Home আন্তর্জাতিকইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইইউ নেতাদের মধ্যে বিভক্তি

ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইইউ নেতাদের মধ্যে বিভক্তি

by .

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা

ইসরায়েল যখন গাজা শহর দখলে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। গতকাল শনিবার ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে ২৭ দেশের মন্ত্রীরা যুদ্ধ নিয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন। ইসরায়েলের গণহত্যার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা নিয়ে নেতারা ঐকমত্যে আসতে পারেননি। ফলে অবরুদ্ধ গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে ইইউর পক্ষ থেকে কোনো শক্ত অবস্থান নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

বৈঠকে ইইউ নেতারা প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েলে বিনিয়োগ তহবিল স্থগিত করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব তোলেন। সেও প্রস্তাব পাস করতেও ব্যর্থ হয়েছেন জোটটির নেতারা। তবে স্পেন ও আয়ারল্যান্ড ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের কথা বলেছে। তারা ইসরায়েলকে চাপ প্রয়োগ করতে চায়। জার্মানি ও হাঙ্গেরি ইসরায়েলের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। তারা দখলদার দেশটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা চায় না। 

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস আলজাজিরাকে বলেন, ইইউ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে। গাজা পরিস্থিতির কথা এলে নেতারা চুপ হয়ে যান। সম্মেলনের আয়োজক দেশ ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন শনিবার বলেন, ‘আমরা গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় লক্ষ্য করছি। ইসলায়েলকে অবশ্যই তার পথ পরিবর্তন করতে হবে। তাঁর দেশ ইসরায়েলের বাণিজ্য ও কিছু মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান। অবশ্য বৈঠকের আগে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিপ্রধান কাজা কালাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি খুব একটা আশাবাদী নই। আমরা অবশ্যই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব না।’ 

এদিকে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল ব্যারোট বলেছেন, আগামী মাসের জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে প্রবেশাধিকারের ওপর কোনো বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সদস্যদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি জানানোর পর ফ্রান্স এই বক্তব্য দিল। 
গাজায় অপুষ্টিতে একটি শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে, যা গাজায় ইসরায়েলের জোরপূর্বক দুর্ভিক্ষের সর্বশেষ শিকার। এ নিয়ে ক্ষুধাজনিত কারণে ৩২২ জন মারা গেলেন, যার মধ্যে ১২১ জন শিশু। জেইতুন এলাকায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনও চার সৈন্যকে খুঁজছে বলে জানা গেছে। 

গাজা সিটিতে ভারী বোমা বর্ষণ 

শনিবার ভোরে গাজা সিটিতে ভারী বোমা বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বৃহত্তম এলাকা তাদের পরিকল্পিত দখলের কাজ এগিয়ে চলেছে। ভোর থেকে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ত্রাণকর্মীসহ কমপক্ষে ৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা সিটির জেইতুনপাড়ায় ভারী কামান নিক্ষেপ চলছে এবং ভোর থেকে বোমা বর্ষণ বন্ধ হয়নি। গাজার অন্যান্য অংশেও তীব্র আক্রমণ চলছে। কেন্দ্রীয় অংশে নুসাইরাত শরণার্থীশিবিরের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে কমপক্ষে ১৫ জন আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষিণে খান ইউনিসের কাছে একটি তাঁবুতে হামলায় একজন নারী নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, গাজা সিটিতে ইসরায়েলি অভিযানে ১০ লাখ মানুষকে আবার বাস্তুচ্যুত করতে পারে। এ পর্যন্ত হামলায় অন্তত কমপক্ষে ৬৩ হাজার ৩৭১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৫ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলে অস্ত্র পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দিল তুরস্ক 

তুরস্কের বন্দর ও আকাশসীমায় ইসরায়েলি বাহনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এ কথা বলেন। পার্লামেন্টারি অধিবেশনে ফিদান বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছি। এখন থেকে আমাদের বন্দরে ইসরায়েলি জাহাজের প্রবেশাধিকার নেই এবং আমাদের জাহাজও ইসরায়েলি বন্দরে ভিড়বে না।’ তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের বন্দর ও আকাশপথ হয়ে ইসরায়েলে অস্ত্র-গোলাবারুদ আমরা নিয়ে যেতে দেব না।’

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment