Home আন্তর্জাতিকআগামী সপ্তাহে শুরু নোবেল পুরস্কার ঘোষণা : কারা দেয়, কীভাবে দেয়?

আগামী সপ্তাহে শুরু নোবেল পুরস্কার ঘোষণা : কারা দেয়, কীভাবে দেয়?

by .

ছবিসূত্র : রয়টার্স

আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা। প্রথম দিন সোমবার ঘোষণা করা হবে চিকিৎসা বা শারীরবিদ্যা শাখার পুরস্কার। এক সপ্তাহ পর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের আনুষ্ঠানিকতা। নোবেল পুরস্কার প্রতিবছর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয় চিকিৎসা বা শারীরবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতির মতো ছয়টি ক্ষেত্রে।

প্রত্যেক বিজয়ী পাবেন ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার) পুরস্কারের অর্থ। শুধু আর্থিক পুরস্কারই নয়, নোবেল লরিয়েটরা পান এমন এক মর্যাদা ও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি, যা অধিকাংশ বিজ্ঞানী ও গবেষকের জন্য অকল্পনীয়।

সুইডিশ রসায়নবিদ ও উদ্যোক্তা আলফ্রেড নোবেলের হাত ধরে নোবেল পুরস্কারের যাত্রা শুরু হয়। ডিনামাইট আবিষ্কার করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তার অর্জিত সম্পদ মানবকল্যাণে অসাধারণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের স্বীকৃতির জন্য ব্যয় হবে। সেই অনুযায়ী ১৯০১ সালে প্রথমবার নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তি শাখায়। 

আলফ্রেড নোবেল  ডিনামাইটের আবিষ্কারক হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত হলেও তিনি কবিতা এবং নাটকও লিখেছিলেন। ১৭ বছর বয়সের মধ্যে রাশিয়ান, ফরাসি, ইংরেজি এবং জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারতেন।

পাঁচটি মূল পুরষ্কার বিভাগ তার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। নোবেল অস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়নেও ব্যয় করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন।

তবে জীবনের পরবর্তী সময়ে তিনি অস্ট্রিয়ান শান্তি আন্দোলনকর্মী বার্থা ভন সাটনারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। বার্থা ভন সাটনার ১৯০৫ সালে শান্তি পুরস্কার জয়ী প্রথম নারী হন। অনেকে মনে করেন, তার প্রভাবেই নোবেল শান্তি পুরস্কার বিভাগটি অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

নোবেল ১৮৯৬ সালে মারা যান কিন্তু প্রথম পুরস্কার প্রদানের আগে তার ইচ্ছাপত্র নিয়ে আইনি লড়াইয়ের পর ১৯০১ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

নোবেল পুরস্কার কারা প্রদান করে?

আলফ্রেড নোবেল তার উইলে নির্ধারণ করেছিলেন, কোন প্রতিষ্ঠান কোন শাখার নোবেল পুরস্কার প্রদান করবে। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। সাহিত্যে পুরস্কার প্রদান করে সুইডিশ একাডেমি। শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিদ্যায় পুরস্কার প্রদান করে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি। আর শান্তি পুরস্কার প্রদান করে নরওয়ের পার্লামেন্ট।

ঠিক কেন নোবেল শান্তি পুরস্কার নরওয়ের হাতে দিয়েছিলেন, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। ধারণা করা হয়, তিনি যখন তার উইল লিখেছিলেন, তখন সুইডেন ও নরওয়ে একটি রাজনৈতিক ইউনিয়নে আবদ্ধ ছিল—এ কারণে হয়তো তিনি নরওয়েকে শান্তি পুরস্কারের দায়িত্ব দেন। পরে, ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ৩০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নোবেল ফাউন্ডেশনে অর্থ দান করে অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করে। অন্যান্য নোবেল পুরস্কারের নিয়ম অনুসারেই এই পুরস্কারও প্রদান করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।

বিখ্যাত ও বিতর্কিত নোবেলজয়ীরা

উল্লেখযোগ্য নোবেলজয়ীদের মধ্যে আছেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, নীলস বোর ও মেরি কুরি, লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ও আলবেয়ার কামু, অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ও মাদার তেরেসা।

যদিও বেশিরভাগ অর্জন আজও উদযাপিত হয়, কিছু পুরস্কার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। যেমন, এগাস মনিজ ১৯৪৯ সালে শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পান। যেটি দেওয়া হয়েছিল বর্তমানে অগ্রহণযোগ্য ঘোষিত লোবোটমি পদ্ধতির জন্য। শান্তিতে দেওয়া একাধিক নোবেলও সমালোচিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হেনরি কিসিঞ্জার, ইয়াসির আরাফাত, ইয়িৎসহাক রবিন ও শিমন পেরেসকে দেওয়া পুরস্কার। এ ছাড়া, ১৯৪৮ সালে মৃত্যুর আগে মহাত্মা গান্ধীকে পুরষ্কার না দেওয়াকেও একটি বড় অবহেলা হিসেবে দেখা হয়।

নোবেল উৎসব

নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে। সেদিন আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর বার্ষিকী। শান্তি পুরস্কার নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অসলোতে প্রদান করেন, আর বাকি সকল পুরস্কার সুইডিশ রাজা স্টকহোম কনসার্ট হলে প্রদান করেন।

উৎসবের দিন সন্ধ্যায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ অতিথি স্টকহোম সিটি হলে একটি জমকালো ভোজভোজে আমন্ত্রিত হন। সুইডেনের সেরা কিছু শেফ ও সোমেলিয়ার কয়েক মাস ধরে যত্নসহকারে পরিকল্পিত এই মেনু পরিবেশনের আগে গোপন রাখা হয়। ২০০ জন ওয়েটার খাবার পরিবেশিত করেন। খাবারের থিম উত্তরীয়। গত বছরের মেনুতে ছিল— লাভেজ দিয়ে ভরা ছাগলের দুধের চিজ, চিকেন কুইনেল, মিসো-গ্লেজড সেলারিয়াক ও বাঁধাকপি। এ ছাড়া ছিল বেকড অ্যাপল টেরিন ও ব্রাউন বাটার কেক।

সূত্র : রয়টার্স

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment