Home মুক্ত গদ্যদিনলিপি। মদিনায়, একজন তালেবান নেতার সান্নিধ্যে

দিনলিপি। মদিনায়, একজন তালেবান নেতার সান্নিধ্যে

by .
দিনলিপি। মদিনায়, একজন তালেবান নেতার সান্নিধ্যে


আরশাদ উদ্দিন মুজাহিদ

২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরী, বুধবার। অনেক সাধনার পর আল্লাহ তাআলা ইলমের পথে যাত্রার তাওফিক দান করলেন-জামিয়াতুল আজহারে পড়াশোনার সুযোগ হলো। তবে অন্তরে ছিলো একটি আকাঙ্ক্ষা-আমার পাসপোর্টে প্রথম সিল যেন পড়ে হারামাইনের শহর মক্কা-মদীনায়। আল্লাহ কারীম সেই স্বপ্ন পূর্ণ করলেন। চার দিনের ওমরাহ ভিসায় তিন দিন মক্কায় এবং একদিন মদীনায় কাটানোর সৌভাগ্য হলো।


‎সেই একদিনেই পবিত্র মসজিদে নববীর আঙিনায় দেখা হলো কিছু ছাত্র ভাইদের সাথে। ঢিলেঢালা সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা, উপরেই কালো কটি, মাথায় কালো পাগড়ি, আর গায়ে জড়ানো ইহরামের সাদা চাদর। হাতে তাসবিহ, মুখে দুরূদের ঝংকার, চোখে পানির ধারা- রওজা পাকে সালাম দিয়ে দিয়ে বের হতেই পরিচয় হলো তাদের সঙ্গে।


‎তাঁদের ব্যবহার ছিলো মুগ্ধ করার মতো-নবীপ্রেমের জীবন্ত উদাহরণ। আলাপচারিতায় উঠে এলো দাওয়াত, এদাদ, জিহাদ ও খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার কথা। নবীজির জীবনী, সাহাবাদের ত্যাগ আর উম্মাহর দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের আন্তরিক আলোচনা হৃদয়ের গভীরে অমোচনীয় রেখাপাত করলো।
বিশেষভাবে দেখা হলো মাওলানা নেক মুহাম্মাদ হানাফি হাফিযাহুল্লাহর সাথে। তাঁকে আমার বিস্তারিত পরিচয় দেই। ১৮-১৯ ফারেগ হয়ে এক বছর উলূমুল কুরআন। তারপর ইফতা। তারপর হিফজ। তারপর দু বছর খিদমাত করে আবারো ইলম অর্জন করছি জেনে তিনি অবাক হন। দোয়া দেন। জানতে চান উর্দু ভাষায় নাশিদ পারি কি না – হ্যাঁ উত্তর দিয়েই নাশিদ গাইতে আরম্ভ করি। বাবুল হিজরাতে গিয়ে নাশিদ শেষ হল। খুশি হলেন খুব। এভাবেই সখ্যতা গড়ে উঠল। তারপর এক সাথে এশারের নামাজ পড়ে বিদায় নিয়ে আসি।

মাওলানা নেক মুহাম্মাদ হানাফি হাফিযাহুল্লাহ অবাক হয়েছেন – আমি বাংলাদেশের হয়ে আরবি ভাষায় উনার সাথে কথা বলেছি। তিনি আফগান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কি জানি একটা দায়িত্বরত আছেন। সাহাবিয়ানা জিন্দেগির অনুসারী এই তালেবান নেতা নিজের পরিচয়ের ব্যাপারে গোপনীয়তা অবলম্বন করেন খুব বেশি।


‎ছাত্র ভাইদের সেই সরল জীবনযাপন, নবীপ্রেমমাখা আলাপ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আজীবনের স্মৃতি হয়ে রইলো। মসজিদে নববীর আঙিনায় কাটানো সেই কয়েক মুহূর্ত সত্যিই ছিলো অমূল্য। আজও চোখের পর্দায় ভাসমান।


‎আল্লাহ কারীম আমাদের সবাইকে বারবার হারামাইন শরীফাইনে হাজিরার তাওফিক দান করুন এবং ছাত্র ভাইদের মতো দ্বীনের কাজে আত্মনিয়োগের সৌভাগ্য দিন। আমীন।

লেখক: ‎শিক্ষার্থী, আল আজহার ইউনিভার্সিটি, কায়রো, মিশর

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment