উস্তাযুল উলামা খাদেমুল কুরআন ওয়াল মাসাজিদ হযরত মাওলানা গোলাম মুহাম্মদ ওয়া¯ত্মানভী রহ. ভারতের মহারাষ্টের জামিয়া ইশাআতুল উলূম এর সাবেক মুহতামিম এবং একাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর জন্মভূমি ভারতের গুজরাটের সূরাত জেলার অত্মর্গত কূসাড়ী নামক এলাকা।
পরিবারের লোকেরা তাঁর জন্মের দুই বছর পর ১৯৫২/১৯৫৩ সালে জন্মস্থান কূসাড়ী ছেড়ে ওয়াস্তান বসবাস শুরু করেন। এ কারণে তাঁকে ওয়াস্তানভী বলা হয়।
জন্ম : ১৩৭০ হিজরী মুতাবিক ১ লা জুন ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।
পিতার নাম : হাজী মুহাম্মদ ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ ইবরাহীম। তাঁর পরিবার শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.-এর আশেক ছিলেন। তাঁর খান্দানের লোকেরা হযরত রহ.-এর পরিবারের সাথে গভীর মহব্বতের সম্পর্ক রাখতেন।
শিক্ষাদীক্ষা : তিনি হিফজে কুরআনসহ প্রাথমিক শিক্ষা দীড়্গা শুরু করেন নিজ এলাকার মাদরাসায়ে কুওয়াতুল ইসলামসহ আরে কিছু প্রতিষ্ঠানে। এখান থেকে ১৯৬৪ সালে উচুঁ শিক্ষা লাভের জন্য গুজরাটের প্রসিদ্ধ মাদরাসা দারুল উলূম ফালাহে দারাইনে ভর্তি হন। সেখানে তিনি হযরত মাওলানা মুফতী আহমদ বীমাত, মাওলানা যুল ফিকার কাসেমী, এবং মাওলানা আবদুল্লাহ, মাওলানা শের আলী, কারী আনিস সাহেব প্রমুখ উলামায়ে কেরাম থেকে ইলমী উপকৃত হন। দীর্ঘ আট বছর এখানে পড়াশোনা করেন। অতঃপর ১৩৯২ হি. মুতাবিক ১৯৭২ সালে মাদরাসায়ে মাজাহিরম্নল উলূম সাহারানপুরে ভর্তি হন এবং শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা শায়খ যাকারিয়া কান্ধলভী রহ. এবং হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুস জৌনপুরী রহ. প্রমুখ জগৎ বিখ্যাত আহলে ফন আসাতিযায়ে কেরাম থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন : হযরত মাওলানা ওয়াস্তানভী রহ.-এর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সূচনা হয় সূরাত জেলার উধানা এলাকায়। এরপর কিছু দিন দারম্নল উলূম কান্থারিয়াতেও খেদমত করেন। সেখান থেকে দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্যে তিনি মহারাষ্ট্রের এক অভিজাত এলাকা নান্দোরম্নবা জেলার আক্কল কুওয়া গমন করেন। এখানে তিনি মাদরাসায়ে ইশাআতুল উলূম নামে একটি মাদরাসার গোড়া পত্তন করেন। মাদরাসাটি ধীরে ধীরে উন্নতি করতে করতে একসময় সেই অঞ্চলের মারকাযী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য হয়। প্রায় একশো একর পরিধির বিশাল বড় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। পনের হাজারেরও বেশি ছাত্র প্রতি বছর উক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে। হিফজ বিভাগেই এক হাজারের বেশি ছাত্র। এই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শাখা প্রশাখা রয়েছে। এই মাদরাসা থেকে হাজারো হাফেজ আলেম তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর পুরো হিন্দু¯ত্মানের প্রায় দুই লাখ ছাত্রের পড়াশোনার খরচ বহন করা হয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে।
হযরত মাওলানা ওয়া¯ত্মানভী রহ. দ্বীনি ইলমের মাদারিস এবং মারাকিয প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে মুসলমান যুবকদের উপযোগী করে সমকালীন প্রচলিত শিক্ষাকেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করেন। যার মাঝে প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল, বি. ইয়েড কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজও ছিল। ত্রিশটির বেশি হাসপাতাল আছে। যেখানে প্রতিদিন হাজারো রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানের শাখা প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান- ১. মারকাযুল বুহুস ওয়াদ্দিরাসাতি ফীত্তিব্বিন নববী। ২. মারকাযুল বুহুস ওয়াদ্দিরাসাতি ফীল ঊলূমি ওয়াত তেকনোলজী।
দারম্নল উলূম দেওবন্দের শূরা নির্বাচিত হওয়া : ১৪১৯ হিজরীতে তাঁকে দারম্নল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচন করা হয়। হযরত মাওলানা মারগুবুর রহমান রহ.-এর ইšেত্মকালের পর মজলিসে শুরার অনুষ্ঠিত মজলিস ৫ সফর ১৪৩২ হিজরী মুতাবিক ১০, ১১ জানুয়ারী ২০১১ সালে তাঁকে দারম্নল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম হওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। তিনি ২১ শাবান ১৪৩২ হিজরী মুতাবিক ২৩ জুলাই ২০১১ সাল পর্যšত্ম উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এভাবে তিনি সফর মাস থেকে শাবান পর্যত্ম মোট সাত মাস দারম্নল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম ছিলেন। তিনি মুজাহিরম্নল উলূম সাহারানপুর এবং জামিয়া আরাবিয়্যাহ হাতুরাবান্দার মজলিসে শূরার সদস্যও ছিলেন।
তাসাওউফ ও আধ্যাতি¥কতা : তিনি শায়খ মাওলানা মুহাম্মদ যাকারিয়া রহ.-এর খেদমতে খুব আসা যাওয়া করতেন। তবে হিন্দু¯ত্মানের প্রসিদ্ধ বুযুর্গ হযরত মাওলানা কারী সিদ্দীক আহমাদ বান্দাভী রহ. তাঁকে খেলাফত প্রদান করেন।
কাজসমূহ : তিনি ১২৮ টি দারুল ঊলূম, ২৪০০ মক্তব, ৭০০০ মসজিদ, ৭৮ টি স্কুল এবং ১৭ টি কলেজ, ৩০ টি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এই সম¯ত্ম প্রতিষ্ঠানে এখনও পর্যন্ত বহু শিড়্গার্থী শিক্ষা লাভ করে আসছে। কোনো একজন আলেম যদি কাজের ময়দানে নেমে যান তাহলে কী পরিমাণ কাজ করতে পারেন মরহুমের জীবনী থেকে সহজেই অনুমেয় হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁকে মাফ করে দেন। তাঁর দ্বীনি সবগুলো খেদমতকে কবুল করেন। আমাদেরকেও দ্বীনের জন্য কবুল করে নেন। আমীন।
মৃত্যু : ৪ মে ২০২৫ ঈ.। ৭৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ইশাআতুল উলূম আক্কল কুয়া’তে তিনি চীর নিদ্রায় শায়িত হন।