Home আন্তর্জাতিকট্রাম্প কী করবেন, সেই অনিশ্চয়তা থেকে বাড়ছে তেলের দাম

ট্রাম্প কী করবেন, সেই অনিশ্চয়তা থেকে বাড়ছে তেলের দাম

by MD JUNAYED SHEIKH

জ্বালানি তেলছবি: রয়টার্স

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার জেরে গতকাল বুধবার সারা বিশ্বে তেলের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা গেছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ঘিরে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা—এ দুই বিষয় নিয়ে বিনিয়োগকারীরা গতকাল দিনভর ভেবেছেন।

স্বাভাবিকভাবেই গতকাল আবারও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। গতকাল দিন শেষে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৭৬ দশমিক ৭০ ডলার; আগের দিনের তুলনায় ২৫ সেন্ট বেশি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ দশমিক ১৪ ডলার; বেড়েছে ৩০ সেন্ট। যদিও দিনের শুরুতে দাম প্রায় ২ শতাংশ কমে গিয়েছিল,গত মঙ্গলবারের তুলনায় দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।

তবে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার কিছুটা কমেছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৬ সেন্ট কমে ৭৬ দশমিক ৫৪ ডলারে নেমে এসেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম অবশ্য ব্যারেলপ্রতি ৬ সেন্ট বেড়ে ৭৫ দশমিক ২০ ডলারে উঠেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ পরিস্থিতির মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। খামেনি ট্রাম্পের ‘শর্তহীন আত্মসমর্পণ’-এর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাঁর ‘ধৈর্যের সীমা ফুরিয়ে এসেছে’; যদিও পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।

হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি হয়তো করব, হয়তো করব না—আসলে কেউই জানে না আমি কী করব।’ ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইরান আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছে, এমনকি হোয়াইট হাউসে বৈঠকের প্রস্তাবও এসেছে; কিন্তু তাঁর মন্তব্য, ‘কথা বলার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে।’

হোয়াইট হাউসের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, এমন আশঙ্কাও আছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় অংশ নিতে পারে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে পুরো অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামো ঝুঁকিতে পড়বে। এ বিষয়ে রিটারবুশ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামে এক জ্বালানি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘পরিস্থিতির মোড় যেদিকেই যাক, ব্রেন্ট তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে; আবার পরিস্থিতি শান্ত হলে ৬৮ ডলারে নামতেও পারে।’

বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হলো হরমুজ প্রণালি। আইএনজি ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘সারা বিশ্বে সমুদ্রপথে পরিবাহিত মোট তেলের এক-তৃতীয়াংশ যায় হরমুজ প্রণালি দিয়ে। এখানে বড় কোনো বিঘ্ন ঘটলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

ইরান ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৩৩ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত জেনেভা থেকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সরাসরি জড়িয়ে পড়লে ইরান কড়া জবাব দেবে—এ বার্তা ওয়াশিংটনকে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অর্থনৈতিক দিক থেকেও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের অবস্থানের দিকে সবার দৃষ্টি। গতকাল ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার অপরিবর্তিত রাখলেও ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে তা কমানো হবে—এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বিবেচনায় নিয়ে সুদ কমানোর গতি কিছুটা শ্লথ করেছে তারা।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৫ সালের মধ্যে মোট শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ কমানো হলেও ২০২৬ ও ২০২৭ সালে মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা আছে। সুদহার কমলে সাধারণত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগে; তখন স্বাভাবিকভাবেই তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। গত দুই বছরে হামাস-ইসরায়েল সংঘাত, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার মতো বেশ কিছু ঘটনা থাকলেও শেষমেশ তেলের দাম বাড়েনি, বরং উল্টো কমেছে। এর মূল কারণ চাহিদা না থাকা।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) হিসাব অনুযায়ী, গত সপ্তাহে দেশটির অপরিশোধিত তেলের মজুত ১ কোটি ১৫ লাখ ব্যারেল কমে দাঁড়িয়েছে ৪২০ দশমিক ৯ মিলিয়ন বা ৪২ দশমিক শূন্য ৯ কোটি ব্যারেল, যেখানে বিশ্লেষকেরা ১৮ লাখ ব্যারেল ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

শেয়ার করুন:

Related Articles

Leave a Comment