই বুঝতে পারবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল আরবের জন্য নয়, বরং সমস্ত মানবজাতির জন্য প্রেরিত শেষ নবী। কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর পথই মানবতার পথ। তার প্রতি ঈমান আনা এবং তার আদর্শ অনুসরণ করা সকল মানুষের জন্য আবশ্যক। আল্লাহ তা’আলা যে কুরআন নাযিল করেছেন, তা যেমন পুরুষের জন্য জীবনবিধান, তেমনি নারীর জন্যও। পুরুষ সাহাবিরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখনিঃসৃত বাণী তথা হাদিস মুখস্থ করে অথবা লিখে তা সংরক্ষণ করেছেন। ফলে পুরুষ-সম্পর্কিত বিধানসমূহ সহজেই সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু সমাজের অর্ধাংশ বা তার চেয়েও বেশি সংখ্যক নারী, যাদেরকে দ্বীনের শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক। তাদের মাঝে দ্বীনের শিক্ষা পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন ছিল নারীদের মধ্য থেকেই শিক্ষিকা তৈরি করা। বস্তুত বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই মহান কাজ আনজামের জন্য কেবল ১১ জনই যথেষ্ট ছিল না, কিন্তু যেহেতু আল্লাহ তাআলা ১১ জনের উপরেই ইকতিফা করেছেন তাই তাদের মাধ্যমেই নারীদের বিধান সংরক্ষিত হয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক বিবাহ করেন।

তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণ, যাদেরকে কুরআনে উম্মহাতুল মু’মিনীন তথা মুমিনদের জননী বলে সম্মানিত করা হয়েছে, তারা সরাসরি নবীজীর নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তা নারীদের মাঝে প্রচার করেছেন। বিশেষ করে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমা ও ফকিহা। তিনি বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শরঈ মাসায়েল।

এছাড়াও, নবীজী যাঁদের বিবাহ করেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন বিধবা, স্বামীহারা, অসহায় বা কোনো না কোনোভাবে সমাজের অবহেলিত নারী। তাঁদেরকে আশ্রয় ও মর্যাদা প্রদান করার মাধ্যমে তিনি এক মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখানে একটি আশ্চর্যজনক বিষয় লক্ষণীয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহসমূহ নিয়ে তৎকালীন আরবের কুফফাররাও কোনো আপত্তি তোলে নি। তাদের কাছে এটি ছিল স্বাভাবিক ও সমাজ-স্বীকৃত একটি বিষয়।

বহুবিবাহ সে সমাজে প্রচলিত ছিল এবং এতে কেউ তেমন কোনো বিতর্ক করত না। অথচ আজ, যারা নিজেদের আধুনিক, প্রগতিশীল বা মানবতাবাদী বলে দাবি করে তারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একাধিক বিবাহের উপর অকারণেই আপত্তি তোলে, যেন তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে, এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। আল্লাহ তারা তাদেরকে হেদায়েত দান করুন। মুসলমানদেরকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন। এবং কেয়ামত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ এবং তার মর্যাদা সমুন্নত করুন। আমিন।

লেখকঃ শিক্ষক, জামিয়া উসমান বিন আফফান রাঃ, নিকুঞ্জ , খিলখেত।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment