ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে আয়োজন করা হয়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ করলে ওষুধ উৎপাদন, রপ্তানি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে গত ৫০ বছরে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি না নিতে পারাটা দুঃখজনক। তিন বছর বাড়তি সময় পাওয়া গেলেও কি প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে? তারপরও যৌক্তিক যুক্তি উল্লেখ করে উত্তরণ পেছানোর জন্য জাতিসংঘে আবেদন করা যেতেই পারে। তবে অবশ্যই প্রস্তুতিও অব্যাহত রাখতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র অায়োজনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে আজ শনিবার এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি উত্তরণ হলে সেদিন থেকেই ওষুধ শিল্পে প্যাটেন্ট কার্যকর হবে। বাংলাদেশে যেসব ওষুধ উৎপাদন হয় তার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ প্যাটেন্টের আওতায় রয়েছে। এলডিসিভুক্ত হওয়ায় এক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। তবে উত্তোরণের পর প্যাটেন্ট কার্যকর হলে কিছু ওষুধের দাম ৩০ থেকে ৪০ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ব্যাপক ব্যবহৃত ইন্সুলিনের দাম ১০ থেকে ১১ গুণ বাড়বে। এভাবে ওষুধের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, ওষুধ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে ২০১২ সালে এপিআই পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বর্তমানে শূন্য শুল্কে রপ্তানি করা যাচ্ছে, উত্তরণের পর পোশাক রপ্তানিতে ১২ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। এভাবে অন্যান্য রপ্তানিতে চ্যালেঞ্জ আসবে। তাই উদ্যোক্তারা চাপে পড়বেন।
তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের এলডিসি উত্তরণ পিছানোর বিষয়ে প্রসঙ্গ আসলে দেশটি নিজেই গরীব দেশের কাতারে থাকবে না বলে জানিয়ে দেয়। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে এলডিসিভুক্ত হতে আবেদন করার সময়ও গরীব দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা প্রশ্ন উঠেছিলো। তবে এলডিসিভুক্ত হয়ে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সার্বিক বিবেচনায় এলডিসি উত্তরণ পিছাতে জাতিসংঘে আবেদন করা যেতেই পারে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আগামী মার্চের আগেই আবেদন করতে হবে। আবেদনে এ ক্ষেত্র বাংলাদেশের যুক্তি হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উত্তরণ টেকসই না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার যদি অর্থনীতিবিদদের সহযোগিতা চায়, তারা তা দিতে প্রস্তুত।
তবে তিনি বলেন, আবেদন করলেই বাড়তি সময় পাওয়া যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই তিনি প্রস্তুতি গ্রহণের ওপর জোর দেন। কারণ, প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ ১৬টি ব্যবসায়ী সংগঠন যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে পিছিয়ে দিয়ে ২০৩২ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ দাবি করেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, এলডিসি উত্তরণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বাড়তি তিন বছর এবং ট্রানজেকশন পিরিয়ড হিসেবে তিন বছর চাওয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এলডিসি থেকো উত্তরণকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। তবে তারা মনে করেন, সফল ও টেকসই উত্তরণের জন্য তিন থেকে পাঁচ বছর অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। তাদের দাবি, এই মুহূর্তে এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে রপ্তানি খাতসহ নানা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।