সোনার মাদিনা
আমার প্রানের মাদিনা
সব ভুলিবো কিন্তু তোমায় ভুলতে পারিনা—
ভুলিনি, ভুলবো না , ভুলতে পারিনা।
শৈশব , কৈশোরে যখন এই গজলটি কর্ণকুহরে পৌছত ঠিক তখনই আকাঙ্ক্ষা হতো— হায়, কোন একদিন যদি কাছ থেকে রওজা শরীফ দেখতে পারতাম। কল্পনায় রওজা শরীফ এবং আমার মাঝে সামান্য ব্যবধান থাকতো। মনে হত, দূরত্বটা সামান্য বেশি নয়। এ আকাঙ্ক্ষাই রাত দিন কাটতো। প্রতি গভীর রাতে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতাম, হে পরওয়ারদিগার, হে জমিনও আসমানের রব, হে বিশ্বজগতের প্রতিপালক, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে একবার হলেও রওজা শরীফ দেখায়ো।
আল্লাহর কি রহমত । গত দুবছর আগে আমার ফ্যামিলি সহ রওজা শরীফ দেখার সুযোগ হয়েছে। পবিত্র রওজা মুবারকের কথা দুই-চার লাইনে লিখে প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর ও সামান্য কিছু উল্লেখ করছি।
দীর্ঘ আশা ও প্রতীক্ষার পরে যখন মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম তখন মনটা ছটফট করছে আর কতদূর মদিনা, গাড়ি চলছে তবুও মন ছটফট করছে চোখ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর কতদূর রওজায়ে আতহার।
দীর্ঘ সাত ঘন্টা সফর করার পর মদিনায় এসে পৌঁছলাম। মদিনায় একটি জায়গার নাম বাংলাপাড়া— সেখানে আমাদের বাসা ছিল। সেখানে পৌঁছে সর্বপ্রথম আমরা আমাদের বাসায় গিয়ে উঠলাম এবং কিছু সময় বিশ্রাম নিলাম।
বিশ্রাম শেষে বিকেলের দিকে আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত জায়গা রওজা শরীফের উদ্দেশ্যে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। এরপর আমরা মসজিদে নববীতে গিয়ে উঠলাম। তার চতুর্পাশ ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম আহ কি সুন্দর এক দৃশ্য মসজিদে নববী।
এরপর আমরা ধীরে ধীরে কম্পিত পায়ে রওজা শরীফের দিকে এগুতে থাকি। কিন্তু রওজা শরীফের ওখানে যাওয়ার জন্য একটা নিয়ম শৃঙ্খলা আছে সেটা হচ্ছে সিরিয়াল দিয়ে ওখানে যেতে হবে এবং ওখানে সর্বোচ্চ এক মিনিট থাকতে পারবে এবং রওজা শরীফের চারপাশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আছে যাতে ওখানে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। সৌদি পুলিশ খুব সতর্ক— কাউকে এক মিনিটের বেশি ওখানে থাকতে দেয় না।
যাইহোক আমরা সেই পথের পথিক হয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। ধীরে ধীরে আমরা রওজা মুবারকে পৌঁছলাম এবং সালাম পৌঁছালাম। মানুষ যে পরিবর্তনশীল সেখানে গিয়ে অবলোকন করলাম— প্রত্যেকটা মানুষ রওজা শরীফে গিয়ে পরিবর্তন হয়ে যায়। গুনা কাকে বলে সেটাও কেউ জানে না বা কোন মানুষের মাথায় আসবে বলে আমার মনে হয় না।
ওখানে যাওয়ার পর প্রত্যেকটা মানুষের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায় ঠিক আমারো অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল চোখ থেকে অজোড়া পানি পড়ছিল। তখন ভেবে খুব খুশি হচ্ছিলাম আল্লাহর নবী কে তো দেখি নেই কিন্তু আজ তার রওজামুবারক তো দেখলাম। সেদিন মন খুব প্রফুল্য ছিল।
নবীজির রওজা মোবারকে সালাম পৌঁছানোর পর রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশের দরজা খুঁজছিলাম, কিন্তু মসজিদ-ই-নববীতে দায়িত্বরত একজন আমাদের জানিয়ে দিলেন, ফজরের পর থেকে জোহর পর্যন্ত এটি নারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এখন পুরুষদের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।
পুরুষদের প্রবেশের সময় হলো জোহরের পর থেকে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। আর রাতে ১২টা থেকে ২টা ৩০ পর্যন্ত।
২
পবিত্র রওজা ও এর আশপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে । এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—পূর্ব দিকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুজরা। তার পশ্চিম দিকের দেয়ালের মধ্যখানে তাঁর মিহরাব এবং পশ্চিমে মিম্বার। এখানে বেশ কিছু পাথরের খুঁটি রয়েছে। যেসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাদিস ও ইতিহাসের কিতাবে বর্ণিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও স্মৃতি। যার প্রত্যেকটি আমরা ঘুরে ঘুরে দেখেছি।
এরপর প্রতিদিন কমপক্ষে একবার হলেও রওজা শরীফে এসে সালাম পৌঁছাতাম এবং তার আশেপাশের নামাজ পড়তাম এবং খুব ক্রন্দন করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতাম আল্লাহ যেন আরো অনেকবার মসজিদে নববী এবং রওজা শরীফে এসে সালাম পৌঁছাতে পারি সেই তৌফিক দান করিও ।
কয়েকদিন পর আস্তে আস্তে আমাদের দেশে ফেরার সময়ও ঘনিয়ে আসল কি করার? কিছুই করার নেই কারন আমরা দুনিয়ার কাছে মুহতাজ তাই তো ফিরতে হবে অন্যথায় সারাজীবন ওখানেই কাটিয়ে দিতাম।
৩
বিদায়ী সালামের পালা!
যখন বিদায়ি সালাম পৌঁছানোর জন্য রওজা শরীফ উপস্থিত হলাম তখন মনের অজান্তে চোখ থেকে অশ্রু বের হচ্ছে ইচ্ছে হয় চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু পারিনা বরং নিরবে কাঁদতে হয় মন তো চায় এখানে থেকে যাতে পারিনাতো থাকতে, মন চায় না রওজাকে বিদায় জানাতে তবুও পরিস্থিতির কারণে বিদায় জানাতে হয় ।
যাইহোক এরপর দোয়া কান্নাকাটি রোনাজারীর পর পবিত্র রওজায়ে আতহারে সালাম জানিয়ে ফিরে আসলাম। সেদিন রাতে দেশের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। আল্লাহ যেন প্রত্যেক মুসলিম নরনারীকে সেখানে গিয়ে সালাম পৌঁছানোর তৌফিক দান করেন। আমীন।
লেখক : শামছুল হক ইসা , ছাএ: মারকাযু শাইখিল ইসলাম আল মাদানী ঢাকা