Home ইসলামব্যক্তিত্ব । এটি এম হেমায়েত উদ্দিন আমাদের চেতনা

ব্যক্তিত্ব । এটি এম হেমায়েত উদ্দিন আমাদের চেতনা

by .

আমিনুল ইসলাম কাসেমী

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা মরহুম এটি এম হেমায়েত উদ্দিন আমাদের চেতনা। ইসলামী রাজনীতির দুঃসময়ে তিনি মাঠে- ময়দানে যেভাবে বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন, তা চিরদিন মনে রাখবে ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মিরা। স্মৃতির মণিকোঠায় অম্লান হয়ে রবে তিনি। তাঁর রাজনৈতিক কলা- কৌশল, তাঁর সাহসিকতা, তাঁর বজ্রকন্ঠ, তাঁর উদার মনোভাব ইসলামী রাজনীতির ময়দানে যেন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল ।
এটি এম হেমায়েত উদ্দিন সাহেব ছিলেন যেন এক বুলেট। যা সহজে হার মানতে চায় না। যে বুলেট রাজনীতির মাঠে দুর্বার গতিতে ছুটেছিল। যার ক্ষুরধর বক্তৃতা পিলে চমকে যেত বাতিলের। তিনি এমন বজ্রকন্ঠে বক্তৃতা করতেন, সর্বস্তরের মানুষের মাঝে এক জযবা সৃষ্টি হত। স্রোতারা ভিন্ন জগতে চলে যেত।
এটি এম হেমায়েত উদ্দিন এর জ্বালাময়ী ভাষণ সকলের তাক লেগে যেত। তাঁকে যখন ইসলামী আন্দোলনে দেখেছি, সেটা নব্বই দশকের শুরুতে। সেসময়ে ইসলামী রাজনীতির ময়দানে এটি এম হেমায়েত উদ্দীনের মত তুখোড় বক্তা আর ময়দানে দেখা যেত না। তাঁর সাহসী উচ্চারণ, তাঁর দরাজকন্ঠ, তাঁর ভাষণের স্পিরিট, এত ধারাল ছিল, মানুষ হতবাক হয়ে যেত।
আজকে ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে বহু বক্তা তৈরী হয়েছে। শত শত নেতা কর্মি এখন মঞ্চ কাঁপিয়ে থাকেন। আমি মনে করি, এর সবই এটি এম হেমায়েত উদ্দিন সাহেবের সংস্পর্শে এবং তাঁর উৎসাহ- উদ্দীপনায় তৈরী হয়েছে। সেসময়ে এত বক্তার আবিস্কার ইসলামী আন্দোলনে চিন্তাও করা যায় নি। কিন্তু হেমায়েত উদ্দিন সাহেবের প্রেরণায় তৈরী হয়েছে একদল প্রতিভাধর মঞ্চ কাঁপানো বক্তা।
ইসলামী আন্দোলনের বহু নেতা-কর্মি শুধু এটি এম হেমায়েত উদ্দিন সাহেবের বক্তৃতা শোনার জন্য মিটিংএ আসত। ইসলামী আন্দোলন ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতা কর্মিদের দেখেছি, তারাও হেমায়েত উদ্দিন সাহেবের বক্তৃতা শোনার ভক্ত। ময়দানের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কখন তিনি বক্তৃতায় আসেন।
মঞ্চ পরিচালনার সিষ্টেম ছিল তাঁর ভিন্ন ধরনের। তিনি যেভাবে ষ্টেজ পরিচালনা করতেন, সেটা আর দেখা যায় না। প্রতি বক্তার বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে তিনি এমন ভাবে সমাবেশের লক্ষ্য উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন, পুরো মজলিস খৈ ফোটা শুরু হয়ে যেত। মুহু মুহু স্লোগানে ভরে যেত পুরো ময়দান।
সবচেয়ে বেশী মজা ছিল, যখন পীর সাহেব সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম রহ,, বক্তৃতায় আসতেন, তখন তিনি এমন এমন কিছু বৈশিষ্ট – গুনাবলী, অতি উচ্চাঙ্গের ভাষায়, জ্বালাময়ী কন্ঠে উপস্হাপন করতেন, স্রোতারা পীর সাহেব হুজুরের বক্তৃতা শোনার আগেই লাফিয়ে উঠত। প্রতিটি স্রোতা যেন জযবায় এক ভিন্ন অবস্হার অবতারণা হত তাদের মাঝে।
একজন উদার রাজনৈতিক ছিলেন মাওলানা এটি এম হেমায়েত উদ্দিন। রাজনীতিতে উদারতার সবক সবার আগে। হিংসা- বিদ্বেষ, পারশ্রীকাতরতা তাঁর মধ্যে ছিল না। সকল ইসলামী দলের নেতা কর্মিদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতেন। সকল দলের নেতা- কর্মিদের আপন মনে করতেন। অন্যান্য ইসলামী দলের নেতাদের দেখেছি, তাঁকে যথেষ্ট সমীহ করতে। শ্রদ্ধা করতে। ভালবাসত। আর এটা হয়েছিল তাঁর উদারতার কারণে। যে কোন ইসলামী দলের নেতা, কারো সাথে কথা বলতে না পারলেও, এটি এম হেমায়েত সাহেবের সাথে ঠিকই যোগাযোগ রেখেছেন। তাঁর মাধ্যমে অনেক কাজ হাসিল করেছেন তারা।
একজন নিরহংকার মানুষ। অহমিকা বোধ ছিল না। যে কেউ তাঁর সাথে দেখা সাক্ষাত, কথা বলা সহজ ছিল।তাঁর সাথে যে কেউ কথা বললে, মনে হত, তাঁর পুর্ব পরিচিত। মুখে স্বভাবজাত হাসি ফুটে উঠত। কত সাধারণ মুজাহিদ তথা কর্মির সাথে তিনি সাধারন ভাবে কথা বলেছেন।
তিনি যে কত সাদাসিধে ছিলেন, তাঁকে দেখা গেছে, একজন সাধারন কর্মির মত ময়দানে কাজ করেছেন। নির্বাচনের সময় তাঁকে দেখা গেছে, নিজে মাইক হাতে নিয়ে প্রচার কার্যে অংশগ্রহন করতে।
চিন্তা করা যায়! এত্ত বড় নেতা, কিন্তু তাঁর চাল- চলন ছিল সাদামাটা।
অত্যন্ত বিনয়ী একজন মানুষ ছিলেন তিনি। আপোসে তাঁর কথার মাঝে বিনয়- নম্রতা প্রকাশ পেয়েছে। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে চলাফেরা।
মঞ্চে ব্রাঘ্রের মত গর্জে ওঠতেন, কিন্তু আপোসে সাথীদের সাথে তাঁর আখলাক ছিল অনুসরনীয়- অনুকরণীয়। এ যেন সাহাবাদের আখলাক। সাহাবাগণ যেমন বাতিলকে হুংকার দিয়ে তার টুটি চেপে ধরেছেন। কিন্তু আপোসে সাথীদের সাথে মহব্বত – ভালবাসা ছিল সীমাহীন। মাওলানা এটি এম হেমায়েত উদ্দিন সাহেব, হুবহু সাহাবাদের নঁকশে কদমে পা রেখে চলেছিলেন।
একজন জনদরদী নেতা। দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। বন্যা দুূর্গত এলাকায় ত্রাণের বোঝা মাথায় নিয়ে ছুটে যেতেন। নদী ভাঙ্গন, টর্নেডো, ঘুর্নিঝড়, সাইক্লোন, সকল দুর্যোগে তাঁকে সবার আগে শরীক হতে দেখা গেছে। নিজের মাথায় নিতেন ত্রাণের বোঝা। অভাবগ্রস্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে দিতেন।
একজন নেতার অনুসারী এবং অনুগত ছিলেন তিনি। মরহম পীর সাহেব রহ,, থেকে তিনি ইসলামী আন্দোলনের সাথে। যত দিন ছিলেন, একদম পুরোপুরি নেতার অনুগত হয়ে কাজ করেছেন। কখনো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যান নি। নেতাকে মেনেছেন পুরোপুরি।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এ তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন। যেটা তাঁর নেতারই নির্দেশ ছিল। সে নির্বাচনে দেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি আলোচনায় চলে আসেন।সংগঠন এবং তাঁর ইমেজ সৃষ্টি হয় দেশ ব্যাপি।
আজ এগার অক্টোবর। বারবার স্মরন হচ্ছে তাঁকে। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তাঁর স্মৃতি ভোলার নয়। তাঁর কর্মপদ্ধতিগুলো আজো অনুস্মরনীয়। তিনিতো আমাদের চেতনা। তিনি এমন চেতনা তৈরী করে দিয়েছেন, যা ইসলামী রাজনীতির সকলেই ফল ভোগ করছে।
আল্লাহ তায়ালার কাছে ফরিয়াদ, তাঁর মাকাম জান্নাতে আরো সুউচ্চ হোক। আমিন।
( শিক্ষক ও কলামিস্ট)

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment