মিযান,নাহুমীর পড়ার সময় লেখালেখির প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিল। নিয়মিত রোজ নামচা, মাদ্রাসার দেয়াল পত্রিকা ও বাৎসরিক স্মারক গ্রন্থে লিখতাম।উপরের জামাতের বড় ভাইদের থেকে সব সময় লেখালেখির বিষয়ে পরামর্শ নিতাম।
আল্লাহ মাফ করুন, সেই সময় এতটা লেখালেখির প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলাম যে নামাজে ও কবিতার ছন্দ মেলাতাম।এর কারণও ছিল বটে আমাদের জামাতের অনেকেই ভালো লিখতে পারতো বিভিন্ন পত্রিকায় আমরা লেখা জমা দিতাম। সেকারনে সবাই প্রতিযোগিতামুলক ভাবে লেখালেখি করতাম।
এ বিষয়ে একটা মজার কাহিনী বলি। একবার বড় ভাইদের কাছ থেকে শুনলাম লেখক হতে হলে রাতে নির্জনে হাঁটতে হয় আর প্রকৃতিকে অনুভব করতে হয় মনে মনে ঠিক করে ফেললাম আমরা রাতে নির্জনে হাঁটবো ও প্রকৃতিকে অনুভব করবোই। যেমন কথা তেমন কাজ রাত একটায় মতিঝিল থেকে হাতিরঝিল হয়ে টিভি সেন্টার তারপর আবার মতিঝিল ফেরৎ আসলাম রাত তখন চার টা বেজে কুড়ি মিনিট। কিন্তু এই স্পৃহা বেশিদিন স্থায়ী হলো না উপরের জামাতে উঠার সাথে সাথে পড়ার চাপ বেড়ে গেলো লেখালেখিতে তেমন সময় দিতে পারতাম না। এরপর পদার্পণ করলাম খেদমত ও সাংসারিক জীবনে। এবার তো লেখালেখির আগ্রহটাও বিদায় নেওয়ার উপক্রম। নিজেকে কেমন জানো হারিয়ে খুঁজছিলাম। ঠিক এমন সময় একদিন দেখা হয় আবুদ্দারদা ভায়ের সাথে তিনি একজন আলেম ও ভালো লেখক তার রচিত কয়েকটি বইও আছে।আগ থেকেই তার সাথে পরিচয় ছিল ।জামিয়া ইকরায় গেলে তার সাথে আলাপ হতো এই লেখালেখির বিষয়ে। অনেক দিন পর দেখা। কুশল বিনিময়ের পর তিনি লেখালেখির অবস্থা জানতে চাইলে বেশ লজ্জায় পড়ে গেলাম। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার জন্য খুব উৎসাহ দিলেন এবং তাদের অনলাইন নিউজে প্রতিনিয়ত লেখা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। এরপর থেকে আমি নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করলাম। প্রতিনিয়ত না পারলেও মাঝে মাঝে লেখা দেওয়া শুরু করলাম এম জে এফ নিউজে অর্থাৎ তাদের অনলাইন নিউজে আর আবুদ্দারদা ভাই সেই লেখাগুলো ঘষা মাজা করে নিউজ করতেন।কি লিখবো, কিভাবে লিখবো,কোন সময়ে লিখবো ইত্যাদি সকল বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করতেন আবুদ্দারদা ভাই নিজেই। এভাবে তিন মাস করে পর পর দু’বার মুসলিম মানস নামক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা বের হলো। সেখানে লেখা দিলাম বড় বড় লেখকদের পাশে আমার লেখা ও স্থান পেলো মুসলিম মানসে। হঠাৎ একদিন আবুদ্দারদা ভাই ফোন করে জানালেন আমার লেখা সেরা তিনে মনোনীত হয়েছে আমাকে পুরস্কার প্রদান করা হবে।এ কথা শুনে আমি কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ও মনে মনে ভাবলাম আমি কি বাস্তব না কল্পনার জগতে আছি। সর্বপ্রথম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম তারপর আবুদ্দারদা ভায়ের জন্য দোয়া করলাম।এই অর্জনের সবটুকুই তার কেননা আমি তো লেখালেখি ভুলেই গিয়েছিলাম। পুরস্কার গ্রহণ করতে যেতে হবে গোপালগঞ্জ বলাকইর।বেশ দূরের পথ এদিকে আবার মসজিদ-মাদ্রাসার দায়িত্ব ।কিন্তু মনে মনে ঠিক করলাম যেভাবেই হোক যেতেই হবে। মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে সোজা চলে গেলাম কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার গ্রহণ ও আবুদ্দারদা ও তার বড় ভাই শ্রদ্ধেয় আইয়ুব ভায়ের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। সেখানে পৌঁছতে অনেক কষ্ট হলেও পৌঁছা মাত্রই সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে গেল। সেখানে পৌঁছে দেখি স্কুল পড়ুয়া ছাত্রদের মধ্যে ক্বেরাত,আজান ও সীরাত বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতির এই ক্লান্তি লগ্নে এমন মহতি উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।আর এর পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে মনোয়ারা ফাউন্ডেশন যার কর্নধার হচ্ছেনন মোঃ কামরুজ্জামান (কামাল)শিকদার। যিনি অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ। চলাফেরা একেবারে সাধারণ মানুষের মতো অথচ তিনি জে কে পলিমার ইন্ডাস্ট্রির মালিক। সারা দেশে ফ্রী কোরআন বিতরণ সহ অসংখ্য সেবামূলক দ্বীনি কাজ তিনি আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। আবুদ্দারদা ভাই ও আইয়ুব ভায়ের সাথে সাক্ষাৎ করলাম বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললাম।যোহর পর্যন্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো। যোহরের পর পুরস্কার বিতরণ শুরু হলো পুরস্কার বিতরণে উপস্থিত ছিলেন মুফতী মুহিব্বুল হক (দা:বা:), মুফতী মুরতাজা (দা:বা:), মাওলানা নাসির আহমাদ (দা:বা) সহ দেশের বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম। সর্বপ্রথম আমার নাম ঘোষণা করা হলো আমি মুফতী মুহিব্বুল হক ( দা:বা:)এর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করলাম। পুরস্কার বিতরণ শেষে খাওয়া-দাওয়া বিশাল আয়োজন করা হলো খানা খেয়ে সবাইকে বিদায় জানিয়ে আছরের আগেই রওনা করলাম মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে।