মাওলানা মাহমুদ হাসান
একজন মানুষ পৃথিবীতে এসেছিলেন, যাঁর কথা শুনে পাথর নরম হয়েছে, আর যাঁর চোখের অশ্রু দেখে আকাশ কেঁদেছে। তাঁর নাম ছিল “মুহাম্মাদ” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি কোনো রাজা ছিলেন না, ছিল না তাঁর কোনো রাজপ্রাসাদ। তাঁর হাতে ছিল না ধনভাণ্ডার, সেনাবাহিনী বা অলংকার। টতবু যাঁর মুখে একটা কথা উঠলে, সেই কথায় হাজারো মানুষের জীবন বদলে যেত।
তাঁর ছিল না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট, তবু এমন শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেটা আজও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুলোকে হার মানায়। তিনি কাঁদতেন, হাসতেন, ভালোবাসতেন, ভুল ক্ষমা করতেন—তবে সবকিছু এত সুন্দরভাবে করতেন, যেন এটা-ই একমাত্র আদর্শ। তিনি কোনোদিন কারো গায়ে হাত তোলেননি। ছোট্ট বাচ্চারা তাঁকে ঘিরে থাকত, বৃদ্ধরা তাঁর পাশে শান্তি পেত, গরিবেরা মনে করত—এই মানুষটা আমাদের আপনজন।
তাঁকে এক বুড়ি প্রতিদিন কষ্ট দিত। একদিন বুড়ি অসুস্থ হয়ে গেল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার খোঁজ নিতে গেলেন। বুড়ি অবাক হয়ে বলল: “তুমি তো আমার থেকে ক্ষতি ছাড়া কিছুই পাওনি, তবুও আমার খবর নিতে এলে?” তিনি শুধু বললেন, “তুমি মানুষ, তাই।”এমনই হুসনে আখলাক ছিল তাঁর। তাই তো ইরশাদ হয়েছেন “ইন্নাকা লাআলা খুলুকিন আযীম”। জীবনের প্রতিটা কাজে এমন শিক্ষা রেখে গেছেন, যেটা শুধু বইয়ে পড়ে শেখা যায় না—মন দিয়ে অনুভব করতে হয়।
তিনি বদর ও উহুদের ময়দানে ছিলেন সাহসী সেনাপতি। আবার তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি নিজের চাদর গরিবকে দিয়ে দিতেন। তিনি চলে গেছেন বহু বছর আগে। তাঁর কবরের মাটির নিচে আজও তাঁর উম্মত তাঁকে মনে করে কাঁদে এবং সালাম প্রেরণ করে–”আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ”। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ঘর খালি হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ দিয়ে কোটি মানুষ এখনো সুন্দরভাবে বাঁচতে শিখে।
তিনি ছিলেন একজন মানুষ। কিন্তু আমাদের মতন সাধারণ মানুষ নয়। তিনি ছিলেন আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। তিনি শুধু মুসলমানদের নন—তিনি ছিলেন বিশ্বজগতের জন্য রহমত। তাঁর নাম যখন বলি, তখন শুধু মুখ নয়, চোখ, হৃদয়, আত্মা—সবই যেন একসাথে বলে ওঠে:
“সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।
লেখকঃ শিক্ষক , জামিয়া কাশিফুল উলূম , ঢাকা।