Home আন্তর্জাতিকআফগান ‘ব্রিটিশ গুপ্তচরদের’ ইরানের হাতে তুলে দিচ্ছে তালেবান

আফগান ‘ব্রিটিশ গুপ্তচরদের’ ইরানের হাতে তুলে দিচ্ছে তালেবান

by .

যুক্তরাজ্যের ফাঁস হওয়া একটি তালিকায় নাম থাকা আটক তিন আফগান কর্মকর্তাকে ইরানের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে তালেবান।

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁস হওয়া ব্রিটিশ সরকারের তালিকায় যেসব আফগান ব্রিটিশ গুপ্তচরের নাম পাওয়া গেছে, তাদের নাম ইতোমধ্যে ইরানের কাছে হস্তান্তর করেছে তালেবান।

বৃহস্পতিবার দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০ বছর ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সন্দেহভাজন তিন আফগানকে ইরানের কাছে হস্তান্তরের অপেক্ষায় কাবুলে রাখা হয়েছে।

এই তিনজনকে পূর্বে তালেবান নেতৃত্বের শক্ত ঘাঁটি কান্দাহারে আটক রাখা হয়েছিল। ইরানের বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) সদস্যরা গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে এসব কর্মকর্তাকে তাদের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ করার পর আফগানিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানী কাবুলে বিমানে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের জন্য আবেদনকারী ২৫ হাজার আফগানের নাম সম্বলিত ব্রিটিশ সরকারের একটি স্প্রেডশিট ফাঁস হয়ে যায়। তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সৈন্য, দোভাষী এবং যুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের বিশেষ বাহিনীর সাথে কাজ করা ব্যক্তিরা।

এই তালিকায় ১০০ জনেরও বেশি ব্রিটিশ নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ হয়ে যায়। এদের মধ্যে গুপ্তচর এবং বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। বিবিসি ও আরও কয়েকটি মাধ্যম জানায়, ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে ছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই–৬–এর সদস্যদের নাম ও ব্যক্তিগত তথ্য, সেই সঙ্গে এসএএস–এর মতো বিশেষ বাহিনীর সৈন্যদের তথ্যও।

কিন্তু ফাঁসের প্রতিবেদন ২০২৩ সালে একটি সুপার-ইনজাংশনের অধীনে রাখা হয়, যার ফলে সংবাদমাধ্যম এই কেলেঙ্কারি সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি। যদিও গত জুলাইয়ে এটি প্রত্যাহার করা হয়।

আটক তিনজনের নাম এই তালিকায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্য টেলিগ্রাফের মতে, আফগান ও ইরানি কর্মকর্তারা তাদের হস্তান্তরের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। এই চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যও ভাগাভাগি করা হবে।

ইরান গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত আফগানদের যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে বলে জানা গেছে। কারণ যুক্তরাজ্য দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির উপর “স্ন্যাপব্যাক নিষেধাজ্ঞা” এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সাথে সহযোগিতা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে আসছে।

অন্যদিকে, তালেবান এর মধ্য দিয়ে তেহরানের কাছ থেকে তার সরকারের কূটনৈতিক স্বীকৃতি পেতে চাইছে। কেননা চার বছর আগে কাবুলে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে আফগান সরকার।

হস্তান্তরিত হতে যাওয়া ওই তিনজনের পাশাপাশি আরও ১৩ জনকে কান্দাহারের একটি বাড়িতে রাখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে চুক্তি নিয়ে তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানি বলেছেন, আটককৃতদের ইরানে পাঠানোর পরিবর্তে যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দর কষাকষির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।

তালেবানের অন্যান্য সদস্যরাও আফগান শরণার্থীদের প্রতি ইরানের আচরণের বিরোধিতা করেছেন। কেননা ইরান ও পাকিস্তান উভয় দেশই হাজার হাজারে আফগান শরণার্থীকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে।

তবে কান্দাহারের নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্তের প্রতি প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে বলেছেন, এই উদ্যোগ ইরানের কূটনৈতিক স্বীকৃতির পথ খুলে দিবে।

তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৬,০০০ এরও বেশি আফগানকে যুক্তরাজ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়ে। সূত্র: দ্য নিউ আরব

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment