আফগানিস্তানের ইমারাতে ইসলামিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক, সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আরও অংশ নেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমীর খান মুত্তাকী, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রধান ডা. মোল্লা আবদুল ওয়াসি এবং ডেপুটি মুখপাত্র মোল্লা হামদুল্লাহ ফিতরাত।
বৈঠকে আফগান প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “চীন ও আফগানিস্তান দীর্ঘদিনের ভালো ও স্থায়ী বন্ধু। আমরা আন্তর্জাতিক বৈঠকগুলোতে আফগানিস্তান নিয়ে চীনের ইতিবাচক অবস্থান, সমর্থন এবং সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।”
তিনি আরও বলেন, “চীন শুধু আফগানিস্তানের সঙ্গে নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গেও উন্নয়নে সহযোগিতা করে এসেছে এবং সর্বদা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের দাবি হলো, চীন যেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আফগানিস্তানের ন্যায্য অবস্থানকে সমর্থন করার প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখে।”
মোল্লা হাসান আখুন্দ জোর দিয়ে বলেন, “ইমারাতে ইসলামিয়া কোনো দল বা পক্ষকে আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে অন্যদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয় না। আমরা অন্যান্য দেশকেও আহ্বান জানাই, তারা যেন বন্ধুত্ব, সুসম্পর্ক ও ইতিবাচক আচরণের পথ অনুসরণ করে।”
তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, “গত ৪৫ বছর ধরে আফগানিস্তান বহু সংকটের মুখোমুখি ছিল, যা বড় শক্তিগুলোর আগ্রাসনের কারণে আরও জটিল হয়েছিল। কিন্তু ইমারাতে ইসলামিয়ার শাসন প্রতিষ্ঠার পর যুদ্ধ ও অস্থিরতাসহ বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমাদের নীতি হলো প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া। চীনসহ সব দেশের সঙ্গে টেকসই ও ইতিবাচক সম্পর্কের ভিত্তিতেই আমরা উন্নতির দিকে এগিয়ে যাব।”
সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা চীনের নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিন এবং তাদের আশ্বস্ত করুন যে আমরা কার্যত প্রমাণ করেছি, গত চার বছরে আফগানিস্তানের ভূমি থেকে কারও জন্য কোনো নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হয়নি। আমরা কাউকেই অনুমতি দেব না, যেন তারা আফগানিস্তান ব্যবহার করে অন্যদের ক্ষতি করতে পারে।”
বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আফগানিস্তান ও চীনের ঐতিহাসিক সম্পর্কের বিষয় বলেন,
“চীন ও আফগানিস্তান দুটি ভালো বন্ধু। চীন আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও আফগান জনগণের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে এবং আমরা বিশ্বাস করি তারা সঠিক পথ বেছে নিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আমি দু’বার আফগানিস্তান সফর করেছি, যা আমাদের বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতার প্রমাণ বহন করে। আমাদের ভবিষ্যৎ অভিন্ন, আমরা চাই এশীয় দেশগুলো বিশেষ করে আফগানিস্তান আধুনিকায়ন ও উন্নতির পথে অগ্রসর হোক।”
ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেন, “চীন আফগানিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতায় আন্তরিক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে আফগান জনগণকে সমর্থন করি।”
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দুই দেশের মধ্যে ভালো নিরাপত্তা সহযোগিতা আফগানিস্তানের উন্নতির জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।”
সূত্র : আরটিএ