মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান
একসময় ইউরোপ ছিল খ্রিস্টধর্মের শক্ত দুর্গ। এখান থেকেই ক্রুসেড যুদ্ধ চালানো হয়েছিল, এখান থেকেই মুসলমানদের খ্রিস্টান বানানোর বড় বড় প্রচেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আজ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আজ ইউরোপের মানুষের মধ্যে যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে—তাদের সংখ্যা মাত্র ১৪%। অর্থ-সম্পদ আছে, আরাম-আয়েশ আছে, উন্নত জীবনযাত্রা আছে; তবুও তারা ভুগছে উদ্বেগ, হতাশা আর আত্মহত্যার প্রবণতায়। কারণ, আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন মানুষকে কখনো শান্তি দিতে পারে না।
ফ্রান্সের উদাহরণ নিন। একসময় তারা গর্ব করে ঘোষণা দিয়েছিল— “আমরা আলজেরিয়ায় ইসলামের জানাজা পড়াব।” কিন্তু আল্লাহর কুদরতের লীলা দেখুন— আজ বাস্তবতা হলো, ফ্রান্সেই খ্রিস্টধর্মের জানাজা পড়ানো হচ্ছে! সেখানে সাপ্তাহিক গির্জায় প্রার্থনায় যায় জনগণের ৫% এরও কম। অথচ একই দেশে জুমার নামাজে মুসলমানদের ভিড় এর দ্বিগুণ। চেক প্রজাতন্ত্রে গির্জায় যায় মাত্র ৩% মানুষ। আর আমেরিকায় রবিবারের প্রার্থনায় উপস্থিতি ১৯৫০-এর দশক থেকে প্রায় ৪০% কমে গেছে। আজকের প্রজন্ম আগের তুলনায় অর্ধেকও যায় না।
অন্যদিকে মুসলমানরা আজও দৃঢ়ভাবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রেখেছে। জুমার জামাতে মানুষের ঢল, নামাজের প্রতি ভালোবাসা, আর কোরআনের আলো কোটি কোটি হৃদয়ে স্পন্দন জাগাচ্ছে। ফ্রান্স, কোরিয়া, জাপান কিংবা হংকং—যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু, সেখানেও মসজিদগুলো জীবন্ত সাক্ষ্য দিচ্ছে ইসলামের শক্তির। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ঘোষণা করেছেন
يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا أَنْ يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
“তারা আল্লাহর নূরকে তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তা মানেন না; তিনি তাঁর নূরকে পূর্ণ করবেনই, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।” (সূরা তওবা: ৩২)
এ দৃশ্য প্রমাণ করে যে, পশ্চিমা সমাজ বা পূর্ব এশিয়া যতই বস্তুগত উন্নতি করুক না কেন, তারা আল্লাহ থেকে দূরে গিয়ে শান্তি হারিয়েছে। কিন্তু মুসলিমরা দ্বীনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে এখনও শান্তি, আশা আর ভবিষ্যতের আলো খুঁজে পাচ্ছে। প্রকৃত মুক্তি কখনো ধন-সম্পদে নয়, উন্নত প্রযুক্তিতে নয়—বরং আল্লাহর দ্বীনের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার মধ্যেই নিহিত।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলামের উপর সুদৃঢ় রাখুন।
লেখকঃ খতীব , আনসান জামে মসজিদ, সিউল , দক্ষিণ কোরিয়া